Published : 30 Nov 2024, 12:29 PM
কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের এবার দানবাক্স বেড়ে ১০টি হয়েছে, আর তাতে পাওয়া গেছে রেকর্ড ২৯ বস্তা টাকা। বরাবরের মতোই সঙ্গে মিলেছে বৈদেশিক মুদ্রা ও সোনার গয়নাও। এখন চলছে গণনার কাজ।
এবার ৩ মাস ১৩ দিনের ব্যবধানে শনিবার সকাল সাড়ে ৭টায় কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরীর উপস্থিতিতে দানবাক্সগুলো খোলা হয়।
পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শওকত হোসেন জানান, সাধারণত তিন থেকে চার মাসের মধ্যে মসজিদের দানবাক্সগুলি খোলা হয়। এবার নির্ধারিত সময়ের আগেই মসজিদের ৯টি দানবাক্স পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় আরেকটি বক্স যুক্ত করা হয়।
এর আগে চলতি বছরের ১৭ অগাস্ট মসজিদের ৯টি দানবাক্স থেকে ৭ কোটি ২২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬ টাকার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা ও সোনার-রুপার অলংকারাদি পাওয়া গেছিল।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান বলেন, শনিবার বক্স খোলার পর টাকা গণনার কাজে মাদ্রাসার ২৮৫ জন ছাত্রের সঙ্গে রুপালি ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ব্যাংকের ৭৫ জন স্টাফ, মসজিদ কমিটির ৪০জন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ১২জন ও পর্যাপ্ত সংখ্যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য অংশ নিচ্ছেন।
তিনি বলেন, গণনার পর সব টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হবে। প্রাপ্ত দানের টাকা থেকে পাগলা মসজিদ এবং এর অন্তর্ভুক্ত মাদ্রাসা, এতিমখানা ও গোরস্থানের ব্যয় নির্বাহ করা হয়।
এ ছাড়া দানের টাকায় জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানায় সহায়তার পাশাপাশি গরিব ছাত্র ও দুস্থদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।
পাগলা মসজিদ কিশোরগঞ্জের অন্যতম ঐতিহাসিক ধর্মীয় স্থাপনা। জেলা শহরের পশ্চিম প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে হারুয়া এলাকায় প্রায় চার একর জায়গা জুড়ে এ মসজিদ।
তিন তলা পাগলা মসজিদের ছাদে তিনটি বড় গম্বুজ এবং পাঁচ তলা ভবনের সমান একটি মিনার রয়েছে। সহস্রাধিক মানুষ সেখানে একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারেন, নারীদের জন্যও সেখানে নামাজের আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে।
এ মসজিদের নামকরণ নিয়ে দুই ধরনের জনশ্রুতি আছে।
একটি মত হল, প্রায় পাঁচশ বছর আগে বাংলার বারো ভূঁইয়ার অন্যতম ঈশা খাঁর উত্তর পুরুষ দেওয়ান জিলকদর খান ওই জায়গায় নদীর তীরে আধ্যাত্মিক সাধনায় মগ্ন হয়েছিলেন। সাধারণের কাছে তিনি ‘জিল কদর পাগলা’ নামে পরিচিতি পান। পরে ওই জায়গায় এ মসজিদ নির্মিত হয়। জিল কদর পাগলার নামানুসারেই মসজিদটি ‘পাগলা মসজিদ’ হিসেবে পরিচিতি পায়।
আরেকটি জনশ্রুতি হল, তৎকালীন কিশোরগঞ্জের হয়বতনগর জমিদার পরিবারের এক নিঃসন্তান বেগম ‘পাগলা বিবি’ নামে পরিচিতি পেয়েছিলেন। দেওয়ানবাড়ির সেই বেগম স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে নরসুন্দার তীরে একটি মসজিদ নির্মাণ করলে তা ‘পাগলা বিবির মসজিদ’ নামে পরিচিতি পায়।
এই মসজিদে মানত বা দান করলে মনোবাসনা পূরণ হয় বলে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে অনেকে বিশ্বাস করেন। সে কারণে অনেকেই নগদ টাকা, গয়না, এমনকি গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগিও দান করেন। দাতাদের মধ্যে অন্য ধর্মের মানুষও থাকেন।
নির্ধারিত সময় পর প্রশাসনের উপস্থিতিতে মসজিদের দানবাক্স খোলা হয়। প্রতিবার দানবাক্স খোলার পর বিপুল পরিমাণ অর্থ মেলে বলে সংবাদপত্রের শিরোনাম হয় পাগলা মসজিদ। এ মসজিদের আয় থেকে বিভিন্ন সেবামূলক খাতসহ জটিল রোগীদের চিকিৎসায় এর অর্থ ব্যয় করা হয়।
পুরানো খবর
পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার মিলল ৭ কোটি ২২ লাখ
কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদে মিলেছে ২৮ বস্তা টাকা, চলছে গণনা
পাগলা মসজিদ: ২৭ বস্তা টাকা গুনতে লাগল ১৪ ঘণ্টা, মিলল কত?
কাঙ্ক্ষিত মেয়ের জীবনসঙ্গী হতে পাগলা মসজিদের দানবাক্সে যুবকের চিঠি
কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদে এবার মিলেছে ২৭ বস্তা টাকা