Published : 18 Jun 2025, 12:44 PM
বরিশাল নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে রোববার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার বাসিন্দা এক এসএসসি পরীক্ষার্থী। একই দিন সন্ধ্যায় ঢাকা নেওয়ার পথে মারা যায় বরগুনার বাসিন্দা এক শিশু।
কিন্তু সেদিন বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া তথ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোনো উল্লেখ নেই। একই অবস্থা দেখা যায় আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যার চিত্রেও।
এভাবেই ডেঙ্গু নিয়ে বরিশালের স্বাস্থ্য দপ্তরের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে বাস্তবের অনেক গড়মিল পাওয়া যাচ্ছে। স্বাস্থ্য দপ্তরের দেওয়া তথ্যের চেয়ে বাস্তবে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বিভাগে রয়েছে বলে ধারণা অনেকের।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যার পূর্ণাঙ্গ তথ্য না থাকার সত্যতা স্বীকার করেছেন বরগুনার জেলা সিভিল সার্জন মো. আবুল ফাত্তাহ।
তিনি বলেন, “সরকারি হাসপাতালে যত রোগী ভর্তি হয়েছেন, তার চেয়ে অন্তত দুই থেকে তিনগুণ রোগী বাইরের হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সরকারি হাসপাতালের চিত্রই ভয়াবহ। তবে সঠিক চিত্র নিরুপণের চেয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করাই জরুরি।”
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রোববার মারা যাওয়া এসএসসি পরীক্ষার্থী চিকিৎসাধীন ছিলেন বরিশাল নগরীর আরিফ মেমোরিয়াল হাসপাতালে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক নজরুল ইসলাম বলেন, তার হাসপাতালে নিয়মিত ডেঙ্গু রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসে। তাদের মধ্যে একজন রোববার মারা গেছেন। এ তথ্য সিভিল সার্জনের কাছে জানানোর নিয়ম রয়েছে। তবে রোববার তিনি বরিশাল না থাকায় হয়তো দেওয়া হয়নি।
তার হাসপাতালে এখন পর্যন্ত কতজন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছে সেই তথ্যও জানাতে পারেননি তিনি।
এদিকে মঙ্গলবার পর্যন্ত বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের দেওয়া তথ্যে বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গু জ্বরে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের দুইটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছেন তিন হাজার ৭৫ জন। এরমধ্যে দুই হাজার ৬৬০ জন সুস্থ হয়েছেন। চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৪০৭ জন।
সবচেয়ে বেশি রোগী রয়েছে বরগুনা জেলায় ২৩৩ জন। এছাড়াও বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৯১ জন, পটুয়াখালী জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ৩২ জন, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০ জন, বরিশালে ১৭ জন, ভোলা ও পিরোজপুরে ৫ জন করে এবং ঝালকাঠিতে চারজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বরিশাল বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে বরগুনা জেলায়। গত ১ জানুয়ারি থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত এ জেলায় আক্রান্ত হয়েছে এক হাজার ৯৮৫ জন। সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৭৫২ জন।
সরকারি হিসেব অনুযায়ী জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ৫ জন। তবে বাস্তবে এ সংখ্যা ১৩ জন বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।
বরগুনার বাসিন্দা পরিবেশ কর্মী আরিফুর রহমান বলেন, “বরগুনাকে ডেঙ্গুর হটস্পট হিসেবে ঘোষণা হয়েছে। পৌর এলাকাসহ সকল উপজেলার সিংহভাগ ঘরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী রয়েছে।
“তবে হাসপাতালে এসে চিকিৎসা না পাওয়ায় অনেকে আসে না। যাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো তারা ঢাকাসহ বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হয়।”
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, “এটা স্বীকার করতে কোনো দ্বিধা নেই বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার তথ্য আমাদের কাছে নেই। প্রত্যেক জেলার সিভিল সার্জনদের মাধ্যমে বেসরকারি হাসপাতালের তথ্য চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা তথ্য দেয় না।”
এ বিষয়ে সিভিল সার্জনদের পুনরায় নির্দেশনা দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।