Published : 13 May 2025, 05:49 PM
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পশ্চিম সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া চরে বিএসএফের ফেলে যাওয়া ৭৮ জনের মধ্যে ৭৫ জনকে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এ ছাড়া ‘পুশ ইন’ করাদের মধ্যে তিনজন জন্মসূত্রে ভারতীয় নাগরিক হওয়ায় সোমবার তাদের বিরুদ্ধে শ্যামনগর থানায় মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানান কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের অপারেশন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আবরার হাসান।
এর আগে শুক্রবার বেলা ৩টার দিকে ওই ৭৮ জনকে কোস্ট গার্ড সদস্যরা উদ্ধার করেন বলে জানান শ্যামনগর থানার ওসি হুমায়ুন কবির মোল্লা।
মঙ্গলবার দুপুরে শ্যামনগর থানা চত্বরে সংবাদ সম্মেলনে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আবরার হাসান বলেন, শুক্রবার ভোর রাতে মান্দারবাড়িয়া চরে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ৭৫ জন বাংলাদেশি মুসলিম এবং ৩ জন ভারতীয় মুসলিমকে ‘পুশ ইন’ করে। খবর পেয়ে ওই দিন বেলা ৩টার দিকে তাদের উদ্ধার করে কোস্ট গার্ড।
ভারত থেকে ফিরে আসাদের অধিকাংশই দীর্ঘদিন ধরে দেশটির গুজরাটে বসবাস করে আসছিলেন; তারা সেখানে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন বলে জানান তিনি।
ফিরে আসাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে আবরার হাসান বলেন, গত ২৬ এপ্রিল রাতে ভারতীয় প্রশাসন তাদের বাসা থেকে আটক করে। পরে ৯ মে ভোররাতে তাদের গোপনে সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া চরে রেখে যায় বিএসএফ।
সেখান থেকে তারা মান্দারবাড়িয়া বন বিভাগের কার্যালয়ে গিয়ে আশ্রয় নেন। খবর পেয়ে শনিবার কোস্ট গার্ড তাদের প্রয়োজনীয় খাবার ও ওষুধ সরবরাহ করে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রোববার রাতে শ্যামনগর থানায় হস্তান্তর করা হয়।
তিনি বলেন, ‘পুশ ইন’ হওয়া ৭৮ জনের মধ্যে ৬৭ জনের বাড়ি নড়াইল জেলার বিভিন্ন গ্রামে। এ ছাড়া খুলনার ছয়জন, যশোরের দুইজন এবং সাতক্ষীরা, ঢাকা ও বরিশালের একজন করে রয়েছে। এদের মধ্যে গুজরাটের আহমেদাবাদের বিভিন্ন বস্তিতে থাকতেন ৭০ জন এবং সুরাটে থাকতেন আটজন।
জন্মসূত্রে ভারতীয় তিনজন হলেন- খুলনার বটিয়াঘাটা থানার ফুলবাড়িয়া গ্রামের খালিদ শেখের ছেলে আব্দুর রহমান (২০), নড়াইলের কালিয়া থানার বিষ্ণুপুর গ্রামের প্রয়াত মুন্না সাহার ছেলে মো. হাসান শাহ (২৪) এবং একই গ্রামের সোহেল শেখের ছেলে সাইফুল শেখ (১৯)।
জন্মসূত্রে তারা ভারতের গুজরাটের নেহেরীনগর, জোপারপচ্চি এলাকার বাসিন্দা। তবে তাদের কাছে ভারতের কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. রনী খাতুন বলেন, “বিএসএফ ও ভারতীয় কোস্ট গার্ড ৭৮ বাংলাভাষী নাগরিককে চোখ বেঁধে বঙ্গপোসাগরের তীরবর্তী মান্দারবাড়িয়া এলাকা একটি চরে ছেড়ে দিয়ে যায়। সেখান থেকে তাদের উদ্ধারের পর কোস্ট গার্ডের কাছ থেকে আমরা গ্রহণ করি।
“জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সোমবার সকালে তাদেরকে আত্মীয় স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করার কথা ছিল। কিন্তু কাগজপত্র সঠিকভাবে প্রস্তুত না হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। রাতে পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন মিলে তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেওয়ার পাশাপাশি থাকার ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।”
তিনি বলেন, “৭৮ জনের মধ্যে ৭৫ জন জন্মসূত্রে বাংলাদেশি নাগরিক হওয়ায় মঙ্গলবার তাদেরকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ভারতীয় হিসেবে বাকি তিনজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়েছে। তাদের কাগজপত্র সঠিক আছে কি-না সে বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।”
তবে ওই তিনজন পৈত্রিক সূত্রে বাংলাদেশি বলে জানান ইউএনও রনী খাতুন।
সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ মনিরুল ইসলাম বলেন, উদ্ধার হওয়া ৭৮ জনের মধ্যে তিনজন জন্মসূত্রে ভারতীয় নাগরিক দাবি করায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কালিগঞ্জ-সার্কেল) মিথুন সরকার এবং শ্যামনগর থানার ওসি হুমায়ুন কবির মোল্লা উপস্থিত ছিলেন।
পরে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও কোস্ট গার্ডের উপস্থিতিতে শ্যামনগর থানা থেকে তাদেরকে স্বজনদের হস্তান্তর করা হয়।