Published : 19 Jun 2025, 05:04 PM
বর্তমানে সোশাল মিডিয়া এতটাই জনপ্রিয় যে বিশ্ব জনসংখ্যার ৫৬ শতাংশেরও বেশি মানুষ কোনো না কোনোভাবে এর ব্যবহারকারী। পরিবার এবং বন্ধুদের মধ্যে এত শেয়ারিং, কথোপকথন এবং তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে সোশাল মিডিয়া আমাদের নিজেদেরই একটি ডিজিটাল সংস্করণ বলা যেতে পারে।
তাই সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলোকে আক্রমণ থেকে কীভাবে রক্ষা করতে হবে তা জানা গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথমে জেনে নেয়া যাক সোশাল মিডিয়া সম্পর্কিত এমন কিছু আক্রমণ নিয়ে যা সচরাচরই ঘটে থাকে। সবচেয়ে সাধারণ আক্রমণগুলোর মধ্যে রয়েছে ফিশিং, স্ক্যাম, পরিচয় চুরি এবং ছদ্মবেশ ধারণ থেকে শুরু করে ম্যালওয়্যার, র্যানসমওয়্যার, দুর্বল থার্ড পার্টি অ্যাপ এবং পাসওয়ার্ড চুরি।
সাইবার সিকিউরিটি বিষয়ক কোম্পানি ম্যাকাফি বলছে নিজের অ্যাকাউন্টকে এসব আক্রমণ থেকে নিরাপদে রাখতে কিছু পন্থা অবলম্বন জরুরি। এগুলো হলো-
১. একটি শক্তিশালী ও ইউনিক পাসওয়ার্ড
শক্তিশালী একটি পাসওয়ার্ডকে সোশাল মিডিয়া সম্পর্কিত আক্রমণগুলোর বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরক্ষা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে শুধু শক্তিশালী পাসওয়ার্ড থাকলেই হবে না, সেই সঙ্গে একটি পাসওয়ার্ড কেবল একটি অ্যাকাউন্টের জন্যই ব্যবহার করা উচিৎ। একই পাসওয়ার্ড একাধিক অ্যাকাউন্টে ব্যবহার করলে হ্যাকারদের জন্য তা সুবর্ণ সুযোগ বয়ে আনে। তাই এমন একটি পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করুন যা আপনার জন্য সেই পাসওয়ার্ডগুলি তৈরি করতে পারে এবং নিরাপদে তা সংরক্ষণ করতে পারে।
২. নিজেকে প্রাইভেট রাখুন
ফেইসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং অন্যান্য সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো আপনার প্রোফাইল এবং পোস্টগুলি কেবল বন্ধুদের কাছে দেখানোর সুযোগ দেয়। এই সেটিংটি নির্বাচন করার ফলে আপনি কী করছেন, কী বলছেন এবং পোস্ট করছেন তা ইন্টারনেটে সবাই দেখতে পারবে না। এটি আপনার প্রাইভেসি রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে।
৩. অপরিচিতদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন
অচেনা কারও ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণের আগে চিন্তা করে নিন। বাইরে থেকে আসা অপরিচিত ব্যক্তিরা কেবল একজন অপরিচিত ব্যক্তিই নন, তারা সাইবার অপরাধের উদ্দেশ্যে ব্যবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহ করার জন্য তৈরি একটি জাল অ্যাকাউন্ট হতে পারে, অথবা তারা মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তৈরি একটি অ্যাকাউন্টও হতে পারে। ২০২১ সালের শেষদিকে ফেইসবুক ১৮০ কোটি জাল অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে।
৪. ‘চেক ইন’-এর আগে দ্বিতীয়বার ভাবুন
আপনি বাড়িতে নেই এ তথ্যটি মানুষদের জানানোর জন্য সোশাল মিডিয়ায় একটি ‘চেক ইন’ পোস্টই যথেষ্ট। ফলে আপনার অনুপস্থিতিতে ঘটতে পারে যে কোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনা। তাই বেড়ানো কিংবা অ্যাডভেঞ্চারে যাওয়ার ছবি বরং ফিরে এসে শেয়ার করুন।
৫. ফিশিং স্ক্যাম থেকে সাবধান থাকুন
ফিশিং স্ক্যাম সম্পর্কে প্রতিনিয়ত সতর্ক থাকার পরামর্শের পরও সোশাল মিডিয়াতে অসংখ্য ফিশিংয়ের ঘটনা ঘটছে। অপরিচিত কারও দেওয়া লিংকে ক্লিক করবেন না। পরিচিতদের কাছ থেকে আসা লিংকও ফের জিজ্ঞেস করে নিশ্চিত হয়ে নিন। আপনার ইমেইল, ঠিকানা বা অন্যান্য তথ্যও অপরিচিতদের দেবেন না।
৬. সকল ধরনের স্ক্যামের দিকে নজর রাখুন
সোশাল মিডিয়ায় দ্রুত ধনী হওয়ার স্কিম, প্রেমের কুফল এবং সব ধরনের লোভনীয় বিজ্ঞাপন, পোস্ট এবং এমনকি সরাসরি বার্তার মাধ্যমে আপনাকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলা হয়।
৭. ট্যাগ করা পোস্টগুলো পর্যালোচনা করুন
ফেইসবুকের মতো কিছু প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীদের তাদের প্রোফাইলের নাম দিয়ে ট্যাগ করা পোস্টগুলি পর্যালোচনা করার অনুমতি দেয়। অন্যরা কীভাবে এবং কোথায় আপনাকে ট্যাগ করছে তার ওপর সর্বোচ্চ নজর রাখুন।
৮. নিজেকে এবং আপনার ডিভাইসকে সুরক্ষিত রাখুন
বিভিন্ন সিকিউরিটি সফটওয়্যার আপনাকে সোশাল মিডিয়াতে থাকাকালীন ক্ষতিকারক লিংকগুলোতে ক্লিক করা থেকে রক্ষা করতে পারে এবং ভাইরাস, র্যানসমওয়্যার এবং ফিশিং আক্রমণের মতো অন্যান্য হুমকি থেকেও বাঁচাতে পারে। এটি আপনার প্রাইভেসি রক্ষা করে এবং ইমেইল, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ক্রেডিট কার্ড এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য পর্যবেক্ষণ করে আপনার উপর নজর রাখতে পারে। পরিচয় চুরি আজকাল একটি সাধারণ ঘটনা, তাই সিকিউরিটি সফটওয়্যার সত্যিই আবশ্যক।