স্প্যানিশ ফুটবল
Published : 30 May 2025, 08:43 AM
অনেক স্বপ্ন নিয়ে বার্সেলোনায় পাড়ি জমানো রাফিনিয়াকে শুরুতে বেশ ভুগতে হয়েছিল। পারফরম্যান্সের ছন্দহীনতা তার মাঠের বাইরের জীবনকেও করে তুলেছিল কঠিন, দুর্বিষহ, সমালোচনা ছিল নিত্যসঙ্গী; কিন্তু এত প্রতিকূলতার মাঝেও আত্মবিশ্বাসে কখনও চিড় ধরতে দেননি ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড।
মুন্দো দেপোর্তিভোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেই কঠিন সময়ের কথাই বলেছেন রাফিনিয়া। যেখানে পেছনে ফেলে আসা জীবনের খারাপ সময়ের সঙ্গেই মিশে আছে তার মানসিক দৃঢ়তার ছাপ।
২০২২ সালে লিডস ইউনাইটেড থেকে বার্সেলোনায় যোগ দেন রাফিনিয়া। আগের মৌসুমে ক্লাবের ইতিহাসের সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসিসহ অভিজ্ঞদের অনেককে হারিয়ে কাতালান ক্লাবটির অবস্থা তখন বেশ টালমাটাল। ক্লাবের আর্থিক অবস্থাও ছিল নাজুক।
কোচ শাভি এর্নান্দেসের হাত ধরে অবশ্য ওই মৌসুমেই ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস দেয় বার্সেলোনা। রাফিনিয়াও তার অংশ ছিলেন, অভিষেক মৌসুমেই পেয়ে যান লা লিগা জয়ের স্বাদ। কিন্তু তার ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স ছিল না মোটেও আশানুরূপ। কোচের আস্থাও অর্জন করতে পারেননি।
পরের মৌসুমেও সেই একই অবস্থা। শুরুর একাদশে অনিয়মিতই রয়ে যান রাফিনিয়া। ২০২৩-২৪ মৌসুমের লা লিগায় ২৮ ম্যাচ খেলে করতে পারেন মোটে ৬ গোল, সঙ্গে অ্যাসিস্ট ৯টি। টানা দুই মৌসুমে এমন সাদামাটা পারফরম্যান্সের জন্য দলে তার জায়গা হয়ে পড়ে আরও নড়বড়ে। তার অন্য কোথাও চলে যাওয়ার গুঞ্জনও উঠত প্রায়ই।
এরপরই ২০২৪-২৫ মৌসুমের শুরুতে ক্লাবটিতে কোচ হয়ে আসেন হান্সি ফ্লিক এবং রাফিনিয়ারও ভাগ্য বদলের শুরু। তার মাঝে বিশেষ কিছু আবিষ্কার করেন জার্মান কোচ এবং রাফিনিয়াও দিতে শুরু করেন কোচের আস্থার প্রতিদান। ফলাফল, রবের্ত লেভানদোভস্কি, রাফিনিয়া ও লামিনে ইয়ামালকে নিয়ে দুর্দান্ত এক আক্রমণত্রয়ী পেয়ে যায় বার্সেলোনা।
স্প্যানিশ সুপার কাপ ও কোপা দেল রে জয়ের পর, লা লিগায় দুই ম্যাচ হাতে রেখে শিরোপা নিশ্চিত করে বার্সেলোনা এবং এই তিন শিরোপা জয়েই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন রাফিনিয়া।
নিজেকে নতুন করে খুঁজে পাওয়া ২৮ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড লিগের শেষ ম্যাচের আগের দিন স্পেনের ক্রীড়া পত্রিকা মুন্দো দেপোর্তিভোকে একটি বিশদ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, যেটা প্রকাশিত হবে শুক্রবার। তারই অংশবিশেষ বৃহস্পতিবার প্রকাশ করেছে তারা। যেখানে পেছনে ফেলে আসা সেই কঠিন সময়ের কথা তুলেছেন রাফিনিয়া।
“এখানে আসার পর থেকেই, প্রতিবার ট্রান্সফার উইন্ডোর আগে গুজব ছড়াত যে, আমি চলে যাচ্ছি, বলা হতো যে এই ক্লাবের জন্য আমি যথেষ্ট ভালো না। তবে আমি নিজের সামর্থ্য জানতাম। কারো উপহারস্বরূপ আমি এখানে আসিনি। নিজের পরিশ্রম এবং অন্য ক্লাব ও জাতীয় দলে আমি যা কিছু করেছি, সেসবের জেরেই আমি এখানে।”
“আমি বার্সায় আছি, বড় একটা ক্লাব, এখানে (খেলোয়াড়ের কাছে) প্রত্যাশা অনেক, আর সেভাবে পারফর্ম করতে না পারলে সমালোচনা হওয়াটাই স্বাভাবিক। (এসব ক্ষেত্রে) মানুষ যেমন বলে, এখান থেকে তোমার চলে যাওয়াই ভালো হবে, কারণ তুমি এই জার্সিতে খেলার মতো যোগ্য নও…কিন্তু আমি জানতাম এই ক্লাবকে আমি কী দিতে পারি। জানতাম, যদি আমি কঠোর পরিশ্রম করি এবং ফল আসে, তাহলে মানুষের মনোভাব বদলাবে। সেটাই হয়েছে।”
সত্যিই হয়েছেও তাই। পারফরম্যান্স দিয়েই ক্লাব সমর্থকদের মন জয় করেছেন রাফিনিয়া। চলতি মৌসুমে দলের লিগ শিরোপা পুনরুদ্ধারের পথে ৩৮ ম্যাচের ৩৬টিই খেলেছেন তিনি, ১৮টি গোল করার পাশাপাশি অ্যাসিস্ট করেছেন ৯টি।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বার্সেলোনা শেষ পর্যন্ত না যেতে পারলেও সেখানে রাফিনিয়া ছিলেন উজ্জ্বল। দলকে সেমি-ফাইনালে তোলার পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তার; আসরে যৌথভাবে সর্বোচ্চ ১৩টি গোল করেন তিনি, সঙ্গে অ্যাসিস্ট আটটি।
সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে চলতি মৌসুমে বার্সেলোনার হয়ে ৩৪ গোল ও ২৫টি অ্যাসিস্ট করা রাফিনিয়ার বিশ্বাস, প্রতিবার ট্রান্সফার উইন্ডোতে, এমনকি বার্সেলোনায় আসার আগেও যে তার প্রতি অন্য ক্লাবের আগ্রহের খবর আসত, সেটাই প্রমাণ করে তার মধ্যে ভালো করার সামর্থ্য আছে।
“হ্যাঁ, এটাই প্রমাণ করে যে, আমার মধ্যে মানের কমতি ছিল না। যে খেলোয়াড়ের মধ্যে ওই মান নেই, তার প্রতি প্রিমিয়ার লিগের বড় ক্লাবগুলো আগ্রহ দেখাবে না। অন্যান্য বড় ক্লাবও বড় অঙ্কের প্রস্তাবে আমাকে পেতে আগ্রহী ছিল।”
“কিন্তু আমি এখানে থাকতে চেয়েছিলাম। শিশু বয়স থেকেই আমি বার্সাকে অনুসরণ করি, সবসময় আমি তাদের খেলা দেখতাম, রোনালদিনিয়ো, নেইমার, (ক্লাবের) ইতিহাস, অনেক অনেক শিরোপা, এখানকার আবহ, সমর্থক, সবকিছু। সবসময় আমি এখানে আসতে চেয়েছিলাম, ক্লাবের ইতিহাসে আমার নাম লিখতে চেয়েছিলাম। এই শহর ও এই স্টেডিয়ামে আমি আগেও এসেছিলাম আর ওটাই আমার ইচ্ছা ছিল।”