Published : 18 Jun 2025, 09:32 PM
বরগুনায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ হয়ে ওঠছে। রোগীর সংখ্যা বাড়ছে প্রতিদিন, বাড়ছে মৃত্যুও।
বুধবার বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল থেকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ডেঙ্গু আক্রান্ত ২৩৩ জন। আর ছয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এই সময়ে ভর্তি হয়েছেন আরও ৮২ জন।
জেলায় জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হেয়েছে মোট এক হাজার ৯৮৫ জন। বরিশাল বিভাগের এরই মধ্যে বরগুনা জেলা ডেঙ্গুর জন্য ‘হটস্পট’ হয়ে উঠেছে।
এই অবস্থার মধ্যে রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, রোগীদের প্লাটিলেট পরীক্ষার ক্ষেত্রে অনেক সময় বেসরকারি ক্লিনিক থেকে ভুল তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এই ভুল তথ্যের কারণে তাদেরকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
৯৩ হাজার প্লাটিলেট নিয়ে ১৫ জুন হাসপাতালে ভর্তি হন বরগুনা সদর উপজেলার খেজুরতলা নামক এলাকার বাসিন্দা মো. সাগর। এক দিন পর হাসপাতালের বাইরের মেডিনেট নামের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তিনি প্লাটিলেট পরীক্ষা করেন।
ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দেওয়া রিপোর্টে সাগরের প্লাটিলেট মাত্র এক হাজার ২৬০ দেখানো হয়। পরে হাসপাতালের চিকিৎসকদের সন্দেহ হলে পুনরায় পরীক্ষা করতে বলা হয়। ওই দিনই তিন থেকে চার ঘণ্টার ব্যবধানে আরেকটি ক্লিনিকের পরীক্ষায় সাগরের প্লাটিলেট রিপোর্ট আসে ১ লাখ ৪৯ হাজার।
সাগরকে পরে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
সাগরের এক স্বজন বলেন, “আমরা এমনিতেই রোগী নিয়ে বিভিন্ন ধরনের হয়রানির মধ্যে থাকি। এরপর আবার ভুল রিপোর্টের কারণে এক পরীক্ষা বারবার করে বাড়তি টাকা খরচ করতে হয়।”
তবে এ ব্যাপারে মেডিনেট ক্লিনিকের মালিক নাজমুল হোসেন বললে, “আমার কি-বোর্ডে সমস্যা। আমি নিচের দিকে তাকিয়ে টাইপ করেছি। কম্পিউটারে যে দুইটা শূন্য উঠেনি তা আমি খেয়াল করিনি। এটা আমার ভুল হয়েছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে রোগীর সঙ্গে সমন্বয় করেছি।”
৬৭ হাজার প্লাটিলেট নিয়ে শুক্রবার খেজুরতলা এলাকার বাসিন্দা মরিয়ম নামের একজন হাসপাতালে ভর্তি হন। মরিয়মের সঙ্গেও ঘটেছে এমন ঘটনা।
পরদিন স্থানীয় অ্যাপোলো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করালে তার প্লাটিলেট পরিমাপ করা হয় ২ লাখ ৯৬ হাজার। তবে এক দিনের ব্যবধানে এমন রিপোর্ট দেখে সন্দেহ হয় চিকিৎসকের। পরে আরেকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করালে প্লাটিলেট দেখায় ৫৪ হাজার।
১১ জুন একই ক্লিনিক থেকে ১০ বছর বয়সী তানিয়া নামে ডেঙ্গু আক্রান্ত এক শিশুর পরীক্ষায়ও দেওয়া হয় ভুল রিপোর্ট। ক্লিনিকের দেওয়া রিপোর্টে তার প্লাটিলেট দেখায় ১৮ লাখ ৯৫ হাজার।
ভুক্তভোগী মরিয়ম বলেন, “পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে ডাক্তার আমাকে আবারও পরীক্ষা করতে বলেছেন। কী হয়েছে না হয়েছে আমি তা বলতে পারব না।”
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে লাকুরতলা এলাকার ১৩ বছর বয়সী মুসা। সঙ্গে তার মা তহমিনা বেগম (৪০) রয়েছেন।
তহমিনা বলছিলেন, “সোমবার প্রথমে অ্যাপোলো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করলে ছেলের ৪৭ হাজার প্লাটিলেট পাওয়া যায়। পরে একই সময়ে আরেকটি ক্লিনিকে পরীক্ষা করালে ৮৯ হাজার প্লাটিলেটের রিপোর্ট দেওয়া হয়। একেক ক্লিনিকের একেক ধরনের রিপোর্ট, কোন রিপোর্টটি সঠিক তা আমরা কিভাবে বুঝবো?”
ভুল রিপোর্ট প্রসঙ্গে অ্যাপোলো ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক সজীব বলেন, “কম্পিউটারে টাইপ করতে গিয়ে ভুলের কারণে রিপোর্ট ভুল হতে পারে। তবে এসব ভুল অনিচ্ছাকৃতভাবে হয়েছে।”
বরগুনা বেসরকারি ডায়াগনস্টিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সালেহ মাহমুদ সুমন শরীফ বলেন, “প্লাটিলেট পরীক্ষার এমন বিষয়টি আমাদের কাম্য নয়। তবে আমার কাছে আরো দুই-তিনটি অভিযোগ এসেছে। আমি এগুলোর বিষয়ে তাদেরকে অবহিত করব।”
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন আবু ফাত্তাহ বলেন, “এ বিষয়ে আমার কাছে আগে কোনো অভিযোগ আসেনি। তবে আপনাদের কাছ থেকে শুনলাম। আমি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে শিগগির ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অবৈধ ডায়গনস্টিক অ্যান্ড ক্লিনিক বন্ধ করে দেব।”