Published : 09 Jun 2025, 03:38 PM
গাজার রাফা ও ওয়াদি গাজা সেতুর কাছে দুটি মার্কিন ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে খাবারের জন্য অপেক্ষায় থাকা জনতার ওপর ইসরায়েলি বাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের ভাড়াটে সেনাদের গুলিতে অন্তত ১৩ জন নিহত এবং ১৫০ জনের বেশি আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমর্থনে ইসরায়েলি বাহিনীর নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) পরিচালিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোর সামনে ধারাবাহিকভাবে এমন হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে চলছে। রোববারের হত্যাকাণ্ডগুলো খাদ্য সাহায্যের আশায় অপেক্ষমাণ বেসামরিক গাজাবাসীদের ওপর ধারাবাহিক হামলার সর্বশেষ ঘটনা।
এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় গাজা কর্তৃপক্ষের গণমাধ্যম দপ্তর জিএইচএফের ত্রাণকেন্দ্রগুলোকে ‘মানব কসাইখানা’ আখ্যা দিয়েছে বলেছে, সেখানে ক্ষুধার্ত মানুষদের ডেকে এনে হত্যা করা হচ্ছে। তারা একে ‘যুদ্ধাপরাধ’ এবং ‘মানবতাবিরোধী’ অপরাধ হিসেবে বর্ণনা করে নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্ত এবং বিতর্কিত জিএইচএফের কার্যক্রম স্থগিতের দাবি জানিয়েছে।
গত ২৭ মে জিএইচএফের এই ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে তাদের কেন্দ্রগুলোতে এ পর্যন্ত অন্তত ১৩০ জন নিহত এবং ৭০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত ৯ জন।
‘এটা সাহায্য নয়, আমাদের জন্য ফাঁদ’
রোববার স্থানীয় সময় ভোরে রাফার আল-আলাম এলাকায় শত শত মানুষ খাবারের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। কেউ কেউ সাড়ে ৪টার মধ্যেই এসে পড়েছিলেন। ভোর ৬টার পর লোকজন একটু এগোতেই সেনারা গুলি চালায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থাগুলো।
“ঘণ্টা দেড়েক পর লোকজন সামনে এগোতেই গুলি শুরু হয়,” বলেন প্রত্যক্ষদর্শী আবদাল্লাহ নুর আল-দিন।
“এটা আমাদের জন্য সাহায্য নয়, ফাঁদ,” রক্তাক্ত মুখে নাসের হাসপাতালে শুয়ে এ কথা বলেন আদহাম দাহমান। তিনি বলেন, ট্যাংক থেকে গুলি ছোড়া হয়, গুলির শব্দে মানুষ চারদিকে ছোটাছুটি শুরু করে দেয়।
ইসরায়েলি বাহিনী জানিয়েছে, ঘটনাস্থলটি রাতের জন্য ‘সক্রিয় যুদ্ধক্ষেত্র’হিসেবে ঘোষিত। আর বেঁচে যাওয়া লোকজন জানিয়েছে, সূর্য ওঠার পর গুলির ঘটনাটি ঘটেছে।
চিকিৎসা সহায়তাকারী সংস্থা এমএসএফ জানিয়েছে, খান ইউনিসের আল-মাওয়াসি এলাকায় তাদের ক্লিনিকে ১৩ জন আহত এবং একজনের মরদেহ নিয়ে আসা হয়। আহতরা শাকৌশ এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন, তারা সবাই তরুণ এবং সৌদি নামের গ্রামে খাবার সংগ্রহে যাচ্ছিলেন। তাদের কাউকে কাউকে সাইকেলে, গাধার গাড়ি কিংবা হাঁটিয়ে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
হাসপাতালের বাইরে ধারণ করা ফুটেজে দেখা যায়, স্বজনরা রক্তমাখা কাপড়ে মোড়ানো মরদেহ জড়িয়ে কাঁদছেন।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিন অঞ্চলবিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক ফ্রানচেসকা আলবানিজ বলেছেন, “জিএইচএফ কার্যক্রম আসলে মানবিকতার মুখোশে গণহত্যার কৌশল।”
তিনি এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ‘বিশ্বের নৈতিক ও রাজনৈতিক দুর্নীতিকে’ দায়ী করেছেন।
আল জাজিরার প্রতিবেদক হানি মাহমুদ জানান, “আজকের হামলা দেখেই বোঝা যাচ্ছে, জিএইচএফ ত্রাণ বিতরণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। উত্তরের অবস্থা আরও গুরুতর। খাদ্যের সন্ধানে মানুষের দিন পার হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু খাবার, পানি না পেয়ে দিনশেষে তারা ক্লান্ত, পিপাসায় কাহিল হয়ে বাড়ি ফেরে।”
তবে জিএইচএফের এক কর্মকর্তা দাবি করেন, রোববার তাদের তিনটি কেন্দ্রেই ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে এবং কোথাও কোনো সহিংসতা হয়নি।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনি ছিটমহলটিতে চলমান ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৫৪ হাজার ৮৮০ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ২৬ হাজারেরও বেশি আহত হয়েছেন। ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতির অবসানের পর থেকে প্রাণ হারিয়েছেন ৪ হাজার ৬০৩ জন।
গতকাল মাত্র ২৪ ঘণ্টায় ১০৮ জন নিহত এবং ৪০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়টি।