Published : 19 Jun 2025, 12:04 PM
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের হাতে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি হত্যার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করতে দৃঢ়ভাবে অস্বীকৃতি জানিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইরানি জনগণ তেহরানের এখনকার নেতৃত্বকে ঘিরেই ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে।
ইসরায়েলের সামরিক হামলার পরিণতিতে ইরানে শাসনব্যবস্থা বদলাবে বলে আশা করছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু; এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র জানে খামেনি এখন ‘কোথায় লুকিয়ে আছেন’, কিন্তু ওয়াশিংটন ‘আপাতত’ তাকে হত্যা করবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা নিয়ে ইসরায়েল যদি খামেনিকে হত্যা করে তাহলে রুশ প্রেসিডেন্টের প্রতিক্রিয়া কী হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে পুতিন বলেন, “আমি এই সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনাই করতে চাই না। একেবারেই চাই না।”
এ নিয়ে কথা বলতে চাপাচাপি করা হলে পুতিন বলেন, তিনি খামেনি হত্যার সম্ভাবনা নিয়ে মন্তব্যগুলো শুনেছেন, কিন্তু তিনি এ নিয়ে আলোচনা করতে চান না।
“ইরানে আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সমস্ত জটিলতার মধ্যেও দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের চারপাশে সমাজ ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে,” বৃহস্পতিবার রাশিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় শহর সেইন্ট পিটার্সবার্গে বার্তা সংস্থাগুলোর জ্যেষ্ঠ সম্পাদকদের পুতিন এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
রুশ প্রেসিডেন্ট বলছেন, সবপক্ষেরই উচিত এমনভাবে বৈরিতার অবসান ঘটানো যেখানে ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি চালানোর অধিকারও নিশ্চিত হবে আবার ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলের সম্পূর্ণ নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা যাবে।
এমন এক সময়ে পুতিন এসব বলেছেন যখন ইরানে হামলায় ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যোগ দেবে কিনা, তা নিয়ে ট্রাম্প বিশ্বকে ধন্দে রেখেছেন।
রুশ প্রেসিডেন্ট জানান, তার সঙ্গে ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর যোগাযোগ আছে। বেসামরিক খাতে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারে ইরানের অধিকার সঙ্কুচিত না করেই কী করে সংঘাতের সমাধান করা যায়, তা নিয়ে মস্কোর ভাবনা তিনি দুজনের কাছে পৌঁছেও দিয়েছেন।
ইরানে শাসনব্যবস্থার সম্ভাব্য পরিবর্তন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে পুতিন বলেন, কোনো কিছুতে নামার আগে, কোনো কিছু শুরুর আগে মূল লক্ষ্যটি আদৌ পূরণ হচ্ছে কি না, সেদিকে নজর দেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, ইরানের ভূগর্ভস্থ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রগুলো এখনও অক্ষতই আছে।
“ওই ভূগর্ভস্থ কারখানাগুলো, এখনো বহাল, কিছুই হয়নি সেগুলোর।
“আমার মনে হয়, সবারই উচিত হবে শত্রুতা বন্ধের উপায় বের করা এবং বিবদমান সকল পক্ষের একে অপরের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছানোর পথ খোঁজা। মোটাদাগে এ ধরনের সমাধান পাওয়া যাবে বলেই আমার মত,” বলেছেন পুতিন।
ইসরায়েলি হামলা থেকে সুরক্ষা পেতে রাশিয়া ইরানকে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র দেবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জানুয়ারিতে তেহরানের সঙ্গে মস্কোর যে কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি হয়েছে তাতে সামরিক সহযোগিতার বিষয়টি বিবেচনা করা হয়নি, তাছাড়া ইরান এ সহযোগিতার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো অনুরোধও করেনি।
রুশ উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ বুধবার বলেছেন, মস্কো যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়ে দিয়েছে যেন তারা ইরানে হামলা না চালায়, কারণ এতে মধ্যপ্রাচ্য চরমভাবে অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্রও সতর্ক করে বলেছেন, ইরানি পরমাণু স্থাপনায় ইসরায়েলি হামলা পারমাণবিক বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটাতে পারে।
পুতিন জানান, রাশিয়া ইরানে বুশেহর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আরও দুটি চুল্লি নির্মাণে সহযোগিতা করছে এবং ওই কেন্দ্রে বিমান হামলা চালানো হবে না বলে ইসরায়েল মস্কোকে আশ্বস্ত করেছে।
ইরানের সঙ্গে মস্কোর খুবই চমৎকার সম্পর্ক বিদ্যমান এবং তেহরান চাইলে তাদের পরমাণু শক্তি সংক্রান্ত স্বার্থ রাশিয়া নিশ্চিত করতে পারে, বলেছেন পুতিন।
তিনি জানান, রাশিয়া ইরানের কাছ থেকে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম নিয়ে তেহরানের বেসামরিক পরমাণু কর্মসূচির জন্য প্রয়োজনীয় পারমাণবিক জ্বালানি সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছে।
“শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তি খাতে ইরানের স্বার্থ রক্ষা যেমন সম্ভব, তেমনি নিরাপত্তা নিয়ে ইসরায়েলের উদ্বেগও দূর করা সম্ভব। এ নিয়ে আমাদের প্রস্তাবগুলো আমরা যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও ইরানের অংশীদারদের দিয়েছি,” বলেছেন তিনি।