Published : 04 Jun 2025, 06:54 PM
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি চাকরির বাজারে বিপর্যয় আনতে পারে বলে যখন নানা সতর্কবার্তা আসছে, তখন গুগলের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডিপমাইন্ডের প্রধান ডেমিস হাসাবিস অন্য এক আশঙ্কার কথা বললেন। তিনি বলছেন, এআই যদি ভুল হাতে পড়ে, তাহলে তা হতে পারে মানবতার জন্য বড় হুমকি।
‘চাকরি নিয়ে নয়, আমি বেশি চিন্তিত এই প্রযুক্তি যদি ভুল মানুষের হাতে পড়ে,’ লন্ডনে চলমান এসএক্সএসডব্লিউ উৎসবে এক সাক্ষাৎকারে বলেন নোবেল বিজয়ী এই গবেষক।
হাসাবিস বলেন, ‘একজন দুর্বৃত্ত এআই প্রযুক্তিকে ক্ষতিকর কাজে ব্যবহার করতে পারে। তাই মূল প্রশ্ন হলো, কীভাবে আমরা এই প্রযুক্তি ভালো উদ্দেশ্যে ব্যবহারের পথ খুলে দেব এবং খারাপ ব্যবহারের পথ বন্ধ করব।
কিছুদিন আগেই এআইকেন্দ্রীক স্টার্টআপ ‘অ্যানথ্রপিক’ এর প্রধান ডারিও অ্যামোডেই মন্তব্য করেছিলেন, এআই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে অর্ধেকেরও বেশি ‘এন্ট্রি-লেভেল’ ‘হোয়াইট-কলার’ চাকরি বিলুপ্ত করতে পারে। তবে হাসাবিস বলেন, তিনি ‘আর্টিফিশিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্স (এজিআই)’-এর সম্ভাব্য অপব্যবহার নিয়েই বেশি শঙ্কিত, যা মানুষের মতো বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন একটি কাল্পনিক স্তরের এআই।
হোয়াইট কলার জব মানে হচ্ছে যে পেশায় একজন ব্যক্তিকে মাথা খাটাতে হয় এবং সাধারণত কায়িক শ্রম লাগে না। এ ধরনের পেশায় লোকজন সচরাচর অফিসে কাজ করেন। এর বিপরীতে ব্লু কলার জব মানে হচ্ছে, যে পেশায় কায়িক শ্রম দরকার পড়ে। প্রচলিত ভাষায় এ কাজগুলোকে ‘অড জব’ বলা হয়।
সম্প্রতি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই জানায়, কণ্ঠস্বর নকল করে সরকারি কর্মকর্তার মতো কথা বলার জন্য এআই ব্যবহার করেছে কিছু হ্যাকার। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক রিপোর্টেও বলা হয়, জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ‘বিপর্যয়কর’ হুমকি হয়ে উঠতে পারে এআই।
অন্যদিকে, ডিপফেইক পর্নোগ্রাফি তৈরিতেও এআইয়ের অপব্যবহার বেড়েছে। এর বিরুদ্ধে ‘টেইক ইট ডাউন অ্যাক্ট’ নামের এক বিলে স্বাক্ষর করে আইনে রূপান্তর করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প, যাতে অনুমতি ছাড়া যৌন নিপীড়নমূলক ছবি বা ভিডিও শেয়ার করলে তা হবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এআই-কে ঘিরে এই উদ্বেগের মধ্যেও, হাসাবিস ভবিষ্যতের সম্ভাবনায় আশাবাদী। তিনি বলছেন, গুগল এমন এক ‘ইউনিভার্সাল এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট’ তৈরি করছে, যা ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কাজ করবে দৈনন্দিন কাজ করবে, বই-ছবি-বন্ধুর পরামর্শ দেবে, এমনকি চোখে পরার স্মার্ট চশমাতেও সংযুক্ত থাকবে।
‘মানুষের দৈনন্দিন জীবনে এআই এজেন্ট এক অভ্যস্ত জীবনের অংশ হয়ে যাবে,’ বলেন তিনি।
ডিপমাইন্ড প্রধান মনে করেন, এই প্রযুক্তির ব্যবহারে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ও সমঝোতা জরুরি, যদিও বর্তমান ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় তা কঠিন। ‘ভবিষ্যতে পরিস্থিতি উন্নত হলে এটা আরও পরিষ্কার হয়ে যাবে যে, বৈশ্বিকভাবে নীতিমালা প্রয়োজন,’ বলেন হাসাবিস।
তবে এআই প্রযুক্তি এখনও পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য নয়। এটি বিভ্রান্তিকর তথ্য (হ্যালুসিনেশন), পক্ষপাত, ও ভুল সিদ্ধান্ত দিতে পারে। গত মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের দুটি সংবাদপত্র শিকাগো সান টাইমস ও ফিলাডেলফিয়া ইনকোয়ারার এআইয়ের বানানো একটি বইয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে, যেখানে গ্রীষ্মকালে পড়ার মতো বইয়ের নাম থাকার কথা। ওই তালিকায় এআই এমন বইয়ের নাম ঢুকিয়ে দিয়েছে যার কোনো অস্তিত্বই নেই।
হাসাবিস বলেন, এআই যেমন মানুষের উৎপাদনক্ষমতা বাড়াতে পারে, তেমনি নতুন ধরনের চাকরিও তৈরি করতে পারে। তবে সমাজকে এই প্রযুক্তিগত রূপান্তরের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হবে এবং এই অতিরিক্ত উৎপাদনের সুফল সবার মধ্যে ভাগ করে নিতে হবে।
‘ইন্টারনেট আসার সময় যেমন বদল এসেছে, এবারও আসবে। অনেক পুরনো চাকরি যাবে, কিন্তু তার জায়গায় আরও ভালো চাকরি আসবে কি না, সেটাই দেখার বিষয়,’ বললেন হাসাবিস।