Published : 24 Jan 2024, 06:33 PM
চার দশক আগে নিজেদের প্রথম কম্পিউটার ‘ম্যাকিনটশ’ উন্মোচন করেছিল অ্যাপল, যা ব্যক্তিগত কম্পিউটার প্রযুক্তির জগতে এনেছিল নতুন বিপ্লব।
বিখ্যাত ব্রিটিশ পরিচালক রিডলি স্কট নির্মিত ‘সুপার বোল’ (মার্কিন জাতীয় ফুটবল লিগের বার্ষিক লিগ চ্যাম্পিয়নশিপ খেলা) বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিশ্বের কাছে পরিচিত হওয়ার দুই দিন পর অর্থাৎ ১৯৮৪ সালের ২৪ জানুয়ারি এই ‘গেইমচেঞ্জিং’ কম্পিউটারটি বাজারে এসেছিল।
কালজয়ী ব্রিটিশ সাহিত্যিক ও রাজনৈতিক লেখক জর্জ অরওয়েলের ১৯৮৪ সালের ‘ডিইস্টোপিয়ান’ উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে বানানো হয়েছিল বিজ্ঞাপনটি। পরবর্তীতে, একে ‘ম্যাকের চেয়েও সফল’ হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন অ্যাপলের তৎকালীন মার্কেটিং গুরু রেজিস ম্যাকেনা।
প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ও স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি’র সহযোগী অধ্যাপক রন গুটম্যান সে সময় বলেছিলেন, নতুন এ কম্পিউটার যে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনছে, তারই ইঙ্গিত মিলেছে এ ‘কিংবদন্তি’ বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে।
“শীর্ষ পিসি নির্মাতাদের যুগ পাল্টে দেওয়ার প্রতীক হিসেবে কাজ করেছে ম্যাকিনটশ। এর কার্যকারিতা ও ব্যবসায়িক ব্যবস্থাপনাও গ্রাহকবান্ধব। আর একে এমন উপায়ে নকশা করা হয়েছিল যাতে গ্রাহক সহজেই পিসিটি ব্যবহার করতে পারেন।” --ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজকে বলেন গুটম্যান।
“এর পেছনের কারিগর অর্থাৎ কম্পিউটারের প্রকৌশল ও নকশাবিদদের সামনে তুলে এনে তাদেরকে ‘রকস্টার’ বানিয়েছিল অ্যাপল, যার ফলে কম্পিউটিংয়ের সঙ্গে ব্যবহারকারীদেরও একটি মধুর মেলবন্ধন ঘটেছিল সে সময়।”
তবে, কম্পিউটারটির প্রচারণার মূল কৃতিত্ব স্কটের বানানো ওই বিজ্ঞাপনটির, যা এর বিক্রিতেও বিশাল সাফল্য এনে দিয়েছিল। আর ম্যাকিনটশ নিজেও যে একটি যুগান্তকারী উদ্ভাবন ছিল, সেটিও প্রমাণিত।
এ কম্পিউটারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিকাশ ছিল, এটি অ্যাপলের প্রথাগত ‘ব্লকি’ টেক্সট ফন্ট ইন্টারফেস থেকে সরে এসে অ্যাপলের বিভিন্ন আইকন ও লোগোর গ্রাফিক ইন্টারফেস তৈরি করেছে, যার নজির এখনও অ্যাপলের বিভিন্ন পণ্যে মেলে।
প্রযুক্তি কোম্পানি ‘হ্যাকআর’-এর প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও ডেটা বিশ্লেষক ড. রবার্ট জোনস স্কাই নিউজকে বলেন, “ম্যাক আসার আগে বিশ্বের বেশিরভাগ ব্যক্তিগত কম্পিউটারে কাজ করার জন্য বিভিন্ন কোড ও কমান্ড টাইপ করতে হতো।”
“সে সময় কেবল সত্যিকারের প্রযুক্তির জাদুকররাই এতে কাজ করতে পারতেন। তবে ম্যাকের গ্রাফিকাল ইউজার ইন্টারফেস ও মাউস বাজারে আসার পর সে প্রেক্ষাপটও বদলে যায়। আমার মতে, ম্যাকই প্রথম পিসি, যেটি মূলধারার সমাজকে ডিজিটাল জীবনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল।”
“এমনকি চার দশক পরও আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহারযোগ্য প্রযুক্তিতে ম্যাকের ঝলক পাওয়া যায়।”
সে সময় কম্পিউটারটির দাম ছিল প্রায় আড়াই হাজার ডলার, যা বর্তমান সময়ের সাড়ে সাত হাজার ডলারের সমান। অ্যাপলের প্রথম ম্যাক-এর সঙ্গে ছিল একটি বিল্ট-ইন স্ক্রিন, মাউস ও ১২৮ কিলোবাইট মেমরি। যা এখনকার কম্পিউটারের হিসাবে খুবই কম ক্ষমতাসম্পন্ন।
যাই হোক, তখন এত দামি ব্যক্তিগত কম্পিউটার কেনার ধারণাটি নতুন হলেও ‘ম্যাকিনটশ’ বাজারে আসার পরপরই সাফল্য দেখেছে, যেখানে প্রথম চার মাসেই ম্যাকের ৭০ হাজার ইউনিট কম্পিউটার বিক্রি হয়েছিল।
গ্রাফিক ইউজার ইন্টারফেস (জিইউআই) ব্যবহার করা প্রথম বাণিজ্যিকভাবে সফল পিসি হল ‘ম্যাকিনটশ’। আর এ ধারণাটির মূল স্রষ্টা এর নকশাবিদ জেফ রাসকিন। অ্যাপলের ‘লিসা’ প্রকল্পের অধীনে এ কম্পিউটার বানিয়েছিলেন তিনি। আর লিসা নামটি অ্যাপল সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবসের কন্যার নামে রাখা হয়েছিল।
তবে প্রকল্প দলের সঙ্গে অন্তঃকোন্দল ঘটায় জবসকে প্রকল্পটি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ফলে জেফ রাসকিন ‘ম্যাকিনটশ’ প্রকল্পের নেতৃত্ব পান, যাকে পরবর্তীতে একটি সফল পণ্য হিসাবে প্রমাণ করেন তিনি।
‘ম্যাকিনটশ’-এর এমন সাফল্য সেই সময় বাজারের প্রভাবশালী হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার নির্মাতা ‘আইবিএম’-এর বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দেয় অ্যাপলকে। আর এই সাফল্যের হাত ধরেই পরবর্তীতে আইফোনের মতো উদ্ভাবনী পণ্য বাজারে এনেছেন জবস।
৮০ ও ৯০’র দশকে প্রচলিত সাদা বাক্সের ডেস্কটপ থেকে ম্যাককে সরিয়ে আনা হলেও এখনও শক্তিশালী ল্যাপটপ হিসেবে বেঁচে আছে নামটি।
“৪০ বছর আগে ম্যাক ব্যক্তিগত কম্পিউটিংয়ে বিপ্লব ঘটিয়েছিল। আর হালের ম্যাক লাইন আপ কম্পিউটিংয়ের সীমাবদ্ধতাকে দূরে ঠেলে দিয়ে সবাইকেই নিজেদের জীবনের সেরা কাজ করার ক্ষমতা দিয়েছে।” --বলেন অ্যাপলের এক মুখপাত্র।