Published : 30 May 2025, 03:33 PM
পৃথিবীপৃষ্ঠের গভীরে থাকা কার্বন বিভিন্ন মহাদেশের গঠন ও হীরা তৈরিতে ভূমিকা রাখে বলে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।
চীনের ‘গুয়াংজু ইনস্টিটিউট অফ জিওকেমিস্ট্রি’র আন্তর্জাতিক গবেষকদের নেতৃত্বে করা এক গবেষণায় উঠে এসেছে, বিভিন্ন মহাদেশ গঠনে ও হীরা তৈরিতে বিস্ময়করভাবে ভূমিকা রেখে চলেছে পৃথিবীর গভীরে থাকা কার্বন।
গবেষণায় কীভাবে কার্বন পৃথিবীর অভ্যন্তরের ম্যান্টলের ভেতর দিয়ে চলাচল করে ও এই চলাচল কীভাবে প্রাচীন বিভিন্ন ভূমিখণ্ডের স্থিতিশীলতা ও মূল্যবান রত্ন যেমন হীরা তৈরিতে প্রভাব ফেলে তা খতিয়ে দেখেছেন গবেষকরা।
পৃথিবীর ওপরের দিকের কার্বন ধীরে ধীরে ভেঙে ভূপৃষ্ঠের গভীরের দিকে চলে যায়। এ প্রক্রিয়াকে বলে সাবডাকশন। কিন্তু এ সময় কী ঘটে?
আন্তর্জাতিক সহযোগীদের সঙ্গে মিলে কাজ করা গবেষণায় গবেষণা দলটি বলছে, সাবডাকশন এমন এক প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, যেখানে পৃথিবীর একটি বড় প্লেট বা ভূত্বকের অংশ আরেকটি প্লেটের নিচে চলে যায়। এ সময় পৃথিবীর উপরিভাগের বিভিন্ন উপাদান, যেমন– পাথরের মধ্যে থাকা কার্বন যাকে কার্বনেট বলা হচ্ছে তা মাটির গভীরে, অর্থাৎ পৃথিবীর ভেতরের স্তর ম্যান্টলের দিকে যায়। এভাবে পৃথিবীর উপরের দিকের কার্বনও ধীরে ধীরে ভেতরে পৌঁছায়।
বিজ্ঞানীরা বুঝতে চেয়েছেন এ কার্বন যখন পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে ২৫০-৬৬০ কিলোমিটার গভীরে পৌঁছায় তখন এর সঙ্গে ঠিক কী ঘটে। এটা বুঝতে উচ্চ চাপের পরীক্ষা চালিয়েছেন তারা, যাতে পৃথিবীর ম্যান্টলের অত্যন্ত চাপওয়ালা পরিবেশ কৃত্রিমভাবে তৈরি করা যায়।
গবেষণায় উঠে এসেছে, কীভাবে কার্বন সমৃদ্ধ গলিত পাথর যেগুলোকে কার্বোনাটাইট মল্ট বলা হচ্ছে তা এই চাপ ও তাপমাত্রায় লোহাওয়ালা ম্যান্টলের পাথরের সঙ্গে মেশে বা সাড়া দেয়।
গবেষকরা বলছেন, ম্যান্টলের তাপমাত্রা অনুযায়ী দুটি সম্পূর্ণ আলাদা ফলাফল মিলেছে এ গবেষণায়।
পৃথিবীর ভেতরের ঠাণ্ডা ম্যান্টল অঞ্চলে বা ‘ননপ্লুম’ পরিবেশে কার্বোনাটাইটের বিভিন্ন মল্ট ধীরে ধীরে রাসায়নিক পরিবর্তনের মাধ্যমে কমে যায়। আর এই প্রক্রিয়ায় তৈরি হয় হীরা। এসব হীরা খুবই স্থিতিশীল হয় ও ভূত্বকের গভীরে আটকে থাকে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
গবেষকরা বলছেন, আশপাশের পাথরকে আরও মজবুত বা শক্ত করে তোলে এসব হীরা, যা প্রাচীন মহাদেশের মূল অংশ যেগুলোকে ক্রাটন বলা হয় তা দীর্ঘদিন ধরে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে।
কিন্তু ম্যান্টলের গরম বিভিন্ন অংশে, যা সাধারণত উষ্ণতার উর্ধ্বমুখী প্রবাহ বা প্লুমের উপরে থাকে, যেখানে এই একই কার্বোনাটাইট মল্ট আলাদাভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়।
ওই অঞ্চলে হীরা তৈরির বদলে এসব গলিত পদার্থ এর আশপাশের ম্যান্টলকে অক্সিডাইজ বা জারিত করে। এ প্রক্রিয়া পাথরের গঠনকে দুর্বল করে দেয়, ফলে পাথর ভেঙে পড়া ও এর নিচে ডুবে যাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এ প্রক্রিয়াটি ‘লিথোস্ফিয়ার ডিলামিনেশন’ নামে পরিচিত। এসব ঘটনা পৃথিবীর পৃষ্ঠে পরিবর্তন এনে দিতে পারে, যেমন ভূমির উত্থান ও আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপ।
বিজ্ঞানীরা তাদের ল্যাব পরীক্ষায় তৈরি বিভিন্ন খনিজের সঙ্গে আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার প্রাচীন ক্রাটনের হীরার ভেতরে পাওয়া ছোট ছোট অন্তর্ভুক্তির তুলনা করেছেন।
তারা বলছেন, এসব যৌগের মধ্যে বিভিন্ন রসায়নিক চিহ্ন মিলে যায়, যার থেকে ইঙ্গিত মেলে, ল্যাব পরীক্ষায় যেসব প্রক্রিয়া ঘটচ্ছে ঠিক একই প্রক্রিয়া পৃথিবী পৃষ্ঠের গভীরেও ঘটে চলেছে।
গবেষণার প্রধান অধ্যাপক ইউ ওয়াং বলেছেন, এ গবেষণাটি আমাদের বুঝতে সাহায্য করেছে কীভাবে কার্বন পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে ভেতরে চলাচল করে ও কীভাবে এটি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মহাদেশ গঠনে প্রভাব ফেলছে।
গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’-এ।