Published : 07 Jun 2025, 10:50 AM
একজন পেশাদার ফুটবলারের সঙ্গে এক দল বাচ্চার সাধারণ একটি ছবি ঘিরে বিতর্কের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে আর্জেন্টিনার ফুটবলে। সেই ছবির জন্য শাস্তি পেতে হয়েছে ওই বাচ্চাদের। যেটির কারণে তুমুল আলোচনা-সমালাচনার তোপে পড়েছে নিওয়েল’স ওল্ড বয়েজ ক্লাব।
রসারিও শহরের ১০৩ বছর পুরোনো এই ক্লাবটি ফুটবল বিশ্বে আলাদা করে পরিচিত লিওনেল মেসির শৈশবের ক্লাব হিসেবে।
নিওয়েল’স ওল্ড বয়েজ ক্লাবের একাডেমির কিছু ক্ষুদে ফুটবলার রসারিও সেন্ত্রাল ক্লাবের উইঙ্গার বিক্তর ইগ্নাসিও মালকোরার সঙ্গে একটি ছবি তোলে। বাচ্চাদের বয়স সবারই ৯-১০। এই ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ওই বাচ্চাদের অনুশীলন স্থগিত করে দেয় নিওয়েলস ক্লাব, পাশাপাশি তাদের বৃত্তি প্রত্যাহার করা হয় তিন মাসের জন্য।
রসারিও শহরের দুই ক্লাব নিওয়েল’স ও রসারিও সেন্ত্রাল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী তো বটেই, তাদের লড়াই ও বৈরিতার নানা ইতিহাস আর্জেন্টাইন ফুটবলে আলাদা জায়গা নিয়ে আছে যুগে যুগে। কিন্তু প্রতিপক্ষের একজন তারকা ফুটবলারের সঙ্গে ছবি তোলায় ক্ষুদে ফুটবলারদের এমন কড়া শাস্তি পেতে হবে, এটা চমকে দিয়েছে অনেককেই। এই ঘটনা নিয়ে তাই ঝড় বইছে আর্জেন্টিনার ফুটবলে।
নিওয়েল’স ক্লাবের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হয়েছে, ‘আল্ট্রা-সাপোর্টারদের’ হাত থেকে ওই বাচ্চাদের রক্ষা করতেই ক্লাব এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ছবিটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর উগ্র সমর্থকেরা নানা হুমকি দিচ্ছিল, ওই ক্ষুদে ফুটবলারদের একাডেমি থেকে বহিষ্কার করার দাবি জানাচ্ছিল, এমন অনেক কিছুই বলছে ক্লাব কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু সমালোচনা তাতে থামছে না। সাধারণ মানুষ বা সমর্থক থেকে শুরু করে বিভিন্ন আঙিনার তারকারা নিওয়েল’স ক্লাব কর্তৃপক্ষকে শূলে চড়িয়েছে।
যার সঙ্গে ছবি তোলা নিয়ে এত ঘটনা, সেই মালকোরা স্বয়ং তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। মাস তিনেক আগে একটি বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টে ওই ছবি তোলা হয়েছিল জানিয়ে ১০ নম্বর জার্সির তারকা সহানুভূতি জানান প্রতিপক্ষ ক্লাবের একাডেমি ফুটবলারদের জন্য।
“ওদের জন্য আমার কষ্ট লাগছে। বাচ্চারা তো নিষ্পাপ, এত জটিলতা ওদের স্পর্শ করে না এবং ওরা কী করছে, এসবের কতটুকুই বা ওরা জানে! ওরা স্রেফ শীর্ষ পর্যায়ের একজন ফুটবলারের সঙ্গে একটি ছবি নিতে চেয়েছে, দুনিয়ার সব বাচ্চাই যেমন চায়…।”
ব্যাপারটির প্রসঙ্গ গড়িয়েছে এমনকি জাতীয় দল পর্যন্তও। চিলির বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচের আগে গত বৃহস্পতিবার আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনিও এটি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান, “কেউ যদি একদিন প্রথম বিভাগে খেলার স্বপ্ন দেখে, তাহলে কার সঙ্গে কোথায় খেলল, সেটা তো কোনো ব্যাপার নয়।”
আর্জেন্টিনার জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী পাত্রিসিয়া বুলরিচ এই ঘটনাকে ‘ডিসগ্রেসফুল’ উল্লেখ করে সামাজিক মাধ্যমে বলেন, উগ্র সমর্থকদের অন্যায় দাবির কাছে মাথানত করেছে নিওয়েলস ক্লাব।
প্রবল সমালোচনার মুখে নিওয়েলস ক্লাব কর্তৃপক্ষ বিবৃতিতে বলেছে, ওই ছেলেরা ক্লাবের সদস্যই থাকবেই এবং ক্লাবের পরিচালকরা আগামী সপ্তাহে ওই ছেলেদের অভিবাবকদের সঙ্গে দেখা করে তাদের ‘কথা শুনবেন, পাশে থাকবেন এবং উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।’
১৯৯৫ সালে এই নিওয়েল’স ওল্ড বয়েজ ক্লাবে পা রেখেছিল আট বছরের মেসি। পরে ১৩ বছর বয়সে সেই প্রতিভাবান কিশোর পাড়ি জমায় স্পেনের বার্সেলোনায়। এই কাহিনী ফুটবল বিশ্বের প্রায় সবারই জানা।
রসারিও সেন্ত্রালও আর্জেন্টাইন ফুটবলকে উপহার দিয়েছে বিশ্বকাপজয়ী এক তারকা। চার বছর বয়সে এই ক্লাবে পা রেখেছিলেন আনহেল দি মারিয়া। ১৭ বছর বয়সে এই ক্লাবের হয়েই তার পেশাদার ফুটবলে অভিষক। এরপর ফুটবল দুনিয়া রাঙিয়ে সম্প্রতি আবার শৈশবের ক্লাবে ফিরে গেছেন ৩৭ বছর বয়সী এই তারকা।