Published : 07 Mar 2025, 11:52 AM
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুরানো কাপড়কে পুড়িয়ে ফেলা হয়, যার ফলে নষ্ট উপাদান তৈরির পাশাপাশি ক্ষতি হয় পরিবেশের। এবার সেই পুরানো কাপড়কে পুনর্ব্যবহারযোগ্য টেকসই কাগজে পরিণত করেছেন বিজ্ঞানীরা।
তুলানির্ভর বিভিন্ন কাপড়কে শক্তিশালী ও পরিবেশবান্ধব প্যাকেজিং কাগজে পুনরায় ব্যবহারের জন্য নতুন এক পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন অস্ট্রিয়ার গবেষকরা।
তাদের দাবি, এ প্রক্রিয়াটি কাপড়ের বর্জ্যকে ব্যাপকহারে কমিয়ে আনতে ও কাগজ আমদানির প্রয়োজনীয়তা দূর করতে পারে।
অস্ট্রিয়ায় প্রতি বছর প্রায় দুই লাখ ২০ হাজার টন কাপড়ের বর্জ্য তৈরি হচ্ছে, যার প্রায় ৮০ শতাংশ পুড়িয়ে ফেলার ফলে মূল্যবান কাঁচামালের ক্ষতি হয় বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
পুরানো কাপড় থেকে তুলার তন্তুকে পুনরায় ফিরিয়ে আনার ও সেগুলোকে প্যাকেজিং উপাদানে পরিণত করার একটি উপায় খুঁজে পেয়েছে ‘ইনস্টিটিউট অফ বায়োপ্রোডাক্টস অ্যান্ড পেপার টেকনোলজি’র টমাস হার্টারের নেতৃত্বে গবেষকদের একটি দল।
দলটি বলছে, প্রচলিত পুনরায় ব্যবহৃত কাগজের তুলনায় এই নতুন কাগজ অনেক বেশি টেকসই।
ব্যবহৃত কাপড় থেকে কাগজ তৈরি করতে প্রথমে কাপড়টি ছোট ছোট টুকরা করে কেটে পানিতে ভিজিয়ে রাখার পর এটিকে মিলের মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত করেন গবেষকরা। যাতে এগুলো গিঁট বা জমাট না বাঁধে ও বিভিন্ন তন্তুকে সহজে আলাদা করা যায়।
মাস্টার্সের থিসিসের অংশ হিসাবে এ প্রক্রিয়ার জন্য সবচেয়ে সেরা পদ্ধতি চিহ্নিত করেছেন আলেকজান্ডার ওয়াগনার; যার মধ্যে রয়েছে সঠিক মেশিন নির্বাচন, প্রক্রিয়াকরণের সময় ও পানি থেকে কাপড়ের অনুপাত।
গবেষকরা বলছেন, প্রক্রিয়াকরণের পর কাপড়গুলোর অনেকটা কাগজের মণ্ডের আকার পায়। সেখান থেকে কাগজের উৎপাদন কৌশল ব্যবহার করে বিভিন্ন তন্তুকে কাগজে রূপান্তর করা সম্ভব হচ্ছে।
রং কিছুটা বাদামী ও মূল কাপড়ের মতো ছোট ছোট রঙের দাগ থাকলেও প্রথম নজরে নতুন কাগজটি দেখতে সাধারণ রিসাইকলড পেপারের মতোই। এতে টেক্সটাইল তন্তু যোগ করলে কাগজ আরও টেকসই হয়।
নির্মাতারা বলছেন, কেবল ৩০ শতাংশ টেক্সটাইল উপাদান থাকার পরও এ নতুন কাগজটি প্রচলিত কাগজের চেয়ে অনেক বেশি টেকসই ও এর উৎপাদন প্রক্রিয়াও সহজ। এই শক্তি আসে তন্তুর দৈর্ঘ্য থেকে। এসব টেক্সটাইল তন্তুর দৈর্ঘ্য প্রায় ১.৭ মিলিমিটার, যা রিসাইকলড কাগজের চেয়ে অনেক বেশি।
এ প্রক্রিয়াটিকে আরও শক্তিসক্ষম করার দিকে মনোযোগ দিয়েছে গবেষণা দলটি। তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে, এ কাগজের উৎপাদন বাড়ানো ও শিল্প পর্যায়ে এই পুনর্ব্যবহারযোগ্য পদ্ধতিটি চালু করা।
গবেষকরা বলছেন, ফেলে দেওয়া পোশাককে মূল্যবান এক সম্পদে পরিণত করার মাধ্যমে কাপড়ের বর্জ্য কমিয়ে আনা ও কাগজ শিল্পকে আরও টেকসই করতে একটি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সমাধান দিয়েছে এই অগ্রগতি।