Published : 12 Jun 2025, 12:47 AM
যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনবিরোধী অভিযানের প্রতিবাদে বিক্ষোভকারীরা সংঘর্ষে জড়ালে রোববার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশ্যে একটি সতর্কতা জারি করে লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ ডিপার্টমেন্টের সেন্ট্রাল ডিভিশন।
সেদিন এক্সে এক পোস্টে লস অ্যাঞ্জেলেসের বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্র ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়ার কথা বলে কর্তৃপক্ষ। অর্থাৎ অস্ত্রগুলো প্রাণঘাতী হবে না, কিন্তু ব্যথা ও অস্বস্তির কারণ হতে পারে।
শুক্রবার শুরু হওয়া বিক্ষোভ দমনে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, তাতে বিক্ষোভ গড়ায় সহিংসতায়।
বিক্ষোভকারীরা চালকবিহীন গাড়িগুলোতে আগুন দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের ওপর মোটরসাইকেল চালিয়ে দেওয়া হয়, তাতে দুজন আহত হন। কর্মকর্তাদের ওপর ককটেল ছোড়ার অভিযোগ তুলে সহিংসতার নিন্দা জানান লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ ডিপার্টমেন্টের প্রধান জিম ম্যাকডোনেল।
বিক্ষোভ দমাতে শক্তি প্রয়োগ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ছোড়া হয় ‘ফ্ল্যাশ ব্যাং’, যাতে বিকট শব্দে খানিকটা বধির হয়ে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। চোখে হঠাৎ বিশাল আলোর ঝলকানি তাদের দৃষ্টিশক্তি দুর্বল করে দেয়। এ ছাড়া টিয়ার গ্যাস, পিপার বল, রাবার বুলেট ও বিন ব্যাগ রাউন্ড ও ব্যাটনের মত প্রচলতি সব অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করা হয়।
মার্কিন সরকারের প্রতিরক্ষা বিভাগ বলছে, এ অস্ত্রগুলো ‘কম মারাত্মক’ বা ‘প্রাণঘাতী নয়’ বলা হয়। জটলা বা বিক্ষোভ থামাতে বা ছত্রভঙ্গ করতে এগুলো ব্যবহার করা হয়। ফলে প্রাণহানি, গুরুতর আঘাত এবং সম্পদ, অবকাঠামো ও পরিবেশের ক্ষতি এড়ানো যায়।
তবে এর মানে এই নয় যে সেগুলো ক্ষতির কারণ নয়। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের হাতে জর্জ ফ্লয়েডের প্রাণ হারানোর ঘটনায় বিক্ষোভ হয়েছিল। গবেষকরা দেখতে পান, বিক্ষোভ দমাতে প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্র, বিশেষ করে রাবার বুলেট ব্যবহারে অনেক আহত হন।
‘ভোঁতা অস্ত্র’
লস অ্যাঞ্জেলেসে বেশ কিছু ‘ভোঁতা অস্ত্র’ বা হাতিয়ার ব্যবহার করেছে কর্তৃপক্ষ। বিক্ষোভ দমাতে সেগুলোর সক্ষমতা ২০২৫ সালে নিজেদের এক প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে ‘কংগ্রেসনাল রিসার্চ সার্ভিস’ (সিআরএস)।
এসব অস্ত্রের একটি হল ‘ব্যাটন’ বা লাঠি। সিআরএসের প্রতিবেদনে বলা হয়, হাতিয়ারটি সবচেয়ে পুরনো, গতিশীল, তবে খুব বেশি মারাত্মক নয়। ‘নাইটস্টিক’ নামেও পরিচিত ব্যাটনে হাতলও থাকে। এটি ভিড় নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হয়।
সিএনএন লিখেছে, রোববার বিকালে লস অ্যাঞ্জেলেসে বিক্ষোভকারীদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে এবং তাদের আঘাত করতেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাটন ব্যবহার করেছে।
এছাড়া বিক্ষোভে ভোঁতা অস্ত্রসরঞ্জামের মধ্যে রাবার বুলেট ও ‘বিন ব্যাগ রাউন্ড’ ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
সিআরএসের প্রতিবেদন বলছে, বেশ দূরে থেকে ভিড় বা বিক্ষোভ দমাতে এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। এতে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে ও চামড়ায় সাময়িক আঘাত লাগে।
প্রাণঘাতী না ধরা হলেও রাবার বুলেট লাগলে শরীরের অংশ অকেজো হয়ে পড়া, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
রোববার যুক্তরাষ্ট্রের বিক্ষোভ চলার সময় সিএনএনের সহযোগী অস্ট্রেলিয়ার নাইন নিউজের সাংবাদিক লরেন টমাসির পায়ে রাবার বুলেট লাগে। এতে তিনি ব্যথা পান, তবে অক্ষত ছিলেন।
আর ছোট ছোট বস্তু বা ‘পিলেটে’ ভরা ‘বিন ব্যাগ রাউন্ড’ ছোড়া হয় শটগান থেকে। প্রতিটিতে ১ দশমিক ৪ আউন্স ‘পিলেট’ থাকে।
‘রাসায়নিক উপাদান’
লস অ্যাঞ্জেলেসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাসায়নিক উপাদান মিশ্রিত হাতিয়ার ব্যবহার করেছে। এতে বিক্ষোভকারীদের সাইনাস ও ফুসফুসের সমস্যা হয়। চামড়া জ্বালাপোড়াসহ তীব্র ব্যাথাও থাকে। সবকিছু মিলিয়ে এ ধরনের অস্ত্রের আঘাতে বেশ কিছু সময়ের জন্য মানুষ স্বাভাবিক চলাফেরার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
এসব হাতিয়ারের আরেকটি হল কাঁদুনে গ্যাস। এতে চোখ-নাক জ্বালাপোড়া করে। কফ, শ্বাসকষ্ট ও গলা ধরে আসা বা বুক চেপে আসার মত অনুভূতি হয়।
সিআরএসের প্রতিবেদন বলছে, বিক্ষোভ দমাতে সাধারণত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাঁদুনে গ্যাস ছোড়েন, যা ছড়ায় গ্রেনেড বা এ জাতীয় কিছুতে থাকা পাউডার থেকে।
‘পিপার স্প্রে’ প্রায় একই রকম। কিন্তু সেটা প্রয়োগ করা হয় হাত দিয়ে কাছ থেকে। এটি সাময়িক নাক-মুখ জ্বালাপোড়া করলেও পরে চিকিৎসার দরকার পড়ে না। ‘পিপার বলও’ টিয়ার গ্যাসের মত দূর থেকে ছোড়া হয় এবং জ্বালাপোড়া তৈরি করে।
‘ফ্ল্যাশ-ব্যাং ডিভাইস’
লস অ্যাঞ্জেলেসে বারবার ‘ফ্ল্যাশ-ব্যাং’ ব্যবহার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, যেন বিক্ষোভকারীরা বিকট শব্দে কিছু সময় বধির ও আলোর ঝলকানিতে দৃষ্টি হারিয়ে ফেলেন।
সিআরএস বলছে, কোনো ডিভাইস থেকে বা হাত দিয়ে ‘ফ্ল্যাশ-ব্যাং’ ছোড়া হয়ে থাকে। এর বিস্ফোরক পদার্থ উজ্জ্বল আলো তৈরি করে। সেইসঙ্গে সেটি ছোড়ার পর বিকট শব্দ হয়। অবরোধকারীদের সরিয়ে দেওয়া কিংবা ভিড় বা বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ এটি ব্যবহার করে।