Published : 18 Jun 2025, 01:05 PM
বিদ্যুচ্চালিত গাড়ির (ইভি) ব্যাটারির চাহিদা মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত লিথিয়াম উৎপাদন করতে ইউরোপ, চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে হিমশিম খেতে হবে।
গবেষণায় এমনই তথ্য উঠে এসছে বলে খবর প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট।
সাংহাইয়ের ইস্ট চায়না নরমাল ইউনিভার্সিটি এবং সুইডেনের লুন্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকরা একটি ‘লুমিং ক্রাইসিস’ চিহ্নিত করেছেন যা ‘বৈশ্বিক জলবায়ু ও জ্বালানি লক্ষ্যমাত্রা’ পূরণে বিলম্ব ঘটাতে পারে।
গবেষণায় সতর্ক করা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে এই এলাকাগুলোতে অভ্যন্তরীণ লিথিয়াম উৎপাদন দশগুণ বাড়ার সম্ভাবনা থাকলেও, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি বা আমদানি বৃদ্ধি না হলে দ্রুত বাড়ন্ত এ চাহিদা মেটাতে তা যথেষ্ট হবে না।
লিথিয়াম সাধারণত খনিতে পাওয়া যায় যা বেশিরভাগ বিদ্যুচ্চালিত গাড়ির ব্যাটারির জন্য অপরিহার্য। সড়ক পরিবহনে কার্বন নিঃসরণ কমাতে বিদ্যুচ্চালিত গাড়িকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। যার ফলে ইউরোপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন জুড়ে বিদ্যুচ্চালিত চাহিদা বাড়ছে।
এ বছরের প্রথম পাঁচ মাসে, ব্যাটারি চালিত বৈদ্যুতিক গাড়ি বাজারের ২০ দশমিক নয় শতাংশ দখল করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের ১৬ দশমিক এক শতাংশের তুলনায় বেশি। ২০৩০ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে পেট্রোল এবং ডিজেল চালিত গাড়ি বিক্রি নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ইউরোপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন যেখানে বিদ্যুচ্চালিত গাড়ির ৮০ শতাংশই বিক্রি হয়, তারা ভবিষ্যতের লিথিয়াম উৎপাদনের মাত্রা এবং বেশিরভাগ পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় পরিমাণের চাহিদা পূরণ করতে পারবে না। ফলে তাদেরকে অন্য দেশ থেকে আমদানি করতে হবে।
গবেষকরা অনুমান করেছেন ২০৩০ সালের মধ্যে ইউরোপে সাত লাখ ৯২ হাজার মেট্রিক টন লিথিয়াম প্রয়োজন হতে পারে। চলমান এবং প্রস্তাবিত লিথিয়াম খনির প্রকল্পের উপর ভিত্তি করে, সেই সময়ে ইউরোপে উৎপাদন তিন লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টনে পৌঁছাতে পারে।
এ সংকট থেকে বাঁচার জন্য গবেষণায় ব্যক্তিগত বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি উৎপাদন থেকে মনোযোগ সরিয়ে গণপরিবহন ব্যবহারের প্রচারের দিকে মনোযোগ দেওয়া এবং কম বা একেবারেই লিথিয়াম ব্যবহার না করে এমন ব্যাটারি প্রযুক্তি গ্রহণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাজ্য বর্তমানে চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলো থেকে লিথিয়াম আমদানি করে, তবে বেশ কয়েকটি কোম্পানি কর্নওয়াল এবং ইংল্যান্ডের উত্তর-পূর্বে তা উত্তোলনের পরিকল্পনা করছে।
পর্তুগালই একমাত্র ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য যারা খনি থেকে লিথিয়াম উত্তোলন ও প্রক্রিয়াজাত করে।
সেল রিপোর্টস সাসটেইনেবিলিটি জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাটির লেখক কিফান জিয়া বলেছেন, “শিল্প বিপ্লবের সময় পেট্রোলের মতোই আজ লিথিয়াম গুরুত্বপূর্ণ। যদিও বিশ্বজুড়ে লিথিয়ামের মজুদ যথেষ্ট, তবু বিভিন্ন দেশে তা অসমভাবে বিতরণ করা হয়।”
“খনি সম্প্রসারণ, সরবরাহকারীদের বৈচিত্র্য আনা এবং চাহিদা কীভাবে পরিচালনা করা যায় তা নিয়ে নতুন করে না ভাবলে বিশ্ব জলবায়ু এবং শক্তি চাহিদার লক্ষ্য পূরণে ঝুঁকিতে পড়বে।
নিউ অটোমোটিভের প্রতিষ্ঠাতা বেন নেলমেস বলেন, “লিথিয়াম অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হবে।”
‘‘তাই ইউরোপীয় নীতিনির্ধারকদের জন্য বৈদ্যুতিক গাড়ির উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য এবং খনির প্রকল্পের জন্য সহায়ক পরিবেশ বজায় রেখে বিনিয়োগকারীদের কাছে ইতিবাচক সংকেত পাঠানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
সংস্থাটির আলাদা কয়েকটি বিশ্লেষণে অনুমান করা হয়েছে, আগামী পাঁচ বছরে বিদ্যুচ্চালিত গাড়ির ব্যাটারি উৎপাদন এবং সরবরাহের মাধ্যমে ইউরোপে আড়াই লাখ কর্মসংস্থান তৈরি হতে পারে।