Published : 27 Feb 2025, 12:49 AM
মিয়ানমারের বহু মানুষ, বিশেষত গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দারা আর্থিক সংকটে পড়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। দেশটিতে ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর জটিল হয়ে ওঠা রাজনৈতিক পরিস্থিতি জনগণের জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।
এমন পরিস্থিতিতে ফুটে উঠেছে এক ভয়াবহ চিত্র। অর্থাভাবে বহু মানুষ মরিয়া হয়ে বেআইনিভাবে হলেও নিজেদের কিডনি বিক্রি করে দিচ্ছে।
বিবিসি-র এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, কীভাবে মিয়ানমারের এক খামার শ্রমিক জেয়া এবং আরেক গ্রামবাসী মায়ো উইনের মতো সাধারণ মানুষরা দারিদ্র্য মোকাবেলায় এ বিপজ্জনক পথে পা বাড়িয়েছেন:
যেভাবে কিডনি বিক্রির পথ খুঁজে পান জেয়া:
মিয়ানমারের এই খামার শ্রমিক বলেন,"আমি শুধু একটা বাড়ির মালিক হতে চেয়েছিলাম, সঙ্গে ঋণের বোঝা কমাতে চেয়েছিলাম—এ কারণেই কিডনি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিই।"
২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়তে থাকে। জেয়ার আয় কমে যায়, ফলে পরিবারে খরচ বহন করা তার জন্য কঠিন হয়ে ওঠে।
এরই মধ্যে তিনি ঋণেরভারে জর্জরিত হয়ে পড়েন। জেয়ার পুরো পরিবার তার শাশুড়ির বাড়িতে থাকতেন। একটি প্রত্যন্ত গ্রাম, যেখানে দেশের প্রধান শহর ইয়াঙ্গুন থেকে যেতে কয়েক ঘণ্টা লাগে।
খড়ের ছাউনি দেওয়া ছোট ঘর, কাঁচা রাস্তার এ গ্রাম। জেয়া জানতেন, তার আশপাশে কয়েকজন কিডনি বিক্রি করেছেন। “তাদের দেখে সুস্থই মনে হচ্ছিল,” বলেন তিনি।
তাই নিজেও কিডনি বিক্রির উপায় খুঁজতে শুরু করেন। জেয়া তাদেরই একজন, যারা ভারতে গিয়ে কিডনি বিক্রি করেছেন। বিবিসি বার্মিজকে ওই অঞ্চলের অন্তত আটজন জানিয়েছেন, তারা একই পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন।
এশিয়াজুড়েই অবৈধ অঙ্গ বাণিজ্য একটি বড় সমস্যা। জেয়ার অভিজ্ঞতা সেই নিষ্ঠুর বাস্তবতারই এক ঝলক তুলে ধরেছে। মিয়ানমার ও ভারতে মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেনাবেচা বেআইনি।
তবে জেয়া জানান, তিনি অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এক ব্যক্তির সন্ধান পান, যাকে তিনি ‘দালাল’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
জেয়ার ভাষ্য অনুযায়ী, ওই দালাল তার ডাক্তারি পরীক্ষার ব্যবস্থা করেন এবং কয়েক সপ্তাহ পর জানান, একজন সম্ভাব্য গ্রহীতা পাওয়া গেছে। যিনি একজন বার্মিজ নারী। এরপর অস্ত্রোপচারের জন্য তাদের ভারতে যাওয়ার পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়।
ভারতে দাতা ও গ্রহীতা যদি নিকটাত্মীয় না হন, তবে তাদের প্রমাণ করতে হয় যে, এই দান নিছক মানবিক উদ্দেশ্যে, কোনও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে নয়।
তাই সেই নিয়ম এড়াতে দালাল একটি ভুয়া নথি তৈরি করে, যা মিয়ানমারের প্রতিটি পরিবারের জন্য থাকা বাধ্যতামূলক নথির অনুরূপ। এতে পরিবারের সদস্যদের বিবরণ লেখা থাকে। "দালাল গ্রহীতার পারিবারিক নথিতে আমার নাম ঢুকিয়ে দেয়," বলেন জেয়া।
তিনি আরও জানান, দালাল নথিটি এমনভাবে সাজান, যাতে মনে হয় তিনি বিবাহসূত্রে আত্মীয়। যিনি রক্তের সম্পর্কিত নন, তবে দূর সম্পর্কের আত্মীয় হিসেবে বিবেচিত হতে পারেন।
কিডনি বিক্রির পক্রিয়া বর্ণনা করে জেয়া বলেন, দালাল তাকে ইয়াঙ্গুনে নিয়ে যান গ্রহীতার সঙ্গে দেখা করেন। সেখানে এক ব্যক্তি, যিনি নিজেকে চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন, আরও কিছু নথির কাজ সম্পন্ন করেন।
তিনি সতর্ক করে দেন, যদি জেয়া শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন, তাহলে তাকে বড় অঙ্কের জরিমানা দিতে হবে। বিবিসি পরে ওই ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তার কাজ কেবল রোগীর শারীরিক উপযুক্ততা পরীক্ষা করা, দাতা ও গ্রহীতার সম্পর্ক যাচাই করা নয়।
জেয়াকে জানানো হয়েছিল, অস্ত্রোপচারের বিনিময়ে তিনি ৭৫ লাখ মিয়ানমার কিয়াত (প্রায় ১,৭০০ থেকে ২,৭০০ মার্কিন ডলার) পাবেন। এরপর তিনি উত্তর ভারতে যান। সেখানে একটি বড় হাসপাতালে অস্ত্রোপচারটি সম্পন্ন হয়।
ভারতে বিদেশি নাগরিকদের অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে হাসপাতাল বা স্থানীয় সরকারের অধীনে থাকা অনুমোদন কমিটির অনুমোদন প্রয়োজন। জেয়া জানান, অস্ত্রোপচারের আগে এক অনুবাদকের মাধ্যমে চারজন তার সাক্ষাৎকার নেন।
জেয়া জানান, অস্ত্রোপচারের আগে কর্তৃপক্ষ তাকে জিজ্ঞাসা করেছিল যে, তিনি স্বেচ্ছায় কিডনি দান করছেন কি না, কোনও জোরজবরদস্তি ছিল কি না। তিনি বলেন, "আমি তাদের বলেছিলাম যে, গ্রহীতা আমার আত্মীয়, এবং এরপর প্রতিস্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হয়," বলেন তিনি।
জেয়ার কথায়, "অস্ত্রোপচারের পর বড় কোনও সমস্যা হয়নি, তবে প্রচণ্ড ব্যথার কারণে আমি সহজে নড়াচড়া করতে পারছিলাম না।” এরপর এক সপ্তাহ তিনি হাসপাতালে কাটিয়েছিলেন বলে জানান।
'নকল মা'
আরেক দাতা, মায়ো উইন (ছদ্মনাম), বিবিসি-কে বলেন, তিনিও আত্মীয় সাজার ভান করেছিলেন। "দালাল আমাকে একটি কাগজ ধরিয়ে দেয়, এবং তাতে যা লেখা ছিল তা আমাকে মুখস্থ করতে হয়েছিল," বলেন তিনি।
তাকে বলা হয়েছিল, গ্রহীতা তার এক আত্মীয়ের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ। "আমার বিষয়টি পর্যালোচনা করা ব্যক্তি আমার মাকে ফোন করেন, কিন্তু দালাল আগেই একজন 'নকল মা' - এর ব্যবস্থা করে রাখে," বলেন মায়ো উইন।
তিনি আরও জানান, ওই নারী কল ধরে নিশ্চিত করেন, তিনি সত্যিই তার এক আত্মীয়কে কিডনি দান করছেন। মায়ো উইন জানান, তাকেও জেয়ার সমপরিমাণ অর্থের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।
তবে এটি "দাতব্য অনুদান" হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছিল এবং মায়োকে তার দালালকে মোট অর্থের প্রায় ১০% দিতে হয়েছিল। উভয় দাতাই জানান, অস্ত্রোপচারের আগে তাদের প্রাপ্য অর্থের এক-তৃতীয়াংশ অগ্রিম দেওয়া হয়েছিল।
মায়ো বলেন, অস্ত্রোপচার কক্ষে প্রবেশের মুহূর্তে তার মনে একটাই চিন্তা ঘুরছিল— “আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি যে, আমাকে একাজ করতেই হবে, কারণ আমি ইতিমধ্যে তাদের টাকা নিয়ে ফেলেছি।”
তিনি আরও বলেন, চরম আর্থিক সংকটের কারণে তিনি এ পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। স্ত্রীর চিকিৎসা খরচ ও ঋণের বোঝা তাকে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে।
২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারে বেকারত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। যুদ্ধ পরিস্থিতি দেশের অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করেছে, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছে।
জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা (ইউএনডিপি) জানিয়েছে, ২০১৭ সালে দেশটির এক-চতুর্থাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে ছিল, কিন্তু ২০২৩ সালে তা বেড়ে অর্ধেক হয়েছে।
মায়ো উইন বলেন, দালাল কখনও তাকে জানাননি যে, কিডনি বিক্রি বেআইনি। "যদি তিনি বলতেন, আমি এটি করতাম না। আমি জেলে যাওয়ার ভয় পাচ্ছি," বলেন তিনি।
সাক্ষাৎকারদাতাদের নিরাপত্তার স্বার্থে বিবিসি সংশ্লিষ্ট কোনও সংস্থা বা ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেনি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মিয়ানমারের এক ব্যক্তি বিবিসি-কে জানিয়েছেন, তিনি ভারতে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রায় ১০ জনকে কিডনি কিনতে বা বিক্রি করতে সহায়তা করেছেন।
তিনি জানান, মধ্য মিয়ানমারের মান্দালয়ে একটি ‘এজেন্সি’র কাছে দাতাদের রেফার করতেন। তার ভাষায়, "দাতাদের নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। আমাদের কাছে এমন দাতাদের তালিকা রয়েছে, যারা কিডনি দানের জন্য প্রস্তুত।"
তিনি আরও জানান, দাতা ও গ্রহীতার মধ্যে সম্পর্ক দেখানোর জন্য নথিপত্র জাল করা হত, যেখানে অপরিচিত ব্যক্তিদের বিবাহসূত্রে আত্মীয় হিসেবে উপস্থাপন করা হত। তবে তিনি এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোনও আর্থিক সুবিধা পেয়েছেন কি না, সে প্রশ্নের উত্তর তিনি দেননি।
ভারতে গ্রেপ্তার অভিযান:
দারিদ্র্যের কারণে অর্থাভাবে কিডনি বিক্রির ঘটনা সম্প্রতি কয়েক বছরে এশিয়া জুড়ে বিভিন্ন দেশেই নথিভুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নেপাল, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, আফগানিস্তান, ভারত এবং বাংলাদেশও।
ভারত বহুদিন ধরেই চিকিৎসা গ্রহণের জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্য হিসেবে পরিচিত। তবে সাম্প্রতিক পুলিশি তদন্ত ও সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনের পর দেশটিতে কিডনি বিক্রি নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে।
গত জুলাইয়ে ভারতীয় পুলিশ কিডনি পাচারের অভিযোগে এক চিকিৎসক ও তার সহকারীসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশের তথ্যানুযায়ী, এই চক্র দরিদ্র বাংলাদেশিদের কিডনি বিক্রির ব্যবস্থা করত এবং প্রতিস্থাপনের অনুমোদন পেতে জাল কাগজপত্র ব্যবহার করত।
ভারতের রাজধানী দিল্লির ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হাসপাতালের চিকিৎসক বিজয়া রাজাকুমারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, তিনি ইয়াথার্থ হাসপাতালের ভিজিটিং কনসালট্যান্ট হিসেবে এই অস্ত্রোপচার করেন।
তবে তার আইনজীবী বিবিসি-কে জানিয়েছেন, এসব অভিযোগ "সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন"। তিনি দাবি করেন, ডাঃ রাজাকুমারী কেবল অনুমোদন কমিটির অনুমোদিত অস্ত্রোপচারই করেছেন এবং সর্বদা আইন মেনেই কাজ করেছেন।
জামিন আদেশেও উল্লেখ করা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে জাল কাগজপত্র তৈরির কোনও অভিযোগ নেই। ইয়াথার্থ হাসপাতাল বিবিসি-কে জানিয়েছে, পরিদর্শনকারী পরামর্শদাতাদের (ভিজিটিং কনসালট্যান্ট) পরিচালিত সব চিকিৎসা প্রক্রিয়া কঠোর নিয়ম ও নৈতিক মানদণ্ডের আওতায় পরিচালিত হয়।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে তাদের প্রক্রিয়া আরও কঠোর করা হয়েছে। অন্যদিকে, রাজকুমারী গ্রেপ্তার হওয়ার পর অ্যাপোলো হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাজাকুমারী তাদের প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত চিকিৎসক নন, বরং একজন ফ্রিল্যান্স কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করছিলেন। তিনি আদালতে অভিযুক্তও হননি।
‘অনুশোচনা নেই’
ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গত এপ্রিলে দেশটির রাজ্য সরকারগুলোকে চিঠি দিয়ে বিদেশিদের অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে সতর্ক করেন এবং এ বিষয়ে আরও কঠোর পর্যবেক্ষণের আহ্বান জানান।
ভারতীয় আইনে নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী, বিদেশি নাগরিকদের অঙ্গ দানের ক্ষেত্রে নিজ দেশের ভারতে অবস্থিত দূতাবাসের যাচাই করা নথি আবশ্যক। তবে বিবিসি এ বিষয়ে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ন্যাশনাল অর্গান অ্যান্ড টিস্যু ট্রান্সপ্লান্ট অর্গানাইজেশন এবং মিয়ানমারের সামরিক সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কোনো প্রতিক্রিয়া পায়নি।
মিয়ানমারের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. থুরিন হ্লাইং উইন বলেন, "আইন কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে না।"
তিনি আরও জানান, দাতাদের অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি, কারণ এতে রক্তপাত ও অন্যান্য অঙ্গের ক্ষতির মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে। এছাড়া, অস্ত্রোপচারের পর দাতাদের জন্য পর্যাপ্ত ফলো-আপ চিকিৎসা নিশ্চিত করাও গুরুত্বপূর্ণ।
বিবিসি-র সঙ্গে মিয়ানমারের খামার শ্রমিক জেয়ার সর্বশেষ যোগাযোগ হয় অস্ত্রোপচারের কয়েক মাস পর। অস্ত্রোপচারের পর, জেয়া তার ঋণ পরিশোধ করতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং একটি জমির প্লট কিনেছিলেন।
তবে, তিনি বাড়িটি এখনও তৈরি করতে পারেননি। কারণ অস্ত্রোপচারের পর কিছুটা অসুস্থ ছিলেন তিনি। জেয়া বলেছেন, “আমি শিগগিরই কাজ শুরু করতে চাই, কিন্তু যদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আবার আঘাত হানে, আমাকে এটি মোকাবেলা করতেই হবে। তবে এ নিয়ে আমার কোনও অনুশোচনা নেই।”
তিনি উল্লেখ করেন, অস্ত্রোপচারের পরে কিছু সময় গ্রহীতার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন, এবং তিনি জানিয়েছেন, গ্রহীতা তার কিডনি নিয়ে সুস্থ আছেন।
ওদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রহীতা বিবিসি-কে জানান, “সব মিলিয়ে আমি ১০০ মিলিয়ন কিয়াত (প্রায় ২২,০০০ থেকে ৩৫,০০০ ডলার) পরিশোধ করেছি।" তিনি জাল নথির বিষয়টি অস্বীকার করেন এবং দাবি করেন, জেয়া তার আত্মীয়।
অন্যদিকে, মিয়ানমারের আরেক কিডনি দাতা মায়ো উইন অস্ত্রোপচারের ছয় মাস পর বিবিসি-কে জানান, তিনি তার বেশিরভাগ ঋণ পরিশোধ করেছেন, তবে কিছু ঋণ এখনও বাকি।
তিনি আরও জানান, অস্ত্রোপচারের পর থেকে পেটের কিছু সমস্যা ছিল, এবং তার জীবিকা নির্বাহের জন্য কোনও চাকরি নেই। "এখন আমার হাতে এক পয়সাও অবশিষ্ট নেই," বলেন তিনি।
জেয়ার মতো একই সুরে মায়োও বলেন, তার কোনও অনুশোচনা নেই, তবে পরে তিনি এও বলেন যে, "আমি অন্যদের (কিডনি বিক্রি) উৎসাহ দেব না। এটি ভাল না।"
বিশ্বে চাহিদার তুলনায় অঙ্গ সরবরাহ সীমিত:
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী অঙ্গ প্রতিস্থাপনের হার ৫০% এর বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে প্রতি বছর আনুমানিক ১,৫০,০০০ অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়।
তবে সংস্থাটি বলছে, বিশ্বে অঙ্গ সরবরাহ চাহিদার মাত্র প্রায় ১০ শতাংশই পূরণ করতে পারে । প্রায় সব দেশেই মানব দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ব্যবসা অবৈধ এবং তা পরিমাপ করাও কঠিন।
২০০৭ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমান করেছিল, বিশ্বব্যাপী প্রতিস্থাপিত অঙ্গের ৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ কালোবাজার থেকে আসে। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হয়।