Published : 20 May 2025, 11:42 PM
পুঁজিবাজারে কোনো কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ড তালিকাভুক্তির প্রাথমিক অনুমোদনের ক্ষমতা স্টক এক্সচেঞ্জকে দেওয়ার সুপারিশ করেছে পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স।
পাবলিক ইস্যু রুলস ও মিউচুয়াল ফান্ডের বিষয়ে টাস্কফোর্স তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এমন সুপারিশ করেছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তুলে ধরেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
মঙ্গলবার বিএসইসি বলেছে, পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স গত সোমবার কমিশনের চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের কাছে এ দুটি বিষয়ে চূড়ান্ত সুপারিশমালা জমা দেয়।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (মিউচ্যুয়াল ফান্ড) বিধিমালা এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (পাবলিক ইস্যু) রুলস এর বিষয়ে এখন জনমত ও অংশীজনের মতামত নেবে কমিশন।
সেসব মতামত যাচাই-বাছাই শেষে এসব সুপারিশ চূড়ান্ত করে সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধিতে পরিবর্তন আনতে তা কমিশন সভায় অনুমোদন করতে হবে বিএসইসিকে। পরে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আইন ও বিধিতে সংশোধন আনতে হবে।
এর আগে গত ২৮ এপ্রিল মার্জিন রুলস নিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত এই টাক্সফোর্স।
এর আগে গত ১০ ফেব্রুয়ারি মিউচ্যুয়াল ফান্ড বিষয়ে খসড়া প্রস্তাব জমা দেওয়া হয়েছিল।
টাস্কফোর্সের চূড়ান্ত সুপারিশমালার বিষয়ে বিএসইসি বলছে, সুপারিশমালার আলোকে আইনি সংস্কারের প্রক্রিয়া দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করা হবে।
এ বিষয়ে বিএসইসির মুখপাত্র ও পরিচালক আবুল কালাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘কমিশন অত্যন্ত দ্রততম সময়ের মধ্যে সব প্রক্রিয়া শেষ করার চেষ্টা করবে।’’
সোমবার প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় টাস্কফোর্সের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টারের (বিয়াক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কে এ এম মাজেদুর রহমান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল আমিন উপস্থিত ছিলেন।
মিউচুয়াল ফান্ড নিয়ে সুপারিশ
# সকল মেয়াদি ফান্ডকে অবশ্যই ট্রাস্ট ডিডে নির্ধারিত প্রাথমিক মেয়াদ শেষে অবসায়ন করতে হবে। তবে যদি কোনো বিশেষ সাধারণ সভায় উপস্থিত ইউনিটহোল্ডারদের তিন-চতুর্থাংশ (ইউনিটের মালিকানার শতাংশের ভিত্তিতে) ফান্ডটি ওপেন-এন্ড ফান্ডে রূপান্তরের পক্ষে ভোট দেন, তাহলে উক্ত ফান্ড রূপান্তরিত হতে পারবে।
# যেসব মেয়াদি ফান্ডের মেয়াদ এর আগে বাড়ানো হয়েছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে সংশোধিত বিধিমালার কার্যকর হওয়ার তারিখ থেকে ছয় মাসের মধ্যে একটি ইজিএম আহ্বান করতে হবে, যেখানে ইউনিটহোল্ডারদের রূপান্তরের বিষয়ে ভোট নেয়া হবে। যদি ইউনিটহোল্ডারদের ৭৫ শতাংশ রূপান্তরের পক্ষে ভোট দেন, তাহলে ফান্ডটি রূপান্তরিত হবে। অন্যথায় উক্ত সময় থেকে তিন মাসের মধ্যে ফান্ডটি মেয়াদ শেষ বিবেচনায় অবলুপ্ত করতে হবে।
# গ্রোথ, ব্যালান্সড, শরিয়াহ-অনুবর্তী, ফিক্সড ইনকাম ও মানি মার্কেট ফান্ডের জন্য ভিন্ন ভিন্ন বাধ্যতামূলক সম্পদ বরাদ্দ নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
# বিনিয়োগ সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন: ক) একক শেয়ারে বিনিয়োগের সীমা ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়। একক শিল্প খাতে বিনিয়োগের সীমা ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়।
# তালিকাভুক্ত নয় এমন কোনো ইক্যুইটি সিকিউরিটিতে বিনিয়োগ করা যাবে না। তবে শুধু মেইন বোর্ডে তালিকাভুক্ত ‘এ’ শ্রেণির কোম্পানির ইস্যুকৃত বন্ড বা প্রেফারেন্স শেয়ারে বিনিয়োগ করা যাবে।
# মোট বার্ষিক ব্যয় অনুপাত সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ নির্ধারণ করার সুপারিশ করা হয়। ফিক্সড ইনকাম অথবা মানি মার্কেট ফান্ডের ক্ষেতে এই হার হবে ২ শতাংশ।
# মেয়াদি ফান্ডের ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট বছরে অর্জিত লাভের কমপক্ষে ৭০ শতাংশ ইউনিটহোল্ডারদের মধ্যে লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করতে হবে।
# বেমেয়াদি বা ওপেন-এন্ড ফান্ডের ক্ষেত্রে, প্রতি ইউনিটে ন্যূনতম লভ্যাংশ হবে ওই বছরের অর্জিত লাভ অথবা ভার আরোপিত গড় আয়; এই দুটির মধ্যে যেটি কম তার কমপক্ষে ৩০ শতাংশ।
আইপিও বিধি নিয়ে সুপারিশ
# আইপিও অনুমোদন প্রক্রিয়ায় স্টক এক্সচেঞ্জ প্রাথমিক অনুমোদন প্রদান করবে এবং স্টক এক্সচেঞ্জের সুপারিশের ভিত্তিতে বিএসইসি চূড়ান্ত অনুমোদন প্রদান করবে।
# আইপিও বা পাবলিক ইস্যুর ক্ষেত্রে যারা নিরীক্ষকের দায়িত্ব পালন করবেন তাদের উপযুক্ত ও সঠিক মানদণ্ড সুপারিশমালায় দেয়া হয়। যার মাধ্যমে আইপিও অনুমোদন প্রক্রিয়ায় নিরীক্ষা কাজের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি পাবে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি পাবে।
# আগামীতে ভালো ও মৌল ভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিসমূহ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তিতে উৎসাহিত করতে আইপিও ভ্যালুয়েশন বা প্রাইসিংয়ের জন্য সুগঠিত মডেল তৈরি করার প্রস্তাব করা হয়। যার মাধ্যমে তালিকাভুক্তিতে আগ্রহী কোম্পানিগুলোর ন্যায্য প্রাইসিং নিশ্চিত হবে।
# ইস্যু ম্যানেজারদের জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি করতে নীতিমালার কিছু অংশে পরিবর্তন আনতে বলেছে টাক্সফোর্স।