Published : 08 Jun 2025, 12:38 PM
চুয়াডাঙ্গায় আম বিক্রির জন্য নির্ধারিত কোনো হাট নেই। এ কারণে খুচরা ক্রেতাদের পুরো শহর ঘুরে যাচাই করে আম কিনতে হয়।
সাধারণ ক্রেতাদেরও আমার কেনার জন্য ছুটতে হয় বাগানে কিংবা শহর ঘুরে সড়কের পাশে আম বিক্রেতাকে খুঁজতে হয়। এতে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কেই দুর্ভোগে পড়তে হয়।
বাগান মালিকরা বলছেন, চুয়াডাঙ্গায় ব্যাপক আম উৎপাদন হলেও জেলায় আম বিক্রির নির্দিষ্ট কোনো হাট নেই। বাগান মালিকরা নিজেদের উদ্যোগে বাগান থেকে ট্রাকে করে আম ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠান। এতে ন্যায্য দাম পাওয়া থেকে তারা বঞ্চিত হন।
শহরের মাথাভাঙ্গা নদীর কাছে মাত্র ৮-১০টি আড়তে পাকা আম বিক্রি করা যায়। কিন্ত সাধারণ ক্রেতারা সেখানে গিয়ে আম কিনতে পারেন না। ওইসব আড়ত থেকে পাইকারি ছাড়া খুচরা আম বিক্রি করা হয় না।
চুয়াডাঙ্গা ফল ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস মহলদার বলেন, “আম পচনশীল পণ্য। আমরা ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামে আম পাঠিয়ে থাকি সেখানকার ব্যবসায়ীদের ওপর নির্ভর করে। তারা যে দামে বিক্রি করেন আমাদের তা মেনে নিতে হয়।
“চুয়াডাঙ্গায় আমের হাট থাকলে আমরা আগেই বাজারদর জানতে পারবো। দাম ভাল না থাকলে গাছ থেকে সেদিন আম নামাবো না। এতে আমাদের লোকসানের আশঙ্কা কম থাকবে। আমের হাট হলে আমাদের সব দিক দিয়েই সুবিধা হবে।”
চুয়াডাঙ্গার কয়েকজন খুচরা ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আম কিনতে হলে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোনো বাগানে যেতে হয়। তা না হলে শহরের শহীদ হাসান চত্বর, কলেজ রোড, থানার পাশে, কোর্ট মোড়, পুরাতন জেলখানার কাছে কিংবা নিউমার্কেট এলাকায় গিয়ে আম কিনতে হয়।
আমের দাম যাচাই করে কিনতে হলে ঘুরতে হবে পুরো শহর। নির্দিষ্ট কোনো স্থানে আম বিক্রি না হওয়ায় ক্রেতাদের এই দুর্ভোগে পড়তে হয়।
এসব দুর্ভোগ দূর করতে এবং ন্যায্য দাম প্রাপ্তির লক্ষ্যে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের দাবি, জেলা সদরের নির্দিষ্ট কোনো স্থানে মৌসুমে আমের হাট বসালে তা সবার জন্য সুবিধাজনক হবে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলুকদিয়া গ্রামের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শরীফ বলেন, “শহরের বড় বাজারে মাথাভাঙ্গা নদীর পুরাতন ব্রিজের কাছে কয়েকটি ফলের আড়ত আছে। সেখানে মূলত পাকা আম বিক্রি হয়। এক ক্যারেট (১২ কিংবা ২৪ কেজি) আম না নিলে তারা বিক্রি করেন না।
“ওখান থেকে পাইকারি আম ব্যবসায়ীরা আম কেনেন। সাধারণ ক্রেতাদের জন্য আমের হাট দরকার। হাটে দুই-তিন কেজি আমও বিক্রি হবে এমন ব্যবস্থা থাকা দরকার।”
চুয়াডাঙ্গা বড়বাজারের ব্যবসায়ী ইয়াকুব আলী বলেন, “চুয়াডাঙ্গায় ব্যাপক হারে হিমসাগর, ল্যাংড়া ও আম্রপালি আমের উৎপাদন হয়। ইতোমধ্যেই এসব আম বাজারে চলে এসেছে। ৫ জুন বাজারে এসেছে আম্রপালি আম।
“একজন ক্রেতাকে চুয়াডাঙ্গা থেকে আম কিনতে হলে শহরের চৌরাস্তায় গিয়ে আম দেখতে হবে। সেখানে পছন্দ না হলে কিংবা দাম বেশি মনে হলে যাচাই করার জন্য যেতে হবে সরকারি কলেজ এলাকায়। মাঝখানে দূরত্ব এক কিলোমিটার।”
তিনি বলছেন, “মোদ্দাকথা দেখে-শুনে আম কিনতে হলে ক্রেতাকে পুরো শহর ঘুরে দেখার এই দুর্ভোগ পোহাতেই হবে। তাছাড়া রাস্তার পাশে যারা আম বিক্রি করেন তাদের বেশ ঝুঁকি নিয়ে আম বিক্রি করতে হয়।
“রাস্তা সংলগ্ন হওয়ায় অনেক সময় দ্রুতগতির যানবাহন এসে ধাক্কা দেয়। রাস্তার পাশে আম সাজানো থাকায় পথচারিদেরও চলাচল করতে অসুবিধায় পড়তে হয়।”
চুয়াডাঙ্গা আমবাগান মালিক সমিতির সভাপতি কুদ্দুস মহলদার বলেন, “হাট করতে হলে জেলা প্রশাসন কিংবা কৃষি বিভাগকে উদ্যোগ নিতে হবে। বাগান মালিকদের হাট বসানোর অধিকার নেই। আমরা কৃষি বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের কাছে চুয়াডাঙ্গা শহর এলাকার কাছাকাছি একটি আমের হাট বসানোর জন্য কয়েক বছর ধরে দাবি জানিয়ে আসছি।”
তিনি বলেন, “একজন আম ব্যবসায়ী হিসেবে আমি স্বপ্ন দেখি-চুয়াডাঙ্গার কোনো এক মাঠে বসেছে আমের হাট। পুরো মাঠজুড়ে আম আর আম। মানুষ ঘুরে ঘুরে আম কিনছেন, ছবি তুলছেন। আমাদের এমন স্বপ্ন কবে বাস্তবায়ন হবে?”
চুয়াডাঙ্গা জেলায় মৌসুমে খেজুর গুড়ের হাট বসে। এছাড়া সারাবছর বসে কলার হাট। আমের হাট আরও আগেই জেলার কোনো নির্দিষ্ট স্থানে বসানোর উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজন ছিল বলে কৃষকরা মনে করেন।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলায় এ বছর ৩৪ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গুটি, হিমসাগর, ল্যাংড়া ও আম্রপালি আম এরইমধ্যে বাজারে এসেছে। ১৫ জুন ফজলি ও ২৮ জুন আশ্বিনা এবং বারিফোর আম সংগ্রহ করা হবে।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, “আমের হাটের জন্য কৃষকরা দাবি তুলেছেন; প্রয়োজনও রয়েছে। কৃষি বিভাগ এ ব্যাপারে উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ
করবে।”
হাটের প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, “এর জন্য একটি সুন্দর জায়গা দরকার। তবে সেটা এ বছর সম্ভব নয়।
“আগামী বছর যাতে চুয়াডাঙ্গায় আমের হাট বসানো যায় সে ব্যাপারে জেলা প্রশাসন থেকে উদ্যোগ নেওয়া হবে।”