Published : 07 Jun 2025, 04:35 PM
অস্ট্রেলিয়ায় প্রস্তাবিত নতুন আইনে অ্যাপলের অ্যাপ স্টোর ছাড়াও আইফোনের অ্যাপ ডাউনলোড করা যাবে।
অস্ট্রেলিয়ায় ফেডারেল সরকারের প্রস্তাবনা অনুসারে, খুব শিগগিরই অ্যাপল অ্যাপ স্টোরের বাইরে থেকেও অ্যাপ ডাউনলোড করতে পারবেন ব্যবহারকারীরা এবং এর মাধ্যমে আইফোনে কেনাকাটায় অতিরিক্ত চার্জও এড়ানো যাবে।
তবে মার্কিন আইফোন নির্মাতা অ্যাপল সতর্ক করে বলেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো এ ধরনের প্রতিযোগিতামূলক নিয়ম চালু করলে তা তাদের গ্রাহকদের জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি ও বাজার প্রতিযোগিতাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ান ব্যবহারকারীরা আইফোনের অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করে নেটফ্লিক্স বা স্পটিফাইয়ের সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন না। অন্যদিকে, অ্যাপ স্টোরের মাধ্যমে ইউটিউব সাবস্ক্রিপশনে বাড়তি চার্জ নেয় গুগল এবং অ্যামাজন তাদের কিন্ডল অ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের ই-বুক কিনতে দেয় না।
গার্ডিয়ান লিখেছে, এর কারণ হচ্ছে অ্যাপলে ইন অ্যাপে যেসব কেনাকাটা হয় তার ওপর সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন নেয় কোম্পানিটি, বিশেষ করে যেসব অ্যাপ বেশি আয় করে তাদের কাছ থেকে।
অ্যাপলের নিয়ম অনুসারে, অন্য কোথায় গেলে কম খরচে অ্যাপ কিনতে পারবেন সে তথ্যও ব্যবহারকারীদের দিতে পারে না এসব কোম্পানি।
গত বছরের নভেম্বরে প্রকাশিত এক নীতিপত্রে অস্ট্রেলিয়ার সরকার বলেছে, অ্যাপল অ্যাপ স্টোরের মতো বড় বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানির ওপর আলাদা নজরদারি দরকার। এজন্য এগুলোকে “নির্ধারিত ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম” হিসেবে ঘোষণা করতে চায় তারা, যেন তাদের জন্য আলাদা নিয়ম-কানুন করা যায়।
এভাবে নির্ধারণ করলে এসব ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে এমন কিছু নিয়ম মানতে বাধ্য করা যাবে। দেশটির সরকার বলছে, এর মাধ্যমে একচেটিয়া ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারবে না অ্যাপল।
নীতিপত্রে বলা হয়েছে, অ্যাপল যদি তাদের অ্যাপ স্টোরকে “নির্ধারিত প্ল্যাটফর্ম” হিসেবে ঘোষণা করে তাহলে অ্যাপলের ইন-অ্যাপ পেমেন্টের বাধ্যবাধকতার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবে তারা। একই সঙ্গে, ব্যবহারকারীদের অ্যাপ স্টোরের বাইরের জায়গা থেকে অ্যাপ ডাউনলোড বা সাইডলোডিংয়ের সুযোগও বাধ্যতামূলক করবে দেশটি।
এ নীতিপত্রের জবাবে অ্যাপল বলেছে, অস্ট্রেলিয়ার সরকার যেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘ডিজিটাল মার্কেটস অ্যাক্ট’কে এই পরিকল্পনার উদাহরণ হিসাবে ব্যবহার না করে।
অ্যাপল বলেছে, “ইউরোপের ডিজিটাল মার্কেটস অ্যাক্ট অ্যাপলের ইকোসিস্টেমে এমন পরিবর্তন আনবে, যা ব্যবহারকারীদের জন্য প্রাইভেসি ও নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়বে। এতে ম্যালওয়্যার, প্রতারণা ও স্ক্যামের সুযোগ বাড়তে পারে, অবৈধ ও ক্ষতিকর কনটেন্ট ছড়াতে পারে এবং আরও নানা ধরনের হুমকি তৈরি হতে পারে।”
অ্যাপল যুক্তি দিয়েছে, ৩০ শতাংশ কমিশন কেবল সবচেয়ে বেশি আয় করা অ্যাপ থেকেই নেয় তারা। মোট ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলারের বিক্রি ও বিলিংয়ের মধ্যে ৯০ শতাংশ অর্থ এমন অ্যাপ থেকে এসেছে, যেখানে অ্যাপল কোনো কমিশন নেয়নি। যারা কমিশন দিয়েছে, তাদের বেশিরভাগকে ১৫ শতাংশ হারে চার্জ করেছে কোম্পানিটি।
সাইডলোডিং বা অ্যাপ স্টোরের বাইরে থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করা নিয়েও সতর্ক করেছে অ্যাপল। কোম্পানিটি বলেছে, এর ফলে ব্যবহারকারীরা যেসব অ্যাপ ইনস্টল করবে তা তারা যাচাই করতে পারবে না, যা তাদের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করবে।
অ্যাপল আরও বলেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নে সাইডলোডিংয়ের কারণে পর্নোগ্রাফিক অ্যাপ ও কপিরাইট লঙ্ঘনের সুযোগ দেয় এমন অ্যাপ ইনস্টল করা সম্ভব হয়ে গিয়েছে।
অনেকদিন ধরেই ম্যাকবুক ও অন্যান্য কম্পিউটার ডিভাইসে এ পদ্ধতিতে অ্যাপ ডাউনলোড করতে পারছেন ব্যবহারকারীরা। একইভাবে, অ্যান্ড্রয়েড প্ল্যাটফর্মেও গুগল প্লে স্টোরের বাইরে থেকে অ্যাপ ডাউনলোড ও থার্ড পার্টি থেকে কেনাকাটা করার সুযোগও রয়েছে।
অ্যাপল আরও বলেছে, ‘ডিজিটাল মার্কেটস অ্যাক্ট’-এর কারণে নিজেদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ফিচার চালু করতে দেরি করেছে তারা।
টেলসাইটের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও প্রধান বিশ্লেষক ফোয়াদ ফাদাঘি বলেছেন, অ্যাপলের প্ল্যাটফর্ম খুলে দেওয়া কিছু ব্যবহারকারীর জন্য সুবিধাজনক হতে পারে। তবে এতে বেশিরভাগ মানুষের আইফোন ব্যবহারের ধরনে বড় কোনও পরিবর্তন আসবে না।
“এক্ষেত্রে যারা অ্যাপল ডিভাইসের নিরাপত্তা ও প্রাইভেসি নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন তারা ডিফল্ট হিসেবে আইফোনের ‘লকড-ডাউন মোড’ বেছে নিতে পারেন।”