Published : 09 May 2025, 02:46 PM
যুক্তরাজ্য সরকারের নতুন অনলাইন সুরক্ষা নীতিমালার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে উইকিপিডিয়া।
তাদের দাবি, যুক্তরাজ্যের ‘অনলাইন সেইফটি অ্যাক্ট ২০২৩’ প্লাটফর্মটির স্বেচ্ছাসেবী সম্পাদকদের ঝুঁকিতে ও সাইটে তাদের সম্পাদনার সক্ষমতাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
অনলাইন বিশ্বকোষের অলাভজনক মূল সংগঠন ‘উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন’ এ অনলাইন আইনের বিচারিক পর্যালোচনা চাইছে, কারণ, নতুন আইন উইকিপিডিয়াকে এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে।
উইকিমিডিয়ার প্রধান আইনজীবী ফিল ব্র্যাডলি-স্মিগ বলেছেন, “এটা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, এখন উইকিপিডিয়াকে যুক্তরাজ্যের ত্রুটিপূর্ণ এই আইনের কারণে তার স্বেচ্ছাসেবকদের প্রাইভেসি ও সুরক্ষা নিশ্চিতে লড়াই করতে হবে।”
যুক্তরাজ্য সরকার বিবিসিকে বলেছে, এ আইন প্রয়োগে অঙ্গীকারবদ্ধ তারা। তবে, বিষয়টি যেহেতু এখন আদালতে রয়েছে, তাই এ নিয়ে তারা এখনই মন্তব্য করবেন না।
বিবিসি লিখেছে, একটি ছোট অংশ নিয়ে হলেও নতুন অনলাইন সুরক্ষা আইনের বিরুদ্ধে আনা এটিই প্রথম পর্যালোচনার দাবি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি সম্ভবত এখানেই শেষ নাও হতে পারে।
‘লিংকলেটারস’ নামের এক আইনী প্রতিষ্ঠানের অংশীদার বেং প্যাকার বলেছেন, “অনলাইন সুরক্ষা আইনের পরিসর অনেক বড় ও অত্যন্ত জটিল।”
তিনি বলেছেন, “এই আইন অবশ্যই যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও অন্যান্য মানবাধিকারের ওপর প্রভাব ফেলবে। এ আইনের যত বেশি অংশ কার্যকর হবে তত বেশি আইনি চ্যালেঞ্জ আসতে পারে বলে আশা করতে পারি আমরা”।
এরইমধ্যে এ আইনটি যেসব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে তা আরও বাড়িয়ে তুলবে। যেমন, কেউ বলছে, কঠিন নিয়মের কারণে ছোট আকারের বিভিন্ন ওয়েবসাইট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, আবার কেউ বলছে, এই আইন ও এর প্রয়োগ খুবই দুর্বল এবং তা সঠিকভাবে কাজ করছে না।
যুক্তরাজ্যের ‘অনলাইন সেইফটি অ্যাক্ট’ বা ওএসএ-এর জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা অফকমকে বিভিন্ন বিষয়ের ভিত্তিতে নানা প্ল্যাটফর্মকে শ্রেণিবদ্ধ করতে হবে। যেমন– তাদের ব্যবহারকারীর সংখ্যা কত এবং তারা কী কী ফিচার বা সুবিধা দেয় এমন সব বিষয়।
যেসব প্ল্যাটফর্ম ‘ক্যাটেগরি ১’ বা সর্বোচ্চ স্তরে স্থান পাবে, ব্যবহারকারীদের নিরাপদ রাখতে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হবে তাদের।
খুব সহজ ভাষায় বললে, যেসব সাইটে লাখ লাখ ব্রিটিশ ব্যবহারকারী একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ ও কনটেন্ট শেয়ার করতে পারেন ও যেখানে কনটেন্ট রেকমেন্ড করার ব্যবস্থা আছে, সেগুলোরই সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা রয়েছে ‘ক্যাটেগরি ১’-এর মধ্যে পড়ার।
বিবিসি লিখেছে, এসব নিয়ম মূলত এমন পরিষেবার জন্য বানানো হয়েছে যেখানে যুক্তরাজ্যের ব্যবহারকারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর কনটেন্টের মুখে পড়তে পারেন। তবে উইকিপিডিয়ার আশঙ্কা, এসব নিয়ম এতটাই অস্পষ্টভাবে লেখা যে, তাদের ‘ক্যাটেগরি ১’-এ পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন বলছে, এমন হলে যেসব স্বেচ্ছাসেবক উইকিপিডিয়ার জন্য লেখেন ও সম্পাদনা করেন তাদের পরিণাম গুরুতর হতে পারে। এমনটি কেবল যুক্তরাজ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং বিশ্বের অন্যান্য জায়গাতেও এর প্রভাব পড়বে।
ফাউন্ডেশন বলছে, এমন কিছু অতিরিক্ত দায়িত্ব থাকতে পারে, যার ফলে সাইটটিকে স্বেচ্ছাসেবকদের পরিচয় যাচাই করতে হবে। ফলে ডেটা চুরি, ঝামেলার মামলা, এমনকি স্বৈরাচারী সরকারের হাতে বন্দী হওয়ার ঝুঁকিতে পড়তে পারেন সাইটটির স্বেচ্ছাসেবকরা।
উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট রেবেকা ম্যাককিনন বলেছেন, “আমাদের স্বেচ্ছাসেবকদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে বাধ্য করা হবে, যা তাদের প্রাইভেসি ও নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলবে। ফলে নিজেদের নিরাপত্তাহীন মনে করবেন স্বেচ্ছাসেবকরা।
“বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় আমরা দেখেছি মানুষ যখন উইকিপিডিয়ায় কাজ করতে নিরাপদ মনে করেন না, তখন তারা কাজ করেন না, বিশেষ করে বিতর্কিত বিষয়ে। আর এর ফলে এই বিশ্বকোষের মান ও ব্যবহারযোগ্যতা কমে যায়।”