Published : 10 May 2025, 02:33 PM
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া টিনএজার ছেলেদের চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে সমস্যা বা নেতিবাচক অভিজ্ঞতার মধ্যে পড়ে দ্বিগুণ সংখ্যাক টিনএজার মেয়ে– এমনই তথ্য মিলেছে সাম্প্রতিক এক জরিপে।
১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী প্রতি পাঁচজন মেয়ের মধ্যে একজন বলেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে সময় নিয়ন্ত্রণে সমস্যা বা এটি নিয়ে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে বিরোধের মতো সমস্যায় পড়েছে তারা, যা একই বয়সী ছেলেদের বেলায় ঘটে প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজনের বেলায়।
গবেষণার এসব ফলাফল যুক্তরাজ্যের ওয়েলসে’র স্কুলশিক্ষার্থীদের নিয়ে করা এক বড় জরিপের অংশ বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
‘কার্ডিফ ইউনিভার্সিটি’র সঙ্গে মিলে এ গবেষণা করেছে যুক্তরাজ্যের ‘পাবলিক হেলথ ওয়েলস’ বা পিএইচডব্লিও। তারা বলেছে, সামাজিক যোগােযোগ মাধ্যম ব্যবহারে ছেলে-মেয়েদের মধ্যে এই পার্থক্যের পেছনের কারণ এখনও স্পষ্ট নয়।
গবেষণায় ১১ থেকে ১৬ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয়েছে। যেমন– তারা কি খেলাধুলা বা শখের মতো অন্য কাজ বাদ দিয়ে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে, বা সব সময় তাদের মাথায় সামাজিক মাধ্যম ঘুরপাক খায় কি না এমন সব প্রশ্ন।
ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের পার্থক্যটি সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে নবম ও দশম শ্রেণিতে।
বিবিসি লিখেছে, সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যার মুখে পড়ার কথা বলেছে দশম শ্রেণির ১৪ থেকে ১৫ বছর বয়সী ২১ শতাংশ মেয়ে ও নবম শ্রেণির ১৩ থেকে ১৪ বছর বয়সী ২০ দশমিক পাঁচ শতাংশ মেয়ে। অন্যদিকে, একই বয়সী ছেলেদের মধ্যে এই হার যথাক্রমে ১০ দশমিক এক শতাংশ ও নয় দশমিক আট শতাংশ।
সার্বিকভাবে ওয়েলসে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারে সমস্যার মুখে পড়ার কথা বলেছে ১৭ দশমিক এক শতাংশ মেয়ে ও নয় দশমিক সাত শতাংশ ছেলে।
এদিকে, ১৩ বছর বয়সী লয়েস বলেছে, সে কতটা সময় ফোন ব্যবহার করে তা নির্ভর করে তার অন্য কাজের ওপর। সে খেলাধুলা করে, ক্লাবে যায় ও ছুটির দিনে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে পছন্দ করে।
“করার মতো আর কিছু না পেলে তখনই আমি ফোন ব্যবহার করি।
“কখনো কখনো স্কুলের পর বসে বসে এটা দেখতে ভালো লাগে যে, অন্য সবাই কী করছে। কিছু না ভেবে কেবল তা দেখে যাই আমি।
“মাঝে মধ্যে এই ভাবনা আমাকে অবাক করে যে, সময় কত দ্রুত সময় চলে যাচ্ছে। বসে বসে থাকতে থাকতে আমার দুই ঘণ্টাও চলে যায়। অথচ আমি টেরই পাই না। কখনো কখনো বিষয়টি শকিং হয়ে ওঠে।”
পিএইচডব্লিও-এর স্বাস্থ্য উন্নয়ন পরামর্শক এমিলি ভ্যান দে ভেনটার বলেছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কিছু সুবিধা থাকলেও অনেক টিনএজার ছেলেমেয়ে এর নেতিবাচক প্রভাবের কথা জানাচ্ছে, যা চিন্তার বিষয়।
তিনি আরও বলেছেন, সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করতে গিয়েই এসব সমস্যা অনুভব করছে টিনএজাররা। সম্ভবত টিনএজারদের মধ্যে বিষণ্ণতা ও উদ্বেগ বাড়িয়ে তোলার একটি কারণ হতে পারে এটি।
“ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা কিছুটা বেশি রিপোর্ট করে যে, তারা শারীরিক বা সাইবার বুলিয়িংয়ের শিকার হয়েছে এবং আমরা দেখেছি অনেক রাত হয়ে যাওয়ার পরও ছেলেদের তুলনায় ডিভাইস বেশি ব্যবহার করে মেয়েরা। তবে এ লিঙ্গভিত্তিক পার্থক্যের কারণ কী তা স্পষ্ট নয়।”
এক্ষেত্রে ডিভাইসের নোটিফিকেশন বন্ধ করা, ডিভাইস শোয়ার রুমে না রাখা ও ঘুমানোর আগে সেগুলো ব্যবহার না করার জন্য মেয়েদের উৎসাহিত করেছেন এমিলি।
প্রতি দুই বছরে একবার করা এ জরিপটিতে সপ্তম থেকে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের তাদের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্র বিশেষ করে মানসিক স্বাস্থ্য, যৌনতা, সম্পর্ক ও স্কুল জীবন সম্পর্কে প্রশ্ন করেন গবেষকরা।
২০২৩ সালে করা এ জরিপে এক লাখ ৩০ হাজার তরুণ-তরুণী অংশ নিয়েছেন। এ জরিপে ভালোভাবে নথিভুক্ত করা হয়েছে তরুণদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও স্মার্টফোন ব্যবহার সংক্রান্ত নানা সমস্যা।