Published : 18 May 2025, 06:05 PM
জনপ্রিয় শীর্ষ ইউটিউবার মিস্টারবিস্টের একটি ভিডিওর প্রযোজকদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ চেয়েছে মেক্সিকো। মার্কিন এই ইউটিউবার তার ভিডিওতে মেক্সিকোর পুরানো বিভিন্ন পিরামিডকে বাণিজ্যিক লাভের জন্য ব্যবহার করেছেন– এমন অভিযোগ তুলেছে দেশটি।
‘দুই হাজার বছর বয়সী প্রাচীন মন্দির আমি ঘুরে দেখেছি’ - এমন শিরোনামের একটি ভিডিওটিতে ২৭ বছর বয়সী ইনফ্লুয়েন্সার মিস্টারবিস্টকে, যার আসল নাম জিমি ডনাল্ডসন, তার দলবলসহ প্রাচীন মায়া সভ্যতার বিভিন্ন শহর অনুমতি নিয়ে ঘুরতে দেখা গিয়েছে।
তবে ‘ফুল সার্কল মিডিয়া’র তৈরি করা ভিডিওটির এক অংশে একটি চকলেট পণ্যকে ‘মায়া মিষ্টান্ন’ হিসেবে প্রচার করতে ও তা দর্শকদের কিনতে উৎসাহ দিয়েছেন মিস্টারবিস্ট।
কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা ঐ স্থানে ভিডিও ধারণের অনুমতি থাকলেও সেই ভিডিও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের অনুমতি দেয়নি। তবে এ নিয়ে কিছু অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মিস্টারবিস্টের একজন মুখপাত্র।
ওই মুখপাত্র বলেছেন, “ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ অ্যানথ্রোপোলজি অ্যান্ড হিস্ট্রি বা আইএনএএইচ-এ যেসব প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান তত্ত্বাবধান করে, সেখানে কোনো বিজ্ঞাপনচিত্র ধারণ করিনি আমরা।”
ভিডিওটিতে চকলেট স্ন্যাকের প্রচারের দৃশ্যটি ইনফ্লুয়েন্সারের ক্যাম্পিং সাইটেই ধারণ করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
মুখপাত্র আরও বলেছেন, ভিডিওটির উদ্দেশ্য ছিল “মেক্সিকোর এই গুরুত্বপূর্ণ মায়া স্থাপনাগুলোর গুরুত্ব তুলে ধরা”। বিষয়টি এখন “দুঃখজনকভাবে রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। তবে আমরা আশা করছি, এটি একটি গঠনমূলক আলোচনার পথ খুলে দেবে ও মানুষকে এই অনন্য ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো ভ্রমণে উৎসাহিত করবে।”
এদিকে, বুধবার এক বিবৃতিতে কী শর্তে বা কোন পরিস্থিতিতে এই ভিডিও ধারণের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল তা তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউম।
ওই ভিডিওটির ক্যাপশনে মেক্সিকোর পর্যটন বিভাগ ও সরকারি কর্তৃপক্ষকে মায়া স্থাপনগুলোতে ভিডিও ধারণের অনুমতির জন্য ধন্যবাদ জানান মিস্টারবিস্ট। একই সঙ্গে নিজের চকলেট পণ্যের লিংকও শেয়ার করেছেন তিনি।
ভিডিওটিতে দেখা গিয়েছে, তিনি ও তার দল মায়া সভ্যতার ‘কালাকমুল’ ও ‘চিচেন ইৎসা’ শহরের কিছু সীমিত প্রবেশাধিকারওয়ালা এলাকা ঘুরে দেখছেন। এক পর্যায়ে মিস্টারবিস্ট বলেন, “বিশ্বাসই হচ্ছে না যে, সরকার আমাদের এটা করতে দিচ্ছে।”
ভিডিওর এক দৃশ্যে হেলিকপ্টার থেকে তাদের একটি পিরামিডের ওপর নামতেও দেখা গিয়েছে এবং আরেকটি দৃশ্যে প্রাচীন এক প্রাক-হিস্পানিক মুখোশ হাতে দেখা যাচ্ছে তাদের।
ওই মুখপাত্রের কথাকে ‘মিথ্যা দাবি’ বলে বর্ণনা করেছে দেশটির ঐতিহ্য সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষ। ইউটিউবার মিস্টারবিস্টের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপনেরও অভিযোগ এনেছে তারা।
আইএনএএইচ-এ বলেছে, মিস্টারবিস্ট কখনোই বাস্তব প্রাক-হিস্পানিক মুখোশ হাতে নেননি এবং ভিডিওটির মধ্যে ব্যাপক পোস্ট-প্রোডাকশন সম্পাদনার কাজ করা হয়েছে, যেমন হেলিকপ্টারের দৃশ্যটি।
সোমবার তারা বিবৃতিতে বলেছে, “এই সবই মিথ্যা দাবি, যা সংশ্লিষ্ট ইউটিউবারের নাটকীয়তারই প্রতিফলন।”
মেক্সিকোর সংস্কৃতি সচিব ক্লাউদিয়া কুরিয়েল ডি ইকাজা বৃহস্পতিবার বলেছেন, মিস্টারবিস্টকে ভিডিও ধারণের জন্য অনুমতি দিলেও তারা কখনোই মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করার বা ঐতিহ্যবাহী স্থানের ছবি ট্রেডমার্ক বিজ্ঞাপনের জন্য ব্যবহারের অনুমতি দেয়নি।
“আমরা এমন কোনও বাণিজ্যিক প্রচেষ্টাকে সমর্থন করি না, যা প্রত্নতাত্ত্বিক বিভিন্ন স্থানের গুরুত্বকে বিকৃত করে, বিশেষ করে যেগুলো আমাদের আদিবাসী সংস্কৃতির ঐতিহ্য ও দেশের গর্ব।”