Published : 26 May 2025, 02:50 PM
আজ থেকে ৩০ বছর আগে প্রোগ্রামিং ভাষা প্রথমবার সবার জন্য প্রকাশ করে জাভা। এর মাধ্যমে বিশ্ব প্রথম পরিচিত হয় “রাইট ওয়ান, রান অ্যানিহোয়্যার” অর্থাৎ একবার কোড লিখলেই সব জায়গায় চলবে– এমন ধারণার সঙ্গে। ডেভেলপারদের জন্য এটি ছিল সি ও সি++ এর চেয়ে সহজ ও ব্যবহারবান্ধব একটি ভাষা।
প্রথমে জাভার নাম ছিল ‘ওক’, ১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে জেমস গসলিং এটি তৈরি করেছিলেন সান মাইক্রোসিস্টেমস-এ। শুরুতে ডিজিটাল ডিভাইসের জন্য বানানো হলেও পরে এর লক্ষ্য বদলে যায় নতুন এক প্ল্যাটফর্মের দিকে, যার নাম ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব।
জাভা ভাষাটি অনেকটা সি ও সি++ এর মতো হলেও এটি সাধারণত বাইটকোডে কম্পাইল হয়, যা তত্ত্ব অনুযায়ী যে কোনও ‘জাভা ভার্চুয়াল মেশিন’ বা জেভিএম-এ চলতে পারে।
এর মূল উদ্দেশ্য ছিল, “রাইট ওয়ান, রান অ্যানিহোয়্যার” বা ডব্লিউওআরএ অর্থাৎ একবার কোড লিখে সব জায়গায় চালানো। তবে বাস্তবে বিভিন্ন জেভিএম-এর সূক্ষ্ম পার্থক্যের কারণে এই স্বপ্ন সবসময় ঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। কারণ একটার পর একটা অপ্রত্যাশিত জেভিএম সমস্যায় অ্যাপ কখন, কীভাবে আচরণ করবে তা বোঝা কঠিন হয়ে যেত বলে প্রতিবেদনে লিখেছে প্রযুক্তি বিষয়ক সাইট রেজিস্টার।
তবে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই জাভা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় এবং দ্রুতই অনেক সফটওয়্যার কোম্পানির জন্য এটি মূল ভিত্তি হয়ে ওঠে। জবাবে, মাইক্রোসফট তাদের নিজস্ব সংস্করণ ‘ভিজুয়াল জে++’ চালু করে, যা জাভার ভাষাগত নিয়ম মেনে চললেও সান মাইক্রোসিস্টেমস-এর নির্ধারিত পরীক্ষায় পাস করেনি।
এ কারণে ১৯৯৯ সালে মাইক্রোসফটের বিরুদ্ধে মামলা করে সান মাইক্রোসিস্টেমস। এরপর ২০০০ সালে ‘ভিজুয়াল স্টুডিও’ থেকে জে++ সরিয়ে ফেলা হয় ও ধীরে ধীরে সেটিকে পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় মাইক্রোসফট।
জাভা প্রকাশের পর থেকেই এর জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়তে থাকে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর জনপ্রিয়তা কিছুটা কমেছে, কারণ ডেভেলপাররা বিকল্প ভাষার দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছেন। এরপরও ২০২৪ সালের ‘স্ট্যাক ওভারফ্লো সার্ভে’-তে জাভা ছিল শীর্ষ ১০ ভাষার মধ্যে একটি এবং সি#, সি++ ও সি-এর চেয়ে এগিয়ে।
টিআইওবিই সূচকেও জাভার জনপ্রিয়তা কমেছে, যেখানে এক সময় এটি শীর্ষে ছিল, সেখানে এখন চার নম্বরে অবস্থানে রয়েছে এটি। বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় ভাষা হিসেবে রয়েছে পাইথন। তবে ২০১৫ সালে জাভাকে ‘বছরের সেরা ভাষা’ হিসেবে ঘোষণা করেছিল টিআইওবিই।
‘সোনাটাইপ’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সিটিও ব্রায়ান ফক্স বলেছেন, “জাভা নানা ট্রেন্ড, প্রতিদ্বন্দ্বী ভাষা আর পরিবর্তনশীল প্রযুক্তি ধারার মধ্যেও টিকে আছে। অ্যাপলেট আর সার্ভলেট থেকে শুরু করে আজকের মাইক্রোসার্ভিস ও ক্লাউডনেটিভ আর্কিটেকচার পর্যন্ত জাভা নিজেকে বদলেছে কিন্তু পরিচিতভাবেই থেকেছে। এটি এমন একটি পথ তৈরি করেছে, যার মাধ্যমে ওপেন সোর্স প্রযুক্তি প্রথমবারের মতো বড় প্রতিষ্ঠানে প্রবেশের পথ তৈরি করতে পেরেছে।
“বলা যায়, একবার জাভাকে গ্রহণ করার পর কোনো কোম্পানি আর পেছনে ফিরে তাকায়নি।”
বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যে পরিমাণে জাভা কোড ব্যবহৃত হচ্ছে তা প্রমাণ করে, প্রোগ্রামিংয়ের ট্রেন্ড আসা-যাওয়া করলেও জাভার চাহিদা এখনও রয়ে গিয়েছে।
জাভার ব্যাপক ব্যবহার, দীর্ঘস্থায়িত্ব ও অনেক ব্যাক-অফিস সিস্টেমে এর উপস্থিতি দেখে কিছু ইঞ্জিনিয়ার হয়তো কোবোল-এর কথা ভাবতে পারেন। তবে ৩০ বছর আগে সে বাস্তবতায় জাভা ছিল তার সমসাময়িক বিভিন্ন ভাষার মধ্যে একদম আধুনিক ও নতুন একটি হাওয়ার মতো। পোর্টেবল হওয়ার কারণে অনেকেই ওইসময় এর প্রতি ঝুঁকেছিলেন।
তবে এই ৩০ বছরের যাত্রা সবসময় সহজ ছিল না।
ফক্স বলেছেন, “৩০ বছর পর জাভার গল্প কেবল কোডের বিষয়ে নয়, বরং এটা এমন এক বিশ্বাসের গল্প, যে বিশ্বাস জড়িয়েছে দশকের পর দশক ধরে নির্ভরযোগ্যতা, যত্ন ও সম্মিলিত মানদণ্ডের মাধ্যমে। তবে সেই বিশ্বাস যে অটুট থাকবে, এর কোনও নিশ্চয়তা নেই।”
জাভা আসলে কার?
২০১০ সালে সান মাইক্রোসিস্টেমস’কে কিনে নেয় ওরাকল। সান মাইক্রোসিস্টেমস-এর বেশিরভাগ জেভিএম ওপেন সোর্স করা হলেও এটি কেনার পর আগের মতো ফ্রি না রেখে লাইসেন্স ফি নেওয়া শুরু করে ওরাকল।
২০২৩ সালে নিজেদের সাবস্ক্রিপশন মডেলের লাইসেন্স শর্ত পরিবর্তনও করে ওরাকল, যা বিভিন্ন ব্যবসার জন্য হাজার হাজার ডলার খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে। এ বছরের শুরুতে এক গবেষণায় উঠে এসেছে, প্রতি দশ জন জাভা ব্যবহারকারীর মধ্যে কেবল একজনই ওরাকলের সঙ্গে লেগে থাকতে চান।
তবে জাভা ব্যবহারের পরিসর এতই বড় যে, জাভার বিকল্প সংস্করণও সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে ওরাকল। আর এ কারণে ওরাকলের কথিত ‘আগ্রাসী লাইসেন্সিং নীতি’র পরও জাভার জনপ্রিয়তায় তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। এটি এখনও অনেক ডেভেলপারের কাছে প্রিয় ও কোম্পানির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
৩০ বছরের পথচলায় জাভা নতুন ও উদীয়মান ভাষা থেকে হয়ে উঠেছে এমন একটি টুল, যার ওপর নির্ভরশীল এই সময়ের অনেক কোম্পানি। হয়তো বর্তমানের এআইনির্ভর বিভিন্ন অ্যাপের মতো ঝকঝকে নতুন ফিচার জাভার নেই তবে এখনও আধুনিক সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের মজবুত ভিত্তি হিসেবেই রয়ে গিয়েছে এটি।
জাভার সমৃদ্ধ ইকোসিস্টেম ও বিস্তৃত ডেভেলপার কমিউনিটি থেকে ইঙ্গিত মেলে, জাভা এখনও কেবল প্রাসঙ্গিকই নয়, বরং চতুর্থ দশকে পা রাখার পরও এটি শক্তভাবেই এগিয়ে চলেছে।