Published : 20 Apr 2024, 04:35 PM
আমাদের সৌরজগতে একটি গ্রহ লুকিয়ে আছে, এমন নতুন প্রমাণ খুঁজে পাওয়ার দাবি করছেন বিজ্ঞানীরা।
বেশ কয়েক বছর ধরে জোতির্বিদদের কেউ কেউ ধারণা প্রকাশ করে আসছেন, সৌরজগতের একেবারে শেষ প্রান্তে যে অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করা গেছে, তা সম্ভবত এমন এক গ্রহ, যার অস্তিত্ব এখনও নিশ্চিত নয়।
এ ছাড়া, সৌরজগতের একেবারে শেষ প্রান্তের কক্ষপথগুলোয় যেসব বস্তু আছে, সেগুলো ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে সহায়ক হিসেবে কাজ করে ধারণাটি। আর এইসব বস্তু সূর্য থেকে পৃথিবীর চেয়েও আড়াইশ গুণ দূরে অবস্থিত।
এ ধারণাকে সুপরিচিত করে তোলা জোতির্বিদ কনস্ট্যান্টিন বোগিটিন বলছেন, তিনি ও তার গবেষণা দল এখন পর্যন্ত বেশ কিছু প্রমাণ খুঁজে পেয়েছেন, যেগুলো থেকে ইঙ্গিত মেলে, সে জায়গায় একটি গ্রহ থাকতে পারে।
পাশাপাশি, নতুন এ গবেষণাকে ‘প্ল্যানেট ৯-এর সম্ভাব্য অস্তিত্ব নিয়ে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যানমূলক প্রমাণ’ বলেও আখ্যা দিয়েছেন তিনি।
নতুন এ গবেষণায় বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ‘ট্রান্স-নেপচুনিয়ান অবজেক্ট’ পরীক্ষা করেছেন, যা ‘টিএনও’ নামেও পরিচিত। সংজ্ঞা অনুসারে, এগুলো বিভিন্ন এমন বস্তু, যা সৌরজগতের একেবারে শেষ প্রান্তে অর্থাৎ নেপচুনের চেয়েও দূরে রয়েছে।
গবেষণায় বিভিন্ন এমন বস্তুর দিকে নজর দেওয়া হয়েছে, যেগুলোর গতিবিধি নেপচুনের কক্ষপথে প্রবেশ করার পর বদলে গেছে। এ অস্থিতিশীলতার মানে দাঁড়ায়, এদের সম্পর্কে বোঝা তুলনামূলক জটিল। তাই যেসব গবেষক ‘প্ল্যানেট নাইন’-এর সম্ভাব্য অস্তিত্ব খুঁজে দেখছেন, তারা এদের বিশ্লেষণ করার বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন।
তবে, এ গবেষণায় গবেষকরা সেইসব বস্তুর দিকে মনযোগ দেওয়ার পাশাপাশি এদের গতিবিধিও বোঝার চেষ্টা করেছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট। আর ড. বোগিটিন দাবি করেছেন, এর সেরা ব্যাখ্যা হতে পারে এখন পর্যন্ত খোঁজ না মেলা একটি গ্রহ।
নেপচুনের কক্ষপথে থাকা বস্তুগুলোর ওপর কীভাবে বিভিন্ন পরিস্থিতির প্রভাব পড়ে, তা বুঝতে বেশ কয়েক ধরনের পরীক্ষা চালিয়েছে গবেষণা দলটি। এর মধ্যে রয়েছে নেপচুনের মতো বিশাল গ্রহ, মিল্কিওয়ে থেকে আসা ‘গ্যালাকটিক টাইড’ ও ক্ষণস্থায়ী তারা।
ড. বোগিটিন বলেছেন, এর সেরা ব্যাখ্যা ছিল এমন এক মডেল, যেখানে প্ল্যানেট নাইনও অন্তর্ভূক্ত। গবেষকরা বলছেন, বস্তুগুলোর এমন আচরণের বেশ কিছু ব্যাখ্যা আছে, যার একটি হল, এদের কক্ষপথে প্রভাব ফেলেছিল অন্যান্য গ্রহ, যা পরবর্তীতে বন্ধ হয়ে যায়। তবে তাদের দাবি, এর সেরা বিশ্লেষণ হতে পারে, এগুলো প্ল্যানেট নাইনের ধ্বংসাবশেষ।
তারা বলেন, প্ল্যানেট নাইনের সম্ভাব্য অস্তিত্ব সম্পর্কে আরও ভালোভাবে বোঝা যাবে ‘ভেরা সি রুবিন অবজারভেটরি’ চালু হওয়ার পর, যার এখন চিলিতে তৈরি হচ্ছে। আর এটি চালু হলে আকাশ স্ক্যান করার সুবিধা মিলবে, যার মাধ্যমে দূরের বিভিন্ন বস্তুর গতিবিধি আরও ভালোভাবে বোঝা যাবে।
“এই গবেষণার আসন্ন পর্ব আমাদের সৌরজগতের শেষ প্রান্তের বিভিন্ন রহস্য নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশের সম্ভাবনা দেখাচ্ছে,” গবেষণাপত্রে লিখেছে দলটি।
গবেষণাটির বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে ‘জেনারেশন অফ লো-ইনক্লাইনেশন, নেপচুন-ক্রসিং টিএনওস বাই প্ল্যানেট নাইন’ শীর্ষক নিবন্ধে, যা পাওয়া যাবে কর্নেল ইউনিভার্সিটির ‘এআরএক্সআইভি’ সাইটে।