Published : 18 Jun 2023, 03:14 PM
কুমিল্লার ময়নামতি স্টেশনে আন্তঃনগর বা মেইল ট্রেনের যাত্রাবিরতি না থাকলেও লোকাল ট্রেনগুলো থামত। তবে গত মে মাস থেকে থামতে পারছে না একটিও।
এই থামতে না পারার কারণ হলো, সেখানে রেলপথের সিগন্যাল পয়েন্ট মেশিনের ১০টি মোটরই চুরি হয়ে গেছে। একটি লাইনের সঙ্গে অন্য লাইনের সংযোগ ও বিচ্ছিন্নকরণে এই মেশিন ব্যবহার হয়। আর মোটর চুরি হয়ে যাওয়ায় কোনো ট্রেনকে এই স্টেশনে দাঁড় করানো সম্ভব হচ্ছে না।
ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে কুমিল্লার লাকসাম থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার মধ্যে ৫টি স্টেশনে থাকা ৬৭টি পয়েন্ট মেশিনের মধ্যে ২৫টির মোটরও চুরি হয়ে গেছে।
মোটরগুলো চুরি হয়ে যাওয়ায় কী সমস্যা হচ্ছে, তা ব্যাখ্যা করে এক কর্মকর্তা বলেন, কোনো ট্রেনকে ক্রসিং দেওয়ার সময় অন্য একটি ট্রেনকে লুপ লাইন ব্যবহার করে পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। মোটরগুলো চুরি হয়ে যাওয়ার কারণে এই স্টেশনগুলোতে সেটি করা যাচ্ছে না।
ফলে ট্রেনগুলোকে দূরের কোনো স্টেশনে দাঁড় করিয়ে রেখে ক্রসিং দিতে হচ্ছে। এতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে সেই ট্রেনকে।
সবচেয়ে বেশি মোটর চুরির ঘটনা ঘটেছে জেলার লালমাই ও ময়নামতি স্টেশনে। লালমাইতে ১২টির মধ্যে আটটি এবং ময়নামতিতে ১০টির মধ্যে ১০টিই চুরি হয়ে গেছে। ফলে স্টেশনগুলোতে লুপ লাইনে ট্রেন চলাচল এবং অতিগুরুত্বপূর্ণ ও দ্রুতগতির ট্রেন পাস ব্যাহত হচ্ছে।
লাকসাম-আখাউড়া ‘ডাবল রেললাইন প্রকল্পের’ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় রেলওয়ে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। তবে একটি মোটরও উদ্ধার করতে পারেনি তারা।
লাকসাম-আখাউড়া ডাবল রেললাইন প্রকল্পের আওতায় এসব স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির মেশিন স্থাপন করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের আওতায় সিগন্যালিংকে আধুনিকায়ন করতে প্রতিটি পয়েন্ট মেশিন কেনা হয় ১৫ লাখ টাকা করে।
রেল কর্মীরা জানাচ্ছেন, গত মে মাস থেকেই এই চুরির ঘটনাগুলো ঘটছে।
রেলওয়ে কুমিল্লার ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সংকেত) আহমদ আলী জানান, মোটরগুলো চুরির কারণে লোকাল ট্রেনের পাশাপাশি আন্তঃনগর ট্রেনগুলোকেও লুপ লাইন ব্যবহারে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
কুমিল্লায় কর্মরত লাকসাম-আখাউড়া ডাবল রেললাইন প্রকল্পের মিড লেভেল অপারেশনস অফ সেফটি অফিসার গোলাম মোস্তফা বলেন, “চুরি হওয়া মোটর উদ্ধার করতে লাকসাম জিআরপি থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু এখনো একটি মোটরও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।”
এই সিগন্যাল পয়েন্ট মেশিনগুলো স্টেশনের কাছাকাছি বসানো থাকে। ফলে স্টেশনের কর্মীদের পক্ষে এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব বলে মনে করেন সচেতন নাগরিক কমিটি-সনাক এর কুমিল্লা শাখার সাবেক সভাপতি বদরুল হুদা জেনু।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “মোটরগুলো যে চুরি হচ্ছে, এ ঘটনা থেকেই বোঝা যায় রেলওয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতটা দুর্বল। কারণ, দুর্গম কোনো এলাকা থেকে চুরির ঘটনা ঘটেনি। এসব মোটর চুরি হয়েছে স্টেশন থেকে। এখনই বিষয়টি নিয়ে কঠোর না হলে ট্রেন চলাচলে ঝুঁকি আরো বাড়বে।”
লাকসাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুদ আলম বলেন, “রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ মোটর চুরির ঘটনার অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে রেলওয়ে পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন। চুরি হওয়া মোটর উদ্ধার এবং চোরদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।”