Published : 10 Jun 2025, 03:01 PM
ভারতের কলকাতায় খুন হওয়া সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের মালিকানাধীন বিলাসবহুল একটি গাড়ি কুষ্টিয়ার বহুতল ভবনের পার্কিং থেকে উদ্ধারের কথা জানিয়েছে পুলিশ।
সোমবার রাত সাড়ে ১২টার সময় কুষ্টিয়া পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনের বহুতল ভবন সাফিনা টাওয়ার থেকে গাড়িটি উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের ওসি মোশাররফ হোসেন।
গাড়ি থেকে উদ্ধার করা কাগজপত্র, সংসদ সদস্য ও সিআইপি স্টিকার থেকে জানা যায় গাড়িটি ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের নামে রেজিস্ট্রেশন করা।
টয়োটা ব্র্যান্ডের ল্যান্ডক্রুজার প্রাডো মডেলের কালো রঙয়ের গাড়িটির নম্বর ‘ঢাকা মেট্রো-ঘ ১২-৬০৬০’। গাড়িটি কুষ্টিয়ায় কিভাবে আসলো তা নিয়ে তদন্ত করছে পুলিশ।
আওয়ামী লীগ নেতা আনার ছিলেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য। গতবছর ১১ মে চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে তিনি নিখোঁজ হন।
তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাস কলকাতায় জিডি করার পর দুই দেশে তদন্ত শুরু হয়। পরে জানা যায়, এমপি আনারকে কলকাতার এক বাড়িতে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ওই ঘটনায় কলকাতায় মামলা হয়। আনারের মেয়ে ডরিনও ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা করেন।
সোমবার তার গাড়ি উদ্ধার নিয়ে স্থানীয়রা জানান, সোমবার সাফিনা টাওয়ারের গ্যারেজে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের গাড়ি রাখা আছে এমন খবরে ভিড় করে লোকজন। পরে ভবনের পার্কিং জোনে বিলাসবহুল গাড়িটি পেয়ে পুলিশে খবর দেন তারা।
ভবনটির কেয়ারটেকার আলমগীর হোসেন বলেন, “জেনুইন লিফ কোম্পানি নামে একটা সিগারেট কোম্পানি দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় বাসা ভাড়া নিয়েছে। সেখানে ফরেনাররা আসেন, থাকেন এবং খাওয়া-দাওয়া করেন। তারাই গাড়িটা রাখার ব্যবস্থা করেছেন।
“জেনুইন লিফ কোম্পানির জিএম বেলাল স্যার আর জাহিদ স্যার সিইও। এর বেশি আমরা কিছুই জানি না।”
গাড়িটির চালক শান্ত বলেন, “আমি জেনুইন লিফ কোম্পানির গাড়িচালক হিসেবে চাকরি করি। জিএম স্যার বেলাল ও সিইও জাহিদ স্যারের গাড়ি চালাই। তারা দুজন আমাকে চাবি দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিতে বলেন।
“গাড়ির মালিক কে তা আমি জানি না। বেলাল স্যার আর জাহিদ স্যার সব কিছু জানেন। তাদের হুকুমে গাড়ি স্টার্ট দিয়েছি। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।”
শান্ত এক সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগার আলীর গাড়ি চালক ছিলেন। তিনিই গাড়ি থেকে কাগজপত্র ও স্টিকার দেন পুলিশকে।
ওসি মোশাররফ হোসেন বলেন, “গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন ও মালিকানার কাগজপত্রে আনোয়ারুল আজীম আনারের নাম উল্লেখ রয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এদিকে সাফিনা টাওয়ারের ফ্ল্যাট মালিক ও ভাড়াটিয়ার চুক্তিপত্র অনুযায়ী এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ভবনের তিনটি ইউনিট ও তিনটি গাড়ির পার্কিং স্পেস ভাড়া নিয়েছেন মো. মুস্তাফিজুর রহমান।
তিনি মেহেরপুর জেলার গাংনী পৌরসভার বাঁশবাড়িয়া দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা এবং গাংনী পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি। মুস্তাফিজুর কুষ্টিয়ার দশ মাইল এলাকায় অবস্থিত ‘তারা টোবাকো’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারহোল্ডার।
বিষয়টি নিয়ে জানতে তার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। পরে মেসেজ দিয়েও তার সাড়া মেলেনি।
এ ছাড়া গাড়ি উদ্ধারের পর থেকেই বন্ধ আছে জেনুইন লিফ কোম্পানির জিএম বেলাল ও সিইও জাহিদের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর।