Published : 30 May 2025, 08:07 PM
গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় পটুয়াখালী জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে সাময়িক সময়ের জন্য লাখো মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় কাটিয়েছেন। হাজার খানেকের মত ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
তবে বেশি ক্ষয়ক্ষতি ও দুর্ভোগের মুখে পড়েছেন জেলার চরাঞ্চলের মানুষেরা। বিশেষত মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন রাঙ্গাবালী উপজেলায় অন্তত ছয়টি চরের বেড়িবাঁধের বাইরে ও ভেতরে থাকা মানুষ বেশি ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন।
এ ছাড়া বিভিন্ন পয়েন্টে বেড়িবাঁধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড-পাউবো। সাগরের পানির তোড়ে ভেঙে গেছে কুয়াকাটা সাগরপাড় রক্ষায় চার কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন মেরিন ড্রাইভ সড়ক।
কুয়াকাটা মেরিন ড্রাইভ ভেঙে যাওয়া প্রসঙ্গে কুয়াকাটা পৌরসভার প্রশাসক ইয়াসীন সাদিক বলেন, “এ ঘটনায় কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি করেছেন।”
নিম্নচাপের প্রভাবে গত ৪৮ ঘণ্টায় জেলায় ১৮৬.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পটুয়াখালী আবহাওয়া কার্যালয়ের উচ্চ পর্যবেক্ষক মাহবুবা সূখী।
টানা বৃষ্টি, ঝড়ো বাতাস ও নদীর পানির তোড়ে গলাচিপা, কলাপাড়া, দশমিনা, বাউফল উপজেলার অর্ধশত চর এলাকার নিম্নাঞ্চল উচ্চ জোয়ারে দফায় দফায় প্লাবিত হয়েছে।
জেলা দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা শাখার তথ্য অনুযায়ী, আটটি উপজেলায় সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নয়টি বসতঘর এবং আশিংক ক্ষতি হয়েছে এক হাজার ২৭৭টি ঘরবাড়ির। এতে মোট এক লাখ ১৯ হাজার ১৩০ মানুষ ক্ষতির শিকার হয়েছেন।
এ ছাড়া প্রতিটি উপজেলায় ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রস্তুতের কাজ চলছে বলে জানান জেলা দুর্যোগ ও ত্রাণ কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, দুর্গতদের জন্য বৃহস্পতিবার আট উপজেলায় তাৎক্ষণিকভাবে শুকনা খাবার, তিন লাখ টাকা, ঢেউটিন বিতরণের জন্য নয় লাখ করে টাকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মোট ৮৪ টন চাল সরবরাহ করা হয়েছে।
পাউবো পটুয়াখালী জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন বলেন, “পানির চাপে কিছু এলাকার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে তেমন বেশি কোথাও ক্ষতি হয়নি।”
তিনি জানান, গলাচিপার পানপট্টি ইউনিয়নের তেতুলবাড়ীয় এলাকার একটি পয়েন্টে ১২০ মিটার বেড়িবাঁধ বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খুব দ্রুততার সঙ্গেই ওই জায়গাটি মেরামত করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
এ ছাড়া যেসব জায়গায় বেড়িবাঁধ কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার তালিকা প্রস্তুতের কাজ চলছে বলেও জানান নির্বাহী প্রকৌশলী।
ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা অজিত দেবনাথ বলেন, উপজেলার চর মোন্তাজ, চালিতাবুনিয়া, চর নজির, চর আন্ডাসহ ছয়টি চরে দফায় দফায় প্লাবিত হয়ে অন্তত ১১ হাজার পরিবারের ৩৩ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে ক্ষতি শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে কিছু পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে পানির চাপ কমে গেছে। এতে ৬০টি বসতঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গলাচিপা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জাফর রানা বলেন, উপজেলার তিনটি পয়েন্টে পানি ঢুকে ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিন থেকে চার ঘণ্টা এসব এলাকার মানুষ পানিবন্দি ছিল। পরে ভাটার টানে পানি নেমে যাওয়ায় ক্ষতি কম হয়েছে। তারপরেও গাছপালা উপড়ে চারটি বসতঘর সম্পূর্ণ এবং ৫২টি বসতঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানতে কুয়াকাটা পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মো. রিয়াজুল ইসলামকে বার বার মোবাইলে কল করলেও তারা ধরেননি।