Published : 12 Jun 2025, 01:38 PM
যুক্তরাষ্ট্রের অবৈধ অভিবাসনবিরোধী অভিযান ঘিরে প্রায় এক সপ্তাহের অস্থিরতার পর লস অ্যাঞ্জেলেসে টানা দ্বিতীয় রাত কারফিউ জারি করা হয়েছে।
বুধবার রাত ৮টার দিকে কারফিউ শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই সহিংসতার অভিযোগে শহরতলি থেকে একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সিবিএস নিউজ।
যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ শহরে শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভে এ পর্যন্ত প্রায় ৪০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৩৩০ জনই কাগজপত্রহীন অভিবাসী। আর ১৫৭ জনকে আটক করা হয়েছে হামলা ও সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগে, এদের মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে পুলিশ কর্মকর্তা হত্যাচেষ্টার অভিযোগও আনা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
ফেডারেল কৌঁসুলিরা এখন পর্যন্ত পৃথক দুই ঘটনায় দুইজনের বিরুদ্ধে পুলিশ কর্মকর্তাদের দিকে মলোটোভ ককটেল ছুড়ে মারার অভিযোগ এনেছেন।
অস্থিরতা দমনে শহরটিতে মোট ৪ হাজার ন্যাশনাল গার্ড সেনা এবং ৭০০ মেরিন সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে ন্যাশনাল গার্ডের কিছু সেনাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করার আগ পর্যন্ত লোকজনকে আটকে রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
রাতে কারফিউ শুরু হওয়ার পর লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র ক্যারেন বাস এক্সে লিখেছেন, “প্রেসিডেন্টের তৈরি করা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতর সুযোগ নেওয়া খারাপ ব্যক্তিদের থামানোর লক্ষ্যে এই কারফিউ দেওয়া হয়েছে।”
এর আগে তিনি শহরে অস্থিরতার জন্য প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী অভিযানকে দায়ী করেছিলেন। বলেছিলেন, ওই অভিযান ‘ভয়’ ও ‘আতঙ্ক’ সৃষ্টি করে শহরবাসীকে ‘উসকে’ দিয়েছে।
“সপ্তাহখানেক আগেও সবই শান্ত ছিল। শুক্রবার অভিযান শুরুর পর পরিস্থিতি জটিল হওয়া শুরু করে,” বুধবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন বাস।
তার ধারণা, স্থানীয় সরকার ও আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার কতদূর যেতে পারে তা দেখতে জাতীয় পর্যায়ে হওয়া পরীক্ষা-নিরীক্ষা অংশ হয়েছে এই লস অ্যাঞ্জেলেস।
নারী এ মেয়র এর আগে ট্রাম্প প্রশাসনকে অভিবাসনবিরোধী অভিযান বন্ধের আহ্বান জানিয়েছিলেন ।
ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগে মঙ্গলবার রাতে শহরের ছোট একটি অংশে রাত ৮টা থেকে কারফিউ জারি করেন মেয়র বাস। পুলিশ ওই এলাকায় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে রাবার বুলেট ছোড়ে।
পুলিশ প্রধান জিম ম্যাকডনেল বলেছেন, “বিক্ষোভের কিছু ছবি দেখে মনে হচ্ছে যেন পুরো শহরই জ্বলছে, কিন্তু বাস্তবতা তা নয়।”
কারফিউ ‘কিছুটা কাজে দিয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডিও।
শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ খানিকটা ‘স্তিমিত হয়ে এলেও’ শহরটিতে অভিবাসনবিরোধী অভিযান থেমে নেই।
ট্রাম্পের সেনা মোতায়েনের পদক্ষেপ নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজম বলেছেন, “এটা গণতন্ত্রের ওপর সরাসরি আঘাত। আজ ক্যালিফোর্নিয়া, কাল অন্য রাজ্য। এরপর গণতন্ত্র। আমাদের চোখের সামনেই গণতন্ত্র এখন আক্রমণের শিকার হচ্ছে।”
রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে তার প্রশাসন প্রতিদিন অন্তত ৩ হাজার অবৈধ অভিবাসী গ্রেপ্তারের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিল। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর তিনি যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে অবৈধ প্রবেশের পরিমাণ ইতিহাসের যে কোনো সময়ের চেয়ে নিচে নামিয়ে এনেছেন।
সিবিএস নিউজ/ইউগভ-এর এক জরিপে দেখা গেছে, ট্রাম্প যেভাবে কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের ফেরত পাঠাচ্ছেন তাতে যুক্তরাষ্ট্রের ৫৪ শতাংশ মানুষের সমর্থন আছে, তিনি যেভাবে অভিবাসন সামলাচ্ছেন তাতেও সায় আছে ৫০ শতাংশের।
তবে অর্থনীতি বা মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় তার পদক্ষেপগুলোর জনপ্রিয়তা তুলনামূলকভাবে কম। জরিপে ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতির পক্ষে দেখা গেছে ৪২ শতাংশ অংশগ্রহণকারীকে, মূল্যস্ফীতি মোকাবেলায় তার নেওয়া নীতির সমর্থক মাত্র ৩৯ শতাংশ।
লিংক হবে-
লস অ্যাঞ্জেলেসকে 'মুক্ত' করতে চান ট্রাম্প, বাসিন্দাদের 'না'
লস অ্যাঞ্জেলেসে কারফিউ জারি, ট্রাম্পের ‘মুখোমুখি দাঁড়ানোর’ আহ্বান নিউজমের