Published : 05 Apr 2025, 07:00 PM
থাইল্যান্ডের একটি আদালত রাজপরিবারকে অবমাননার অভিযোগে কঠোর রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের আওতায় পল চেম্বার্স নামের একজন মার্কিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
মধ্য থাইল্যান্ডের নারেসুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক চেম্বার্সের বিরুদ্ধে থাই সেনাবাহিনী এই অভিযোগ দায়ের করেছে। তার আইনজীবীর বরাতে জানা গেছে, তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ ও কম্পিউটার অপরাধ আইনের আওতায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
বিবিসি লিখেছে, পল চেম্বার্স এবং তার আইনজীবী মঙ্গলবার পুলিশের কাছে হাজিরা দেবেন। সেখানে অভিযোগগুলো মামলা হিসেবে নথিবদ্ধ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চেম্বার্সের প্রতিনিধিত্বকারী ‘থাই লইয়ারস ফর হিউম্যান রাইটস সেন্টার’-এর আইনজীবী আকারাচাই চাইমেনিকরাকেত বিবিসিকে জানিয়েছেন, অভিযোগের সুনির্দিষ্ট কারণ তিনি জানেন না।
রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে দোষী সাব্যস্ত হলে প্রতি অভিযোগে চেম্বার্সের তিন থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
এই আইনটি সাধারণত বিদেশিদের বিরুদ্ধে খুব একটা প্রয়োগ করা হয় না, তবে অতীতে এমন নজির রয়েছে বলে জানান আকারাচাই।
চেম্বার্সের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী যে অভিযোগ তুলেছে, তার মধ্যে রয়েছে—রাজপরিবারের বিরুদ্ধে ‘মানহানি, অবমাননা বা বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ’, ‘জাতীয় নিরাপত্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির’ কারণ হতে পারে এমন ‘মিথ্যা কম্পিউটার তথ্য আমদানি’ ও ছড়ানো। শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে পুলিশের পাঠানো এক চিঠিতে এসব অভিযোগের উল্লেখ আছে বলে তার আইনজীবী জানিয়েছেন।
থাই লইয়ারস ফর হিউম্যান রাইটস সেন্টার আরও জানায়, আদালত সোমবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
মঙ্গলবার মামলা হলে চেম্বার্সকে হয়ত জামিনে মুক্তি দেওয়া হবে, অথবা তাকে আটক করা হতে পারে—এমন পরিস্থিতিতে তার আইনজীবী জামিনের আবেদন করবেন।
পুলিশ এরপর তদন্ত চালাবে এবং অপরাধের প্রমাণ পেলে তা রাষ্ট্রপক্ষের হাতে তুলে দেবে। পরে রাষ্ট্রপক্ষ বিচারিক প্রক্রিয়ার সিদ্ধান্ত নেবে।
লিঙ্কডইনে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, পল চেম্বার্স ৩০ বছর আগে প্রথম থাইল্যান্ডে বসবাস ও কাজ শুরু করেন এবং এরপর থেকে তিনি থাইল্যান্ডে শিক্ষা ও গবেষণার সঙ্গে যুক্ত। দেশটির সেনাবাহিনী নিয়েও তিনি বই লিখেছেন। এর আগে তার নামে কোনও সমন জারি হয়নি বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী।
থাইল্যান্ডে ১৯০৮ সালে প্রথম ফৌজদারি দণ্ডবিধি চালুর সময় থেকেই রাজপরিবার অবমাননা আইন রয়েছে, তবে ১৯৭৬ সালে এই আইনের সাজা আরও কঠোর করা হয়।
সরকার বলছে, রাজতন্ত্র রক্ষায় এই আইন প্রয়োজনীয়। তবে সমালোচকদের মতে, এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমন করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
গত মাসে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট থাইল্যান্ডকে এই আইন সংস্কারের আহ্বান জানিয়ে বলেছে, এটি বিশ্বের সবচেয়ে কঠোর আইনগুলোর একটি। একই সঙ্গে, এর আওতায় অভিযুক্তদের সাধারণ ক্ষমার দাবি জানানো হয়েছে।
আকারাচাই জানান, আগামী বুধবার থাই সংসদে সাধারণ ক্ষমা সংক্রান্ত খসড়া বিল নিয়ে আলোচনা হবে।