Published : 19 Jun 2025, 06:44 PM
চেক প্রতারণার অভিযোগের মামলায় বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক ও প্রকাশকসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন বলে জানিয়েছেন বাদী পক্ষের আইনজীবী এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম।
দৈনিক কালের কণ্ঠের সিলেটের সাবেক ব্যুরো প্রধান আহমেদ নূরের দায়ের করা মামলার সমন জারির পরও আদালতে হাজির না হওয়ায় আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়া ব্যক্তিরা হলেন- বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, তার ছেলে গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীর, কালের কণ্ঠের প্রকাশক ময়নাল হোসেন চৌধুরী, বর্তমান সম্পাদক হাসান হাফিজ, চেক স্বাক্ষরকারী সাবেক সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলী ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাবেক সম্পাদক নঈম নিজাম।
‘নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্ট অ্যাক্টের’ ১৩৮/১৪০ ও অন্যান্য ধারা অনুযায়ী মামলাটি গত বছর ৫ ডিসেম্বর করা হয়েছিল। আদালত সেদিন ছয় আসামিকে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করেছিলেন।
আইনজীবী এমাদ উল্লাহ বলেন, মামলার বাদী আহমেদ নূর সিলেটের একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক। সিলেট প্রেস ক্লাবের সভাপতি ছিলেন। তাকে পারিশ্রমিকের টাকার চেক দিয়েও পরিশোধ না করা প্রতারণার শামিল এবং দেশের সংবাদমাধ্যমের জন্য সম্মানজনক নয়।
বাদী আহমেদ নূর বলেন, “যে প্রতিষ্ঠানটিতে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কাজ করেছি তার বিরুদ্ধে ন্যায্য পাওনা আদায়ের জন্য মামলা করতে হয়েছে, এটা দুঃখজনক। রাজধানীর বাইরে সাংবাদিকরা কীভাবে শোষণ এবং প্রতারণার শিকার হচ্ছেন এটি তার একটি বড় প্রমাণ। কাউকে না কাউকে তো প্রতিবাদ করতে হবে, এগিয়ে আসতে হবে। আমি সেটিই করেছি এবং আইনি লড়াই অব্যাহত রাখব। আমি আশা করব, আমার মতো যারা এমন পরিস্থিতির শিকার তারাও এগিয়ে আসবেন এবং ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই চালিয়ে যাবেন।’’
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, বাদী দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাড়ে ১২ বছর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকের পদমর্যাদায় সিলেট কার্যালয়ের ব্যুরো প্রধান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু সংবাদপত্র ওয়েজ বোর্ড অনুযায়ী দীর্ঘদিনের ’সার্ভিস বেনিফিট’ পরিশোধ করতে কর্তৃপক্ষ গড়িমসি করেন। এক পর্যায়ে বেনিফিটের টাকা পরিশোধে সম্মত হন। কিছু টাকা পরিশোধ করেন।
বসুন্ধরার চেয়ারম্যান-এমডির বিরুদ্ধে সিলেটে সাংবাদিকের মামলা
এ ছাড়া প্রতি মাসে একটি চেক নগদায়নের তারিখ দিয়ে গত জানুয়ারি মাসে ১০টি চেক প্রদান করেন। কিন্তু দুটি চেক অনার হলেও আটটি চেক ডিজঅনার হয়। যার অর্থের পরিমাণ ছয় লাখ এক হাজার ৮২৪ টাকা।
বাদী আইনজীবীর মাধ্যমে উকিল নোটিস পাঠালে আসামিরা এর জবাবে শিগগিরই টাকা পরিশোধের বিষয়টি তাদের আইনজীবীর মাধ্যমে জানান। কিন্তু তারপরও টাকা পরিশোধের কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় গত বছর ৫ ডিসেম্বর একটি চেক এবং ৩১ ডিসেম্বর অপর সাতটি চেক প্রতারণার অভিযোগে পৃথক দুটো মামলা করা হয়।
এরমধ্যে বৃহস্পতিবার ৫ ডিসেম্বরের চেক প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আদেশ দিয়েছে আদালত।
এর আগে মামলার বিষয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের প্রেস অ্যান্ড মিডিয়া উপদেষ্টা মোহাম্মদ আবু তৈয়ব ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “আমাদের সংবাদমাধ্যম থেকে যারা বিভিন্ন সময় চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন বা চাকরিচ্যুত হয়েছেন তাদের পাওনা পরিশোধের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। আমরা কয়েকটি কিস্তির মাধ্যমে তাদের পাওনা পরিশোধের উদ্যোগ নিয়েছিলাম কিন্তু অর্থনৈতিক মন্দার কারণে তা নানা সময়ে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ মন্দার সময় বিজ্ঞাপন পাওয়া যায়নি। ভর্তুকি দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো চালাতে হয়েছে। মামলার বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক। তবে তাদের পাওনা পরিশোধের প্রক্রিয়াটি চলমান আছে।”
তিনি বলেন, “যাদের পাওনা ছিল তাদের টাকা ১০টি কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধের উদ্যোগ নিয়েছি। দুটি কিস্তি পরিশোধ হয়েছে। তৃতীয় কিস্তির টাকা আমরা সংগ্রহ করছি। সেটি খুব দ্রুত ছাড় হবে বলে আশা করি।
“যাদের চেক এক্সপায়ার হয়ে গেছে, তাদের বলা হয়েছে, অ্যাকাউন্টসে যোগাযোগ করে সময় বাড়িয়ে নিতে। অনেকে তা করেছেনও। যারা অসুস্থ ছিলেন বা যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের পাওনা আমরা এরই মধ্যে পরিশোধ করে দিয়েছি। যিনি মামলাটি করেছেন তিনিও অ্যাকাউন্টসে যোগাযোগ করে সময় বাড়িয়ে নিতে পারেন।”