ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ
Published : 10 Jul 2024, 08:58 AM
খেলোয়াড়ী জীবনে নেদারল্যান্ডসের বর্তমান কোচ রোনাল্ড কুমানের ইংল্যান্ডকে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে হারানোর গল্প আছে; এমনকি ইউরোপ সেরার ট্রফি উঁচিয়ে ধরার গর্বও আছে তার। ইংলিশদের বর্তমান কোচ গ্যারেথ সাউথগেটেরও অভিজ্ঞতা আছে খেলোয়াড় হিসেবে এই আঙিনায় ডাচদের হারানোর, কিন্তু প্রাপ্তির পূর্ণতায় ভেসে যাওয়া হয়নি তার। এবার ডাগআউটে মুখোমুখি হওয়ার অপেক্ষায় তারা; স্বাভাবিকভাবে অতীত স্মৃতি কিছুটা আলোড়ন তুলবে দুজনের মনে।
ইউরোর দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে বুধবার ডর্টমুন্ডে মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডস। ডাগআউটে সাউথগেট ও কুমান-দুজনে ব্যস্ত সময় কাটাবেন কৌশল খাটিয়ে একে অন্যকে ঘায়েল করে ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন পূরণের।
ইউরোতে সফল খেলোয়াড় কুমান। ১৯৮৮ সালের ইউরো জয়ী ডাচ দলের রক্ষণভাগের অতন্দ্র প্রহরী ছিলেন তিনি। সেই দলটি ঠাসা ছিল ফ্রাঙ্ক রাইকার্ড, রুদ খুলিত, মার্কো ফন বাস্তেন এবং কুমানের বড় ভাই এরউইনের মতো তারকায়। এরউইন বর্তমানে কুমানের সহাকারী ম্যানেজারও।
সেবার গ্রুপ পর্বে দেখা হয়েছিল দুই দলের। ওই ম্যাচে উভয় পক্ষই ছিল টানাপোড়েনের মধ্যে। যেহেতু নিজেদের প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ড হেরেছিল আয়ারল্যান্ডের কাছে, ডাচদের ধরাশায়ী করেছিল সে সময়কার সৌভিয়েত ইউনিয়ন।
ডুসেলডর্ফের সেই ম্যাচে ‘দূর্ভাগা’ ছিল ইংল্যান্ড; প্রথমার্ধেই তাদের দুটি প্রচেষ্টা ফিরে আসে পোস্ট কাঁপিয়ে। ফন বাস্তেন ডাচদের এগিয়ে নেওয়ার পর ব্রায়ান রবসন সমতার স্বস্তি এনে দিয়েছিলেন ইংলিশদের, কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ফন বাস্তেন পরে জোড়া গোলে পূরণ করেন হ্যাটট্রিক; ৩-১ গোলে জিতে সেমি-ফাইনালে উঠে যায় নেদারল্যান্ডস।
সেমি-ফাইনালে স্বাগতিক পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে পেনাল্টি থেকে লক্ষ্যভেদ করেছিলেন কুমান; নেদারল্যান্ডসও জিতেছিল ২-১ গোলে। ওই ম্যাচের আলোচিত কাণ্ড বা স্মরণীয় ঘটনা ছিল সম্ভবত পশ্চিম জার্মানির ওলাফ হোনের সাথে জার্সি বদলের পর সেটা দিয়ে কুমানের পশ্চাৎদেশ মোছার মতো ভঙ্গি করার দৃশ্যটি!
যাই হোক, সেবার ফাইনালে সোভিয়েত ইউনিয়নকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল নেদারল্যান্ডস; এখন পর্যন্ত যেটা তাদের বড় আসরে সেরা সাফল্য। সেবার কুমানসহ ছয় ডাচ খেলোয়াড় ছিলেন উয়েফার ‘টিম অব দ্যা টুর্নামেন্ট’ দলে।
আন্তর্জাতিক ফুটবলে কুমান নিজের শেষ ম্যাচ খেলেন ১৯৯৪ সালে। পরের বছরের শেষ দিকে আন্তর্জাতিক ফুটবলের সবুজে পা পড়ে সাউথগেটের। ১৯৯৬ সালে ইউরো মিশনে সাউথগেটদের হাত ধরে বড় স্বপ্নই দেখেছিল ইংলিশরা। খেলাও ছিল ঘরের মাঠে।
গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ইংল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডস। পয়েন্ট ছিল সমান ৪ করে। ফলে লড়াইটা ছিল গ্রুপ সেরা হওয়ার। অ্যালান শিয়েরার ও শেরিংহ্যাম দুজনেই করেছিলেন জোড়া গোল; ডাচদের ৪-১ ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়েছিল ইংলিশরা। অনেকের দৃষ্টিতে ওই ম্যাচে ইংল্যান্ডের পারফরম্যান্স ছিল তাদের সর্বকালের সেরাদের একটি।
ওয়েম্বলির ওই জয়ের পর ইংল্যান্ডের আসলেই নিজেদের সামর্থ্যের প্রতি বিশ্বাস জন্মেছিল। কোয়ার্টার-ফাইনালে টাইব্রেকারে তারা স্পেনকে হারায়, কিন্তু সেমি-ফাইনালে টাইব্রেকারেই থেমে যায় তাদের পথচলা। জার্মানির বিপক্ষে নির্ধারিত সময়ের খেলা ১-১ সমতার পর পেনাল্টি শুট আউটে দুই দলই শুরুর পাঁচ শটে পায় জালের দেখা। কিন্তু এক শটের ‘সাডেন ডেথ’-এ কপাল পোড়ে ইংলিশদের।
ইংলিশদের স্তব্ধ করে দেওয়া সেই শটটিও নিয়েছিলেন বর্তমান কোচ সাউথগেট। জার্মান গোলরক্ষকের খুব কাছ দিয়ে শট নিয়েছিলেন তিনি, যা সফল হয়নি। এরপর আন্দ্রেয়াস মুলার লক্ষ্যভেদ করলে জার্মানি ফাইনালে ওঠে; পরে চেক প্রজাতন্ত্রকে হারিয়ে শিরোপাও জেতে তারা।
ওই ইউরোয় সেই জয়ের পর নেদারল্যান্ডসকে ২২ বছরে হারাতে পারেনি ইংল্যান্ড। যে খরার অবসান হয় ২০১৮ সালে, যখন সাউথগেটের কোচিংয়ে ইংল্যান্ড প্রীতি ম্যাচে ডাচদের ১-০ গোলে হারায়। এটি ছিল কুমানের নেদারল্যান্ডস কোচ হিসেবে প্রথম ম্যাচও!
কুমান অবশ্য ওই হারের মধুর প্রতিশোধ নিয়েছিলেন পরের বছরই। নেশন্স লিগের সেমি-ফাইনালসে ইংল্যান্ডকে ৩-১ গোলে উড়িয়ে। এবার কোচ হিসেবে ফের মুখোমুখি দুজনে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই দ্বৈরথে ফাইনালে ওঠার বড় প্রাপ্তির হাতছানি নিয়েই ডাগআউটে দাঁড়াবেন দুজনে; অতীতের পাওয়া, না পাওয়ার সব স্মৃতি সঙ্গী করে।