Published : 15 Jun 2025, 03:56 PM
বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে পরিত্যক্ত সরকারি ভবনে চামড়ার আড়ত বানিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক দল ও আওয়ামী লীগ নেতা। যার কারণে বিকট দুর্গন্ধে দুর্ভোগে পড়েছেন আশপাশের বাসিন্দারা। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে রয়েছেন পাশের মসজিদে নামাজ পড়তে আসারা।
মেহেন্দিগঞ্জ পৌরসভার মুক্তিযোদ্ধা পার্কের (বালুর মাঠ) পাশে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ট্রেনিং সেন্টারের ভবনে এ আড়ত করেছেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহিন হাওলাদার এবং আওয়ামী লীগের পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি মো. দলিল উদ্দিন দুলাল রাঢ়ী।
স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ বাসিন্দাদের অভিযোগ, খোলা ওই ভবনে চামড়ায় লবণ দিয়ে স্তূপ আকার করে রাখা হয়েছে। চামড়ায় লবণ দেওয়ার আগে প্রাথমিকভাবে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজও এ ভবনে করা হয়েছে।
ফলে চামড়া ও ফেলে রাখা উচ্ছিষ্ট, রক্তসহ বিভিন্ন বর্জ্যে থেকে বিকট দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। যার কারণে আশপাশের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন।
প্রভাবশালী দুই নেতার কারণে স্থানীয়দের মধ্যে কেউ নাম প্রকাশ বক্তব্য দিতে চাননি।
স্থানীয় এক বাসিন্দা (৪৮) বলেন, ওই ভবনের পূর্ব দিকে মসজিদ ও ফায়ার সার্ভিসের অফিস। দক্ষিণ দিকে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি স্তম্ভ ও জেলা পরিষদ মার্কেট। ভবনের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালের অপর তীরে মানুষের বাড়িঘর ও গার্লস স্কুল রয়েছে। এক মিনিট দূরত্বে রয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
তিনি আরও বলেন, “বাতাস বইলে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। দুর্গন্ধে কোনো মানুষ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি স্তম্ভে যায় না। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি আছেন পাশের মসজিদে নামাজ পড়তে আসা ব্যক্তিরা। দুগর্ন্ধে তারা বাথরুমে যাওয়াসহ ঠিকমতো ওজু করতে পারেন না।”
স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আমরা প্রতিনিয়িত ভোগান্তির মধ্যে আছি। তার উপর দুর্গন্ধের কারণে ক্রেতাও কমে গেছে। কিন্তু কী আর বলব।”
স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতা বলেন, “আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে মিলে লাভের জন্য এমন জনদুর্ভোগের কারণে মানুষের মধ্যে দল সম্পর্কে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে। বিষয়টি দলের ঊর্ধ্বতন নেতাদের জানানো হয়েছে।”
এ বিষয়ে চামড়া ব্যবসায়ী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহিন হাওলাদার বলেন, “গত ২০-২২ বছর ধরে ভবনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। সেখানে বখাটেরা মাদক সেবন করে। প্রশাসন থেকে ভবনটি ভেঙে ফেলতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
“সরকারি সম্পত্তি পড়ে থাকায় সেখানে চামড়া এনে লবণ দেওয়া হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে সরিয়ে ফেলা হবে।”
তবে মজুদ রাখা চামড়ায় তেমন কোনো দুর্গন্ধ নেই বলে দাবি করেন তিনি।
আওয়ামী লীগ নেতা দলিল উদ্দিন দুলাল রাঢ়ী বলেন, “স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিত্যক্ত ওই ভবনে আগে বখাটেরা মাদক সেবন করতো। পায়খানা-প্রসাব করে নোংরা করে রেখেছিল। আমি ও শাহীন সেই স্থান পরিষ্কার করে চামড়া এনে রেখেছি।”
তিনি জানান, ওইখানে তাদের এক হাজারের মতো চামড়া মজুদ করা হয়েছে। দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে সরিয়ে ফেলা হবে।
তিনি আরও বলেন, “দুর্গন্ধ যেন ছড়িয়ে না পড়ে, সেই জন্য প্রতিদিন ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দেই। শনিবার মাগরিবের নামাজ মসজিদে আদায় করেছেন, কিন্তু কোনো গন্ধ পাননি।”
এ বিষয়ে বরিশাল-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি নেতা এম মেজবাহউদ্দিন ফরহাদ বলেন, “হাসপাতালের পাশে এভাবে চামড়া মজুদ করা ঠিক হয়নি। আমি বিষয়টি জানি না। এখনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।”
সাবেক এই সংসদ সদস্যের অভিযোগ মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতারা মিলেমিশে যা খুশি তাই করছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. ইমরান বলেন, ট্রেনিং ভবনের জমির মালিকানা নিয়ে আদালতে মামলা চলছে বলে স্থানীয়দের কাছ থেকে শুনেছি। কোনো কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। ভূমি অফিসও কোনো সহায়তা করতে পারেনি। তাই ভবনে কী রাখা হয়েছে, সেই বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রিয়াজুর রহমান বলেন, “এভাবে কেউ চামড়া মজুদ করতে পারে না। এতে প্রচুর দুর্গন্ধ বের হয়। কেউ যদি রেখে থাকে, খোঁজ নিয়ে সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করব।”