Published : 19 Jun 2024, 05:44 PM
ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকায় সার্চ ইঞ্জিন গুগল ও ই-কমার্স সাইট অ্যামাজনে কাজ করতে সম্প্রতি অস্বীকৃতি জানিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘স্টেম’ শিক্ষার্থীদের একটি দল।
‘স্টেম (STEM)’ হচ্ছে, শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ এক শাখা যেখান থেকেই প্রযুক্তির প্রায় সব লোকবল আসে। স্টেম শব্দটির পূর্ণরূপ হচ্ছে সায়েন্স, টেকনোলজি, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যাথমেটিক্স।
যতদিন প্রযুক্তি কোম্পানি দুটি ‘প্রজেক্ট নিম্বাস’-এ নিজেদের সম্পৃক্ততা বন্ধ না করে, ততদিন ১২০টির বেশি ইউনিভার্সিটির এক হাজার একশ জনের বেশি স্টেম শিক্ষার্থী ও তরুণ প্রযুক্তি কর্মীদের দলটি গুগল ও অ্যামাজনে চাকরি বা ইন্টার্নশিপ না নেওয়ার বিষয়ে এক অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করেছেন বলে উঠে এসেছে সংবাদ সাইট ‘ওয়্যার্ড’-এর প্রতিবেদনে।
‘প্রজেক্ট নিম্বাস’ প্রকল্পটি নিয়ে এত বিতর্কের কারণ, এতে ইসরায়েলি সরকারকে ক্লাউড কম্পিউটিং সেবা ও বিভিন্ন অবকাঠামোগত সহযোগিতা দেওয়ার লক্ষ্যে ১২০ কোটি ডলারের চুক্তি করেছে গুগল ও অ্যামাজন।
আর এ অঙ্গীকারে স্বাক্ষরদাতাদের মধ্যে রয়েছেন স্ট্যানফোর্ড, ইউসি বার্কলে, ইউনিভার্সিটি অফ সান ফ্রান্সিসকো, সান ফ্রান্সিসকো স্টেট ইউনিভার্সিটি’র স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, বুধবার গুগলের সান ফ্রান্সিসকো দপ্তরের বাইরে বেশ কিছু প্রযুক্তি কর্মী ও অধিকারকর্মীদের নিয়ে ‘প্রজেক্ট নিম্বাস’ বিরোধী র্যালিতে অংশও নিতে দেখা গেছে সেইসব ইউনিভার্সিটি’র শিক্ষার্থীদের।
ক্যারিয়ার সেবাদাতা সাইট ‘কলেজ ট্রানজিশনস’-এর ডেটা অনুসারে, স্টেম শিক্ষার্থীদের শীর্ষ নিয়োগকর্তা হিসেবে বিশেষ পরিচিতি আছে অ্যামাজন ও গুগলের। লিংকডইন থেকে সংগৃহীত তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সাল পর্যন্ত ইউসি বার্কলে’র ৪৮৫ জন ও স্ট্যানফোর্ডের ২১৬ জন স্নাতক শিক্ষার্থী গুগলে কাজ করছেন।
এ অঙ্গীকারনামাকে গুগল ও অ্যামাজনের বিরুদ্ধে ‘নো টেক ফর অ্যাপার্থাইড (নটা)’ নামের সংগঠনটির সর্বশেষ প্রতিক্রিয়া বলে আখ্যা দিয়েছে ওয়্যার্ড, যা মুসলিম তৃণমূল আন্দোলন ‘এমপি পাওয়ার চেঞ্জ’ ও অ্যাডভোকেসি সংগঠন ‘জিউয়িশ ভয়েস ফর পিস’-এর প্রযুক্তি কর্মীদের একটি জোট।
২০২১ সাল থেকেই গুগল ও অ্যামাজনকে ‘প্রজেক্ট নিম্বাস’ বয়কট ও ইসরায়েলি সরকারের অন্যান্য কাজ থেকে সরে আসার পরামর্শ দিয়ে আসছে নটা।
“ইসরায়েলি নজরদারি ও সহিংসতায় ফিলিস্তিনিরা এরইমধ্যে ক্ষতির মুখে পড়েছেন,” উল্লেখ রয়েছে অঙ্গীকারনামায়।
“সর্বজনীনভাবে ক্লাউড কম্পিউটিং সক্ষমতা বিস্তৃত করে ও ইসরায়েলি দখলদার সরকার ও সামরিক বাহিনীর হাতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ধরিয়ে দিয়ে অ্যামাজন ও গুগল ইসরায়েলি দখলদারদেরকে আরও দক্ষ ও সহিংস করে তুলতে সাহায্য করছে, এমনকি ফিলিস্তিনিদের জন্য আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে এতে।”
‘ইউনিভার্সিটি অফ স্যান ফ্রান্সিসকো’র ‘কমিউনিকেশনস’ বিভাগে মেজর ও ‘কম্পিউটার সায়েন্স’ বিভাগে মাইনর করা শিক্ষার্থী নেওমি হার্ডি-এনজি বলেছেন, গাজা যুদ্ধে অর্থায়নকারী ও এর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া বিভিন্ন কোম্পানির তথ্য প্রকাশের দাবিতে ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত তিন সপ্তাহের ক্যাম্পে অংশ নেওয়ার সময় তিনি এই চিঠির কথা শুনেছেন।
তিনি আরও বলেন, এ চিঠিতে তিনি স্বাক্ষর করেছেন কারণ বিক্ষোভকারীদের দাবি নিয়ে কথা বলার বিষয়ে নীরব ছিলেন গুগল ও অ্যামাজনের নির্বাহীরা। তবে, এমন মনোভাবের পরিবর্তন আসতে হবে ‘একেবারে গোড়া থেকে’।
‘প্রজেক্ট নিম্বাস’কে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে বেশ কয়েক মাস ধরেই কাজ করে আসছে নটা। এমনকি নিউইয়র্কে গুগল আয়োজিত এক প্রযুক্তি সম্মেলনে গুগলের ইসরায়েল অংশের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাজে বাধা দেওয়ায় মার্চ মাসে নটার এক সংগঠক এডি হ্যাটফিল্ডকে গুগল বরখাস্তও করেছিল।
পরবর্তীতে গুগলের নিউইয়র্ক ও সানিভেল দপ্তরের বাইরে অবস্থান করে ৫০ জনের বেশি গুগল কর্মী প্রজেক্ট নিম্বাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তাদেরকেও ছাঁটাই করেছিল কোম্পানিটি। এ প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজক ছিল নটা’ই।
গুগলের দাবি, ‘প্রজেক্ট নিম্বাস’-এ শ্রেণীবদ্ধ বা সামরিক কাজের ‘নির্দেশনা নেই’। তবে বিভিন্ন নথি ফাঁস হওয়ার পর দেখা গেছে, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর জন্য কাজ করতে চুক্তিবদ্ধ কোম্পানিটি।
তবে এ বিষয়ে ওয়্যার্ড গুগল ও অ্যামাজনের মন্তব্য জানতে চাইলেও কোনো সাড়া মেলেনি।