Published : 08 Jun 2022, 02:42 PM
এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে ২০২৪ সালের মধ্যে অন্তত ইউরোপের জন্য হলেও আইফোন থেকে লাইটনিং পোর্ট বাদ দিতে হবে অ্যাপলকে।
বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সমঝোতায় আসতে না পারায় এ রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ গ্রাহকদের জীবন আরও সহজ করবে ও তাদের আর্থিক খরচও কমাবে বলে জানিয়েছে কমিশন।
সকল মডেলের মোবাইল ফোনে একই ধরনের চার্জিং পোর্ট আনতে এক দশকের বেশি সময় ধরে চাপ দিয়ে যাচ্ছিল ব্রাসেলস। কারণ, আইফোন ও অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা তাদের ডিভাইস পাল্টানোর সময় চার্জারও পাল্টাতে হয়।
আইফোন সাধারণত একটি ‘লাইটনিং কেবল’-এর মাধ্যমে চার্জ দেওয়া হলেও অ্যান্ড্রয়েড ভিত্তিক ডিভাইসের ক্ষেত্রে এখন ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় ‘ইউএসবি-সি কানেক্টর’।
এই প্রসঙ্গে রয়টার্স অ্যাপলের মন্তব্য জানতে চাইলে তাৎক্ষণিক কোনো উত্তর মেলেনি। যদিও প্রতিষ্ঠানটি আগেই সতর্ক করেছিল, এই প্রস্তাবনা তাদের উদ্ভাবনে ব্যাঘাত ঘটাবে এবং ইলেকট্রনিক বর্জ্যের স্তুপ তৈরি করবে।
এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার পরও নিউ ইয়র্কে অ্যাপলের শেয়ারমূল্য বেড়েছে শূন্য দশমিক নয় শতাংশ।
এই পদক্ষেপের কারণে ২০২৪ সালে অ্যাপলের বিক্রি বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ তখন প্রতিষ্ঠানটির লাইটনিং পোর্টের ডিভাইসের বদলে নতুন গ্যাজেট কিনতে আগ্রহী হবেন ইউরোপীয় গ্রাহকরা।
এই সিদ্ধান্ত গ্রাহকরদের শীঘ্রই নতুন ফোন কিনতে উদ্বুদ্ধ করবে বলে জানিয়েছেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘সিএফআরএ’-এর বিশ্লেষক অ্যাঞ্জেলো জিনো।
“বিদ্যমান গ্রাহকরা এখনও লাইটনিং কেবল ব্যবহার করতে পারেন, তবে তৃতীয় পক্ষের প্ল্যাটফর্মগুলোতে এসব পুরোনো পণ্যের বিক্রি কমতে পারে।” --বলেছেন জিনো।
অ্যাপল ইতোমধ্যে ইউএসবি-সি পোর্টের একটি আইফোন নিয়ে কাজ করছে, যেটি আগামী বছর নাগাদ আসতে পারে বলে গত মাসের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছিল ব্লুমবার্গ।
অ্যাপল যখন নতুন আইফোন আনে, তখন পুরোনো ফোনে সাধারণত মূল্যছাড় দেওয়া হয়। ফলে, গ্রাহকদের একটি বড় অংশ তুলনামূলক কম দামের ডিভাইস কেনার আগ্রহ দেখান।
ইইউ যদি পুরোনো মডেল বিক্রি নিষিদ্ধ করে, তাহলে অনেক গ্রাহকের মন খারাপ হওয়ার এবং গ্রাহকের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সরকারের এই সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার আশংকা থাকার কথা জানিয়েছেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘আইডিসি’র গবেষণা ব্যবস্থাপক জিতেশ আবরানি।
২০১৮ সালে বিক্রি হওয়া মোবাইল চার্জারের অর্ধেকই ছিল ‘ইউএসবি মাইক্রো-বি’ কানেকটর। এ ছাড়াও, ২৯ শতাংশ ‘ইউএসবি-সি’ এবং ২১ শতাংশ ‘লাইটনিং কানেকটর’ বিক্রি হওয়ার কথা উঠে এসেছে ২০১৯ সালে কমিশনের এক গবেষণায়।
“২০২৪ সালের শরতের মধ্যে ইইউ’র সকল মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট এবং ক্যামেরার সাধারণ চার্জিং পোর্ট হবে ‘ইউএসবি টাইপ-সি,” --এক বিবৃতিতে বলেছে ‘ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট’।
এই চুক্তি গ্রাহকদের প্রায় ২৫ কোটি ইউরো (২৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার) বাঁচিয়ে দেবে বলে জানিয়েছেন ইউরোপিয়ান কমিশনের অভ্যন্তরীণ বাজার বিষয়ক প্রধান থিয়েরি ব্রেটন।
“এটি ওয়্যারলেস চার্জিংয়ের মতো নতুন প্রযুক্তি আনতে সাহায্য করবে এবং উদ্ভাবনকে বাজার বিভাজন ও গ্রাহকের অসুবিধার কারণ হতে দেবে না।” --বলেছেন তিনি।
এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার ৪০ মাসের মধ্যে ল্যাপটপের ক্ষেত্রেও আইনটি প্রযোজ্য হবে। এ ছাড়া, ভবিষ্যতে ইইউ কার্যনির্বাহীর হাতে ওয়্যারলেস চার্জিং ব্যবস্থা সমন্বয়ের ক্ষমতা থাকার কথাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে রয়টার্স।
চার্জিং পোর্ট নিয়ে ইইউ’র নতুন এই চুক্তিতে ই-রিডার, ইয়ারবাডস এবং প্রযুক্তির কথাও উল্লেখ রয়েছে অর্থাৎ এটি স্যামসাং, হুয়াওয়ে এবং অন্যান্য ডিভাইস নির্মাতাদের উপরও প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
“আমরা গর্বিত যে ল্যাপটপ, ই-রিডার, ইয়ারবাডস, কিবোর্ড, কম্পিউটার মাউস এবং পোর্টেবল ন্যাভিগেশন ডিভাইস এর মধ্যে রয়েছে,” --বলেছেন আইন প্রণেতা অ্যালেক্স অ্যাগিয়াস সালিবা, যিনি ‘ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে’ বিতর্কটি পরিচালনা করেছেন।