Published : 25 Mar 2025, 08:23 PM
চৈত্রের শুরুতে কেবল মাত্র আম গাছে মুকুল আসা শুরু হয়েছে। নতুন মৌসুমের আমের জন্য ব্যস্ত সময় পার করছেন যশোরের চাষিরা। এরই মধ্যে রোজায় দেখা মিলছে পরিপক্ব বারোমাসি আম।
রোজাকে টার্গেট করে যশোরের শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়া ইউনিয়নের পিঁপড়াগাছী গ্রামের বারি-১১ ও কাটিমন জাতের ‘বারোমাসি’ আম চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন নুর ইসলাম সরদার।
অসময়ে বাজারে ওঠা এই আমের চাহিদাও ভালো থাকায় প্রতি কেজি আম বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায়।
সরেজমিনে পিপড়াগাছি গ্রামে নুর ইসলামে আম বাগানে গিয়ে দেখা যায়, ছোট ছোট সারিবদ্ধ গাছ। পাতার ফাঁকে ফাঁকে থোকায় থোকায় ঝুলছে পরিপক্ব আম। আমের ভারে যেন নুইয়ে পড়েছে গাছের ডাল।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত নতুন জাতের এই আম চাষ করে সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে বলে জানিয়েছেন নুর ইসলাম ।
তিনি বলেন, সাধারণত হিমসাগর, ফজলি, ল্যাংড়া, আম্রপালিসহ বিভিন্ন জাতের আমের দেশবিদেশে চাহিদা রয়েছে। এসব আম এক মৌসুমি হওয়ায় সারা বছর পাওয়া যায় না। তবে নতুন জাতের বারি-১১ আমটি সারা বছর পাওয়া যায়।
নূর ইসলাম আরও বলেন, “২৫ বছর ধরে নার্সারি কাজের সঙ্গে জড়িত। প্রথমে অন্যের নার্সারিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতাম। পরে নিজের বসতবাড়ির পাশে ফলজ নার্সারি গড়ে তুলি।
“নার্সারির পাশাপাশি আগে থেকেই আমের বাগান করার পরিকল্পনা ছিল। স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহযোগিতা ও পরামর্শে ২০১৮ সালে তিন বিঘা জমিতে কাটিমন জাতের আমবাগান গড়ে তুলি।”
পরের বছর আরও ছয় বিঘা জমি ১০ বছরের জন্য লিজ নিয়ে সেখানে নতুন জাতের বারি-১১ আমের চারা রোপণ করেন বলে জানান নুর ইসলাম।
তিনি বলেন, “গত বছর প্রায় চার লাখ টাকার আম বিক্রি করেছি। এতে তিন লাখ টাকার উপরে লাভ হয়েছে। প্রতি বিঘায় ৪০ থেকে ৪৫ মণ আম পাওয়া যায়।
“তিন বিঘা জমিতে বছরে খরচ হয় প্রায় লাখ টাকা। এ বছর এখন পর্যন্ত এক লাখ ২০ হাজার টাকার আম এবং এ জাতের আমের কলম (চারা) বিক্রি করেছি ৬০ হাজার টাকার মত।”
বছরে তিনবার আম পাওয়ার কথা জানিয়ে নুর ইসলাম বলেন, “জানুয়ারি থেকে আম ছিঁড়তে শুরু করেছি। বাগান থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে আম বিক্রি করছি। প্রতি বিঘায় বছরে এক লাখ ৬৮ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব।”
এদিকে স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানায়, নুর ইসলামের সফলতা দেখে এলাকার অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক এখন বারি-১১ জাতের আম চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। আম চাষিদের প্রয়োজনীয় কারিগরি সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
এ উপজেলায় হিমসাগর, ল্যাংড়া, ফজলি, গোপালভোগ, আম্রপালি ও মল্লিকা জাতের তিন হাজার ১৪৪টি আমের বাগান রয়েছে। চলতি মৌসুমে দুই হাজারেরও বেশি চাষি অন্তত ৯৫৯ হেক্টর জমিতে আম চাষ করেছেন।
এছাড়া, উপজেলায় ল্যাংড়া জাতের আম চাষ হয়েছে ১৩২ হেক্টর, হিমসাগর ৪২০ হেক্টর, রুপালি ১৯০ হেক্টর, বারি-৪- ১৫ হেক্টর, কাটিমন ২ হেক্টর এবং অন্যান্য জাতের আম ২০০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দীপক কুমার সাহা বলেন, বারি-৪, বারি-১১ এবং কাটিমন জাতের আমগাছ থেকে বছরে তিনবার ফলন পাওয়া যায়। অসময়ে আম হওয়ায় কৃষক দামও ভালো পাচ্ছেন; তাই অনেকেই এই জাতের আম চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
তিনি বলেন, বারি-১১ জাতের আমের স্বাদ ভালো। অসময়ে এই আম বাজারে আসায় চাষিরা ভালো দাম পাচ্ছেন। নতুন কেউ বাগান করার পরিকল্পনা করলে কৃষি বিভাগ থেকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। এ আম গাছ বাসার ছাদেও লাগানো যায়।