Published : 31 May 2025, 01:12 PM
মার্কিন চিপ কোম্পানি এনভিডিয়া’কে ছাড়াই ভবিষ্যতের এআই চিপের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে চীনা বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানি।
এনভিডিয়ার চিপের মজুদ কমে আসা ও মার্কিন রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ কঠোর হওয়ার কারণে চীনের বিভিন্ন বড় প্রযুক্তি কোম্পানি দীর্ঘ ও কঠিন প্রক্রিয়া শুরু করেছে, যেখানে তারা এআই বিকাশের জন্য নিজেদের দেশে তৈরি চিপ ব্যবহারের দিকে এগুচ্ছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক পত্রিকা ফিনান্সিয়াল টাইমস।
শিল্প খাতের নির্বাহীরা বলছেন, এখন এআই চিপের বাড়তে থাকা চাহিদা ও গ্রাহকদের প্রয়োজন মেটাতে বিকল্প সেমিকন্ডাক্টর বা চিপ পরীক্ষার কাজ শুরু করেছে আলিবাবা, টেনসেন্ট ও বাইদু’সহ বেশ কয়েকটি চীনা কোম্পানি।
টাইমস লিখেছে, বর্তমানে বিকল্প পরিকল্পনাগুলো জোরদার করতে বাধ্য হয়েছে এসব কোম্পানি। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যিক উত্তেজনা বাড়ছে। ফলে গত মাসে চীনের জন্য এনভিডিয়ার তৈরি ‘এইচ২০’ নামের চিপ বিক্রির ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপ করে ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন।
এ চিপটি আসলে চীনের জন্য বিশেষভাবে তৈরি এনভিডিয়ার চিপের দুর্বল সক্ষমতার এক সংস্করণ, যা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে জারি করা রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ আইন মেনেই তৈরি করেছিল তারা।
বিষয়টির সঙ্গে জড়িত একাধিক সূত্র বলছে, রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ আরও কঠোর হওয়ায় চীনা বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানি দ্রুত বিকল্প খোঁজার কাজে নেমেছে। কারণ তাদের কাছে থাকা এনভিডিয়া চিপের মজুত কেবল আগামী বছরের শুরুর দিক পর্যন্তই এআই বিকাশের কাজে লাগাতে পারবে। এরপর চিপের ঘাটতি তৈরি হবে তাদের।
নতুন চিপ অর্ডার করার পর তা পেতে তিন থেকে ছয় মাস সময় লাগে। তবে এনভিডিয়া কবে বা আদৌ চীনের জন্য নতুন চিপ দিতে পারবে কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়। একদিকে ট্রাম্পের কঠোর রপ্তানি বিধিনিষেধ মেনে চলতে হচ্ছে এনভিডিয়াকে, অন্যদিকে চীনা প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে লড়াইও করছে কোম্পানিটি।
গত সপ্তাহে বাইদুর এআই ক্লাউড গ্রুপের প্রধান শেন দোউ বিশ্লেষকদের বলেছেন, এনভিডিয়া চিপের বিকল্প হিসেবে বেশ কিছু চিপ বেছে নিতে পারে কোম্পানিটি, বিশেষ করে সমস্যা সমাধানের অনুমান প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে।
দোউ বলেছেন, “আমাদের বিশ্বাস, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশে তৈরি স্বনির্ভর চিপ ও ক্রমাগত কার্যকর নিজস্ব সফটওয়্যার সিস্টেমকে মিলিয়ে চীনের এআই ইকোসিস্টেম দীর্ঘমেয়াদি উদ্ভাবনের জন্য মজবুত এক ভিত্তি গড়ে তুলবে।”
এদিকে, আয়ের রিপোর্ট প্রকাশের সময় চীনের প্রযুক্তি কোম্পানি টেনসেন্ট-এর প্রেসিডেন্ট মার্টিন লাউ বলেছেন, বর্তমানে চিপ ব্যবহারে আরও সক্ষম হওয়ার চেষ্টা করছে তার কোম্পানি, পাশাপাশি বিকল্প পণ্যও বিবেচনা করছে তারা।
লাউ বিশ্লেষকদের বলেছেন, “আমাদের হাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ উচ্চ মানের চিপ আছে, যা দিয়ে আমরা সামনে আরও কয়েক প্রজন্ম পর্যন্ত এআই মডেলের প্রশিক্ষণ চালিয়ে যেতে পারব। টেনসেন্ট ভবিষ্যতে অন্য চিপও ব্যবহার করতে পারে, যাতে এআই চিপের বাড়তে থাকা চাহিদা পূরণ করা যায়।
এ মাসে চীনের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে জড়িত এক থিংক ট্যাংক বলেছে, ওয়াশিংটনের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি বেদনাদায়ক হলেও তা “দেশীয় উন্নতমানের এআই চিপে স্বাধীন উদ্ভাবনের জোয়ার তৈরি করেছে, যার সবচেয়ে ভালো উদাহরণ হচ্ছে হুয়াওয়ের অ্যাসেন্ড চিপের সিরিজ”।
‘চায়না ইনস্টিটিউটস অফ কনটেম্পোরারি ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস’ বা সিআইসিআইআর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে বলেছে, “এরইমধ্যে বড় পরিসরে অ্যাসেন্ড চিপ কিনছে ও ব্যবহার করতে শুরু করেছে চীনের দেশীয় বিভিন্ন কোম্পানি।”
এখনও পর্যন্ত হুয়াওয়ের চিপের সবচেয়ে বড় ক্রেতা হচ্ছে ‘চায়না মোবাইল’-এর মতো রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি ও প্রতিরক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও আর্থিক খাতের বিভিন্ন শিল্প, যেগুলো সংবেদনশীল শিল্প হিসেবে বিবেচিত।
ধারণা করা হচ্ছে, আরও অনেক বড় পরিসরের চীনের দেশীয় বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানি হুয়াওয়ের চিপের জন্য প্রতিযোগিতায় নামবে।