Published : 13 Aug 2023, 09:08 PM
সফটওয়্যার প্রকৌশলী মিয়ানা উইন্ডালের ত্বকের নিচে প্রায় ২৫টির মতো ইমপ্ল্যান্ট করা চিপ রয়েছে। চুম্বক থেকে শুরু করে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন (আরএফআইডি) প্রযুক্তি রয়েছে এর মধ্যে। কেউ খুব খেয়াল করলে ত্বকে মৃদু নড়াচড়া হয়ত টের পাবেন, তবে বেশিরভাগের কাছে এগুলো চোখেই পড়বে না।
ডেফকন নিরাপত্তা সম্মেলেনে এসেছিলেন মিয়ানা। সেখানেই তিনি বললেন এই চিপগুলোর কথা। কীভাবে তিনি ইমপ্লান্টের বিষয়ে আগ্রহী হলেন, ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য সেগুলোর প্রোগ্রামিং সহ বিভিন্ন বিষয়ে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন তিনি। এই ব্যক্তিগত ব্যবহারের মধ্যে রয়েছে অফিসে ঢোকার সময় আইডেন্টিটি কার্ড স্ক্যান করার মতো কাজ।
সাবওয়ে কার্ড বা ‘ট্যাপ’ করে লেনদনের মতো স্ক্যানিংয়ে ব্যবহার হয় আরএফআইডি প্রযুক্তি। এই অপেক্ষাকৃত সরল প্রযুক্তিটিকে ১৯৭০ সালে প্রথম পেটেন্ট করা হয়। অন্যদিকে শরীর ফোঁড়ানো কিংবা উল্কি আঁকার ইতিহাস হাজার বছরের। এই দুইয়ের যোগফল আসলে আরএফআইডি ইমপ্ল্যান্ট প্রযুক্তি।
তবে, এই প্রযুক্তি এখনও তার সর্ব্বোচ্চ সম্ভবনায় গিয়ে পৌঁছায়নি। “বরং অনেকেই একে মনে করে এক ধরনের স্টান্ট” – বলেন উইন্ডাল।
“সন্ধ্যার পর পার্টিতে গেছেন, হাত ব্যাগ বহন করতে ভালো লাগে না। এমন অবস্থায় নিজের বাসার তালা খোলা বা বন্ধ করার দায়িত্বটি ত্বকের নিচে সেন্সরের ওপর অনায়াসে ছেড়ে দিতে পারেন।”
এগুলো এখন আর যাদুকরী বিষয় নয়। “ইমপ্লান্ট করা চিপ আসলে হলিউডের সিনেমার মতো কাজও করে না।” – বললেন, ‘ডেনজারাস থিং’ নামের বায়ো হ্যাকিং এবং ইমপ্ল্যান্ট সার্ভিসের প্রতিষ্ঠাতা আমাল গ্রাফস্ট্রা।
“খুব কাছাকাছি কোনো স্ক্যানার না থাকলে ইমপ্ল্যান্টগুলো সচল বা সক্রিয়ই হবে না।” যার অর্থ এগুলোর ব্যবহারের ক্ষেত্র বেশ সীমিত এবং একে বলা যায় একটি মৌলিক প্রযুক্তি যা নিজের শরীরে জুড়ে দিয়ে উপকৃত হতে পারেন যে কেউ।
প্রচলিত ক্ষেত্রগুলোর বাইরে এর ব্যবহারও সীমিত। যেমন, কেউ চাইলে টেসলার কি কার্ড ইমপ্লান্ট ব্যবহার করে গাড়ি স্টার্ট করতে পারবেন, তবে সে জন্য ব্যবহারকারী নিজেকেই ওই কি কনফিগার করে নিতে হবে।
“আমরা যখন ট্রান্সপন্ডার বিক্রি করি, তখন আমরা কেবল একটি চাবিটি বিক্রি করি, লকিং সিস্টেম নয় নয়,” বলেন গ্রাফস্ট্রা। তাই একজন ব্যবহারকারীকে “তালাটি” বানানোর জন্য খানিকটা প্রযুক্তিবান্ধব হওয়া লগবে।
কেউ শরীরে চিপ ইমপ্ল্যান্ট করার আগে এই তথ্যগুলো তার জানা থাকা দরকার, নাহলে তিনি হয়তো তার চিপ ঢুকাবেন ঠিকই, তবে সেটি কোনো কাজে আসবে না।
“সার্জারির আগে আপনি নিজের মতো খোঁজখবর নিয়ে নিশ্চিত হন কিভাবে আপনি ইমপ্ল্যান্টকে কাজে লাগাতে পারেন।” – বলেছেন উইন্ডাল। তবে তার নিজের শরীরেও কিছু নিষ্ক্রিয় চিপ আছে যেগুলো ত্বকের ভেতর থাকলে সমস্যা নেই।
এখন নিরাপত্তা মাধ্যম হিসাবে আরএফআইডি ইমপ্লান্ট ব্যবহার করার উপায় খুঁজছে কোম্পানিগুলো। আরএফআইডি প্রযুক্তির সুবিধা হলো পরিচয় চুরি করতে চাইলে হলে পাসওয়ার্ড হাতে পেতে হবে। কিন্তু ইমপ্ল্যান্ট থেকে অন্য কারো পক্ষে তার সুযোগ থাকে না।
“ইমপ্লান্ট ব্যবহার করলে কেউ আপনার অজ্ঞাতে আপনার পাসওয়ার্ড ব্যবহার করবে, সে সম্ভবনা খুবই কম,” বলেছেন উইন্ডাল। “আপনার হাত তো আর কেউ কেড়ে নিয়ে যেতে পারবে না। অবশ্য চাপাতি নিয়ে হাজির হলে ভিন্ন কথা।”
কোনো সিস্টেমে অনঅনুমোদিত প্রবেশ ঠেকাতে, অথেনটিকেশন বা পরিচয় যাচাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, ইমপ্ল্যান্ট প্রযুক্তি সেখানে কার্যকর হতে পারে। কোম্পানিগুলো পাস-কি এর মাধ্যমে ‘টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন’ বা দুই ধাপে পরিচয় যাচাই প্রযুক্তিকে প্রতিস্থাপন করার কথা ভাবছে। এর সম্ভাব্য বিকল্প হতে পারে ত্বকের নিচে থাকা ইমপ্লান্ট।
ইমপ্লান্ট চিপে আপনার পাস-কি আপলোড করা হলে তা আপনার পরিচয় যাচাইয়ে ব্যবহৃত হতে পারে। এর বদলে এখ যে প্রযুক্তি বহুল ব্যবহৃত, ধরা যাক হার্ডওয়্যার কি- সেটি চুরি হতে পারে। বা ভেরিফিকেশনে ব্যবহৃত টেক্সট মেসেজ বেহাত হতে পারে, বলেছেন গ্রাফস্ট্রা।
মেডিক্যাল ডিভাইস না হওয়ার কারণে এগুলোকে এফডিএ’র অনুমতি ছাড়াই ব্যবহার করা যায়। সাধারণত, এগুলো ব্যবহার নিরাপদ হলেও অন্যান্য ঝুঁকির কথা বলেছেন ইউনিভার্সিটি অফ কলরাডো বোল্ডারের অধ্যাপক ড. হার্শা গঙ্গাধারবাটলা।
“এই প্রযুক্তিগুলো স্থাপনের খরচের পাশাপাশি অন্যান্য ‘গোপন খরচ’ নিয়েও পূর্ণ সচেতন হতে হবে গ্রাহকদের।” এনগ্যাজেটকে পাঠানো এক ইমেইল বার্তায় বলেছেন তিনি।