Published : 08 Jun 2025, 03:29 PM
পাকা বা মিষ্টি ফল খাওয়া পাখিরা কেবল চিনি নয়, মাঝেমধ্যে অল্প পরিমাণে অ্যালকোহলেও চুমুক দিচ্ছে বলে উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।
নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে, পাকা ফল বা ফুলের রস অনেক সময় গাঁজন হয়ে এতে থাকা চিনি প্রাকৃতিকভাবে অ্যালকোহলে পরিণত হতে পারে। সেই রস বা ফল খাওয়ার ফলে কিছু পাখি নিয়মিতই অ্যালকোহল গ্রহণ করছে।
মাতাল এক হামিংবার্ড পাখি কল্পনার বিষয়টি হাস্যকর শোনালেও গবেষণা বলছে, এতে সত্যি পাখির শরীরেও প্রভাব পড়তে পারে।
“দ্য প্রুফ ইজ ইন দ্য প্লামেজ” শিরোনামের গবেষণাটি করেছেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে’-এর বিজ্ঞানী সিনথিয়া ওয়াং-ক্লেপুল ও তার সহকর্মীরা।
চিনিওয়ালা খাবার যেমন পাকা ফল খাওয়া পাখিরা কি আরও বেশি মাত্রায় ইথানল-এর সংস্পর্শে আসে কি না তা খতিয়ে দেখেছে গবেষণা দলটি।
ইথানল মূলত গাঁজন হওয়া খাবার ও পানীয়তে পাওয়া অ্যালকোহলের একটি ধরন। গবেষণায় এ অ্যালকোহলের প্রভাব পাখির শরীরে শনাক্ত করা যায় কি না সে বিষয়টিও দেখেছে তারা।
গবেষণার জন্য ‘ইথাইল গ্লুকুরোনাইড’ বা ইটিজি নামের এক রাসায়নিক উপাদান নিয়ে পরীক্ষা করেছেন গবেষকরা। এটি এমন এক পদার্থ, যা অ্যালকোহল ভেঙে যাওয়ার পরও শরীরে থেকে যায়।
মানুষের ক্ষেত্রে এ উপাদানটি সাধারণত অ্যালকোহল সেবনের নির্ভরযোগ্য চিহ্ন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে এই প্রথমবার পাখির শরীরে ইটিজি নিয়ে পরীক্ষা করা হল বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
গবেষণায় ১৭টি ভিন্ন প্রজাতির পাখির লিভার ও পালকের নমুনা বিশ্লেষণ করেছেন গবেষকরা। এসব নমুনা মৃত পাখিদের দেহ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। কারণ এদের দেহ বার্কলির ‘মিউজিয়াম অফ ভার্টিব্রেট জুয়োলজি’তে দান করা হয়েছিল।
গবেষণা দলটি পরীক্ষায় যে পদ্ধতি ব্যবহার করেছে তাতে পাখিদের সংরক্ষিত দেহ থেকে পালকের নমুনা নিতে হয়েছে। ফলে যেসব পাখি কেবল আগেই জাদুঘরে ছিল সেগুলো নিয়েই কাজ করতে পেরেছেন তারা।
হামিংবার্ডের শরীরে ইটিজি’র উচ্চ মাত্রা পেয়েছে গবেষক দলটি। কারণ এসব পাখি মূলত পাকা ফল খায়। আর পাকা ফলের চিনি গাঁজন হয়ে অ্যালকোহল তৈরি করতে পারে। ফলে হামিংবার্ড হয়তো গবেষকদের ধারণার চেয়েও বেশি বার অল্প পরিমাণে অ্যালকোহল সেবন করতে পারে।
গবেষকরা বলছেন, ইটিজি কেবল হামিংবার্ডেই নয়, এমন কিছু পাখির শরীরেও মিলেছে যারা মূলত বীজ, পোকামাকড় বা অন্য ছোট আকারের প্রাণী খায়। মানে হচ্ছে, কেবল চিনিপ্রেমী পাখিদের শরীরে নয়, বরং অনেক ধরনের পাখির শরীরেই অ্যালকোহলের ছাপ থাকতে পারে।
গবেষণায় শহরে থাকা হামিংবার্ডের শরীরে ইটিজি’র মাত্রা বেশি মিলেছে। এর কারণ হতে পারে মানুষরা শহরে অনেক সময় চিনি মিশানো পানি দেওয়া ফিডার রাখেন। তবে এসব ফিডার নিয়মিত পরিষ্কার না করা হলে তাতে থাকা চিনি মেশানো পানি গাঁজন হয়ে অ্যালকোহলে পরিণত হয়। এতে পাখিদের জন্য সেই খাবারটা মদ্যপানের মতো হয়ে যায়।
গবেষকরা বলছেন, অ্যালকোহল গ্রহণ পাখিদের আচরণ ও স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। অল্প অ্যালকোহলও এদের ওড়ায় বাধা দিতে, শিকার হওয়া ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে, অনেক প্রজাতির পাখি আমাদের ধারণার চেয়ে বেশি বার অ্যালকোহলের সংস্পর্শে আসছে। তাই এখন সময় এসেছে পাখিদের খাবারে আসলেই কী আছে, তা আরও ভালো করে জানার।
গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘ইকোলজিক্যাল অ্যান্ড ইভোলিউশনারি ফিজিওলজি’-এ।