Published : 15 May 2025, 06:31 PM
পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র আন্তর্জাতিক আনবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) তত্ত্বাবধানে থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং।
প্রায় তিন দশকের মধ্যে দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সামরিক সংঘাতের পর বৃহস্পতিবার তিনি এ মন্তব্য করেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল বেসামরিক পর্যটকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহতের প্রতিক্রিয়ায় ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরু করে ভারত, এর আওতায় নিয়ন্ত্রণরেখা সংলগ্ন এলাকা ও পাকিস্তান অধ্যুষিত কাশ্মীরের পাশাপাশি পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডে তাদের ভাষায় ‘সন্ত্রাসী আস্তানায়’ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়।
এই হামলাকে পাকিস্তানের ‘সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত’ বিবেচনা করে কয়েকদিন পর পাল্টা ‘অপারেশন বুনিয়ান-উল-মারছুছে’ নামে পাকিস্তান। এর মাঝখানে নিয়ন্ত্রণ রেখা ও আন্তর্জাতিক সীমানায় পাল্টাপাল্টি গোলাবর্ষণের অভিযোগ আনে নয়া দিল্লি ও ইসলামাবাদ।
পরে শনিবার দুই দেশ অস্ত্রবিরতিতে রাজি হয়।
“এমন দুর্বৃত্ত ও দায়িত্বজ্ঞানহীন রাষ্ট্রের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র কি নিরাপদ? আমি মনে করি, পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র আইএইএ-র তত্ত্বাবধানে নেওয়া উচিত,” ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী শ্রীনগরে সৈন্যদের উদ্দেশ্যে এমনটাই বলেন রাজনাথ।
তার এ বক্তব্যের পাল্টায় তাৎক্ষণিকভাবে পাকিস্তানের দিক থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
আইএইএ হলো ভিয়েনাভিত্তিক জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থা, যা বিশ্বের সব দেশের পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর নজর রাখে, যেন তা শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়।
অস্ত্রবিরতি নিয়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের ৬ ধরনের ভাষ্য প্রত্যাখ্যান ভারতের
পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ ও ড্রোন হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে অস্ত্রবিরতি হয়েছে তা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মন্তব্য ও বিবৃতির ৬টি বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে ভারত।
মার্কিন মধ্যস্থতা, বাণিজ্য নিয়ে চাপ এবং কাশ্মীর নিয়ে সম্ভাব্য আলোচনার ইঙ্গিতসহ অস্ত্রবিরতির প্রকৃতি নিয়ে মার্কিন নেতাদের বক্তব্যের অনেক কিছু মঙ্গলবার নয়া দিল্লির পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয় (এমইএ) প্রত্যাখ্যানও করেছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলাকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা যখন চরমে তখন শনিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে এবং তার কিছুক্ষণ পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় অস্ত্রবিরতির ঘোষণা দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে সম্ভাব্য পারমাণবিক সংঘাত এড়ানো গেছে বলে জানান।
অস্ত্রবিরতি মেনে নেওয়ায় দুই দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য বাড়াবে বলেও ইঙ্গিত দেন ট্রাম্প।
ভারত পরে এইসব ভাষ্য দৃঢ়তার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করে।
১. যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় অস্ত্রবিরতি হয়নি
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার তাদের ব্যাখ্যায় বলেছে, পাকিস্তান ও ভারতের ডিরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশনসের (ডিজিএমও-স) মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে সামরিক বাহিনী পর্যায়ের আলোচনায় অস্ত্রবিররতি নিয়ে সমঝোতা হয়েছে।
অথচ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, ওয়াশিংটনের মধ্যস্থতায় ‘দীর্ঘ রাতের’ আলোচনা শেষে দুই দেশ অস্ত্রবিরতিতে রাজি হয়। আর তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও বলেছিলেন, অস্ত্রবিরতি হয়েছে দুই দেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথোপকথনের পর।
২. পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে উত্তেজনার প্রশ্নই নেই
অস্ত্রবিরতির ঘোষণা দেওয়ার সময় ট্রাম্প ‘উত্তেজনা আরও বাড়লে লাখ লাখ লোক মারা পড়ত’ বলে সতর্ক করেছিলেন। এর প্রত্যুত্তরে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রনধীর জয়সোয়াল বলেছেন, ভারতের সামরিক প্রতিক্রিয়া ছিল পুরোপুরি অ-পারমাণবিক ‘প্রথাগত পরিসরের মধ্যে’ সীমিত।
৩. বাণিজ্য বিষয়ে কথা হয়নি
ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, অস্ত্রবিরতিতে রাজি করাতে তিনি ভারত ও পাকিস্তানকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘উল্লেখযোগ্য মাত্রার’ বাণিজ্য করার প্রস্তাব দিয়েছেন। নয়া দিল্লি এ ভাষ্যও খারিজ করে দিয়েছে।
“অপারেশন সিঁদুরের সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি,” মঙ্গলবার বলেছে তারা।
৪. কাশ্মীর নিয়ে মধ্যস্থতার সুযোগ নেই
কাশ্মীর নিয়ে ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রস্তাব এবং অঞ্চলটির সংঘাতকে ‘হাজার বছরের লড়াই’ হিসেবে বর্ণনার জবাবে ভারতীয় মুখপাত্র নয়া দিল্লির পুরনো অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
“আমাদের দীর্ঘদিনের রাষ্ট্রীয় নীতি হচ্ছে ভারতের কেন্দ্রশাসিত জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে যে কোনো সমস্যা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিকভাবেই মীমাংসিত হবে। এই নীতি বদলায়নি। আপনার জানেন, এখনও যেটার মীমাংসা হয়নি, তা হলো—পাকিস্তানের দখলে থাকা ভারতীয় ভূখণ্ডটুকু ফিরিয়ে দেওয়া,” বলেছেন জয়সোয়াল।
ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই কাশ্মীরকে নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে এলেও দুই দেশ এখন পৃথক দুটি অংশ শাসন করছে।
৫. পাকিস্তানের সঙ্গে ‘একই পাল্লায় তুলনাকে’ প্রত্যাখ্যান
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কূটনীতিকভাবে ভারত ও পাকিস্তানকে একই পাল্লায় মাপা বা ‘হাইফেনেশনেরও’ ঘোর বিরোধিতা করেছে।
“পেহেলগামে ভারতীয় পর্যটকরাই যে সন্ত্রাসবাদের শিকার হয়েছে এবং এই সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্র যে সীমান্তের ওপারে পাকিস্তানে, তা বিশ্বজুড়ে মোটামুটি স্বীকৃত। একাধিক বিদেশি নেতা তাদের ভারতীয় কাউন্টারপার্টদের সঙ্গে কথোপকথনে ভারতের আত্মরক্ষার অধিকার ও নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তাকে স্বীকার করে নিয়েছেন,” বলেছেন জয়সোয়াল।
৬. নিরপেক্ষ ভেন্যুতে কোনো আলোচনা নয়
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও বলেছিলেন, ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশ নিরপেক্ষ ভেন্যুতে বিস্তৃত আলোচনা শুরুর ব্যাপারে একমত হয়েছে।
এই ভাষ্য প্রত্যাখ্যান করে জয়সোয়াল বলেছেন, “এই ধরনের কোনো আলোচনার পরিকল্পনায় নেই।”
এসবের পাশাপাশি সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত থাকছে বলে মঙ্গলবারও ফের জোরের সঙ্গে জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।