Published : 12 Jun 2025, 09:03 PM
ভারতের গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদ থেকে ২৪২ আরোহী নিয়ে লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা করার পরপরই বিধ্বস্ত হয়েছে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি উড়োজাহাজ।
এতে মোট আরোহী ছিলেন ২৪২ জন। এ পর্যন্ত ৩০ জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন আরোহীদের কেউই বেঁচে নেই।
উড়োজাহাজটি লোকালয়ে আছড়ে পড়ায় হতাহতের সঠিক সংখ্যা কত বা কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখনও স্পষ্ট হয়নি।
ভারতের ইতিহাসে এ এক ভয়াবহ উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা। বিশ্বে সম্প্রতি কয়েকবছরে এমন ভয়াবহ প্রাণঘাতী আরও কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে। সেগুলোর বিবরণ তুলে ধরেছে রয়টার্স:
যুক্তরাষ্ট্র:
এবছর ২৯ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে উড়োজাহাজ ও সামরিক হেলিকপ্টারের সংঘর্ষে আরোহী ৬৭ জনের সবাই মারা যান।
ওয়াশিংটন জাতীয় বিমানবন্দরের কাছে মাঝ আকাশে দুর্ঘটনাটি ঘটে স্থানীয় সময় রাত ৯টার দিকে।
উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টারের ধাক্কা লাগার পর রাতের আকাশে স্ফুলিঙ্গ দেখা যায়। এই সংঘর্ষের পর উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টার পটোম্যাক নদীতে আছড়ে পড়ে।
দক্ষিণ কোরিয়া:
২০২৪ সালের ২৯ ডিসেম্বরে দক্ষিণ কোরিয়ার মুয়ান বিমানবন্দরে জেজু এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় ১৭৯ জনের মৃত্যু হয়। এটি ছিল কোরিয়ার মাটিতে সবচেয়ে প্রাণঘাতী বিমান দুর্ঘটনা।
দুর্ঘটনার দিন, জেজু এয়ারের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের উড়োজাহাজ জরুরি অবতরণের সময় রানওয়ে থেকে ছিটকে গিয়ে একটি সীমানা দেয়ালে আঘাত হানে। বিমানে থাকা ১৮১ জন যাত্রী ও ক্রুর মধ্যে কেবল দুজন বেঁচে যান।
কাজাখস্তান:
গত বছর ২৫ ডিসেম্বরে কাজাখস্তানের আকতাউ শহরের কাছে আজারবাইজান এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজ (ফ্লাইট জে২-৮২৪৩) বিধ্বস্ত হয়ে ৩৮ জন নিহত হন।
উড়োজাহাজটিতে যাত্রী-ক্রু মিলে ৬৭ জন আরোহী ছিল। আজারবাইজানের রাজধানী বাকু থেকে রাশিয়ার গ্রোজনির উদ্দেশে রওনা হয়েছিল উড়োজাহাজটি। পরে সেটিকে কাজাখস্তানের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়।
উড়োজাহাজটি রাশিয়ার গ্রোজনি শহরে অবতরণের চেষ্টা করার সময় আচমকা গোলাগুলির মধ্যে পড়েছিল বলে ওই সময় জানিয়েছিলেন আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট। তবে মস্কো এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু জানায়নি।
জাপান:
গতবছর ২ জানুয়ারিতে জাপানের রাজধানী টোকিওর হানেদা বিমানবন্দরের রানওয়েতে দুই উড়োজাহাজের সংঘর্ষে আরোহীদের সবাই মারা যায়।
৩৭৯ যাত্রী নিয়ে জাপানের দ্বীপ হোক্কাইডো সাপ্পোরোর বিমানবন্দর থেকে আসা জেএএল এয়ারবাস পিএএ-৩৫০ হানেদা বিমানবন্দরের রানওয়েতে অবতরণ করেছিল।
একই সময়ে কোস্ট গার্ডের আরেকটি ছোট্ট উড়োজাহাজ রানওয়েতে ছিল। জেএএল এয়ারবাস রানওয়েতে অবতরণের পরে দু’য়ের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
এতে পিএএ-৩৫০ এয়ারবাসে আগুন লেগে এর আরোহীরা সবাই মারা যায়। কোস্ট গার্ডের ছোট উড়োজাহাজটির ৬ ক্রুর ৫ জনও মারা যায়।
চীন:
২১ মার্চ, ২০২২ সালে চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের একটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের গুয়াংশি অঞ্চলের পাহাড়ি এলাকায় বিধ্বস্ত হয়।
এতে বিমানের ১৩২ জন যাত্রী ও ক্রু নিহত হন। এটি ছিল গত ২৮ বছরে চীনে সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা।
ইরান:
৮ জানুয়ারি, ২০২০ সালে তেহরান বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই ইউক্রেইনের ইউআইএ বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজটিকে গুলি করে ভূপাতিত করে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডস।
এতে বিমানে থাকা ১৭৬ জনের সবাই নিহত হয়। পরে ইরানের বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষ জানায়, একটি রাডার সিস্টেম ভুলভাবে সংযুক্ত থাকায় এবং এয়ার ডিফেন্স অপারেটরের ভুল সিদ্ধান্তে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
ইথিওপিয়া:
১৯ মার্চ, ২০১৯ সালে আদ্দিস আবাবা থেকে নাইরোবির পথে যাত্রা করা ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স ৮ উড্ডয়নের কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিধ্বস্ত হয়।
প্রাণ হারান ১৫৭ জন। এই ঘটনার পর নিরাপত্তার স্বার্থে বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স মডেলের সব উড়োজাহাজ বিশ্বজুড়ে মাটিতে নামিয়ে রাখা হয়।
ইন্দোনেশিয়া:
২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবরে জাকার্তা থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই লায়ন এয়ারের একটি বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স বিমান জাভা সাগরে বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনায় বিমানে থাকা ১৮৯ জন যাত্রী ও ক্রুর সবাই নিহত হন।
মালয়েশিয়া:
২০১৪ সালের ১৭ জুলাই আমস্টারডাম থেকে কুয়ালালামপুরগামী মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট এমএইচ১৭ ইউক্রেইনের পূর্বাঞ্চলে রুশপন্থি বিদ্রোহীদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতে ভূপাতিত হয়। এতে বিমানের ২৯৮ জন যাত্রীর সবাই নিহত হন।
একই বছর ৮ মার্চে মালয়শিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয় মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট এমএইচ৩৭০। বোয়িং ৭৭৭ মডেলের বিমানটির ধ্বংসাবশেষ ও ২৩৯ জন যাত্রীর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি।