Published : 29 Jun 2024, 03:02 PM
স্রেফ খেতে চাইছে না, বা কান্নাকাটি করছে আর সে পরিস্থিতি সামাল দিতে যদি শিশুর হাতে স্মার্টফোনটি তুলে দেওয়া হয়, তাতে আপাত সমাধান হলেও ওই শিশুরা নিজেদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে শিখবে না বলেই উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো শিশুর যখন রাগ হয় তখন তার হাতে মোবাইল ফোন বা ট্যাবলেট তুলে দিলে তা তাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
গবেষণা অনুসারে, মা-বাবারা যদি তাদের সন্তানদের শান্ত করার জন্য নিয়মিত ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করেন তাহলে তাদের সন্তানদের আবেগ নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হতে পারে- যা শিশুদের পরবর্তী জীবনে রাগ নিয়ন্ত্রণে সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এ বিষয়ে গবেষকরা বলছেন, শিশুরা তাদের জীবনের প্রথম কয়েক বছরে আত্মনিয়ন্ত্রণ বিষয়ে অনেক কিছু শেখে। এ সময় কিছু পরিস্থিতিতে সংবেদনশীল, মানসিক ও আচরণগত প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে শেখে তারা, যা মূলত তৈরি হয় মা-বাবার সঙ্গে শিশুর সম্পর্ক থেকে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শিশুদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে তাদের হাতে ডিজিটাল ডিভাইস তুলে দেওয়া খুবই সাধারণ সমাধান হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে সামাল দেওয়া কষ্টকর এমন আচরণের ক্ষেত্রে।
তবে গবেষকরা বলছেন, বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইস শিশুদের এমন আচরণ ঠেকানোর জন্য যে একেবারেই কার্যকর নয়, সেটি সবাইকে বোঝাতে পারলে তা শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতা উভয় ক্ষেত্রেই উপকারে দেবে।
হাঙ্গেরির ‘ইওটভোস লোরান্ড ইউনিভার্সিটি’র গবেষক ড. ভেরোনিকা কোনক বলেন, “ডিজিটাল ডিভাইস দিয়ে বদমেজাজ বা রাগ থামানো যায় না।”
“নিজ স্বার্থেই শিশুদের বিভিন্ন নেতিবাচক আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা শিখতে হবে। আর এই শেখার প্রক্রিয়ার সময় শিশুদের মা-বাবার সাহায্য দরকার, ডিজিটাল ডিভাইসের নয়।”
কোনক আরও বলেন, “এ গবেষণায় আমরা দেখিয়েছি, মা-বাবারা নিয়মিতই সন্তানকে শান্ত করতে বা মেজাজ নিয়ন্ত্রণে তার হাতে কোনো ডিজিটাল ডিভাইস তুলে দিলে তারা কখনোই আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে শিখবে না।”
“আর এর ফলে পরবর্তী জীবনে তারা আরও গুরুতর পরিস্থিতিতে আবেগ নিয়ন্ত্রণে সমস্যায় পড়বে। বিশেষ করে, নিজেদের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার বেলায়।”
কানাডার ‘ইউনিভার্সিটি ডি শেরব্রুক’-এর অধ্যাপক ক্যারোলিন ফিটজপ্যাট্রিক বলেন, “আমরা প্রায়ই দেখি, সন্তানের মন খারাপ হলে মা-বাবারা তাদের মনোযোগ অন্য দিকে সরাতে তাদের হাতে ট্যাবলেট বা স্মার্ট ফোন তুলে দেন।”
“শিশুরা ডিজিটাল কনটেন্টে সহজেই আকৃষ্ট হয়, যা তাদের বদমেজাজ বন্ধ করার সহজ একটি উপায়। আর স্বল্পমেয়াদে এটি ভালোই কাজে আসে।”
“বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইস যে বদমেজাজ নিরাময়ের জন্য অনুপযুক্ত হাতিয়ার, সে বিষয়ে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি পেলে শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতা দুটোই উপকৃত হবে।”
এ গবেষণার জন্য ২০২০ সালে একটি মূল্যায়ন ও এর এক বছর পর একটি ফলো-আপ পরিচালনা করেছিলেন গবেষকরা।
এজন্য দুই থেকে পাঁচ বছর বয়সী তিনশ জনেরও বেশি শিশুর মা-বাবারা একটি প্রশ্নমালার উত্তর দিয়েছেন, যেখানে মূল্যায়ন করা হয়েছে শিশু ও মা-বাবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহারের বিষয়টি।
গবেষণার ফলাফলে উঠে এসেছে, মা-বাবারা শিশুদের আবেগ নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যে তাদের ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহারের প্রবণতা বাড়িয়ে দিলে এর এক বছর পর গিয়ে দেখা যায়, তাদের রাগ ও হতাশা নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা অনেক কমে গেছে।