Published : 12 May 2025, 11:25 AM
ফিলিপিন্সে সাধারণত মধ্যবর্তী নির্বাচন উত্তাপ না ছড়ালেও সোমবার যে ভোট চলছে, তাতে ছায়া লড়াই চলছে সহযোগী থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠা প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র ও ভাইস প্রেসিডেন্ট সারা দুতের্তের মধ্যে।
রয়টার্স লিখেছে, এদিন ১৮ হাজারের বেশি পদে ভোটগ্রহণ চলছে, যাতে তারা সরাসরি প্রার্থী না হলেও নিজেদের মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে জোরেশোরে প্রচার চালিয়েছেন। তাদের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা এমন এক প্রতিযোগিতায় রূপান্তরিত হয়েছে, যা ১১ কোটি মানুষের দেশটিতে ভবিষ্যত ক্ষমতার গতিপ্রকৃতিকে প্রভাবিত করতে পারে।
ভোটের জুয়ায় হেরে গেলে মার্কোসের নীতিগত কর্মসূচি, তার রাজনৈতিক উত্তরাধিকার এবং ২০২৮ সালে তার উত্তরসূরির ওপর প্রভাব বজায় রাখার বিষয়গুলো ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
অন্যদিকে সারা দুতের্তের রাজনৈতিক অস্তিত্বই এ নির্বাচনের ফলের উপর নির্ভরশীল হতে পারে, কারণ তার বিরুদ্ধে অভিশংসন বিচার শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে, যা ভবিষ্যতে তার প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন এবং বাবা রদ্রিগো দুতের্তের পদাঙ্ক অনুসরণের আশাকে শেষ করে দিতে পারে।
রয়টার্স লিখেছে, মেয়র, গভর্নর ও নিম্নকক্ষের আইনপ্রণেতা পদে নির্বাচন হলেও মার্কোস ও সারার লড়াই মূলত ২৪ সদস্যের সেনেটে কয়েকটি প্রত্যাশিত আসন নিয়ে। সেনেটের ব্যাপক আইনগত প্রভাব ও রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে, যা জনমত গঠন করতে এবং প্রেসিডেন্টের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ধ্বংস করতে সক্ষম।
মার্কোস ও সারা উভয়ই সোমবার সকালে নিজেদের শহরে ভোট দিয়েছেন। সারা বলেছেন, তিনি সম্প্রতি হেগে অবস্থানরত বাবার সঙ্গে কথা বলেছেন, যিনি ‘মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ অভিযানের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে এখন বিচারের মুখোমুখি।
সারা বলেন, তিনি বাবাকে বলেছেন যে- তার মনোনীত ১০ সেনেট প্রার্থীর মধ্যে দুজনের জয়ের সম্ভাবনা বেশি। ওই ১০ জনের সাবেক পুলিশপ্রধান রয়েছেন, যিনি মাদকবিরোধী যুদ্ধের তদারক করেছিলেন আর সেই অভিযানে হাজারে হাজার মানুষ নিহত হয়।
ফিলিপিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক এরিজ আরুগাই বলেছেন, “এই নির্বাচন মার্কোস প্রশাসনের ওপর একটি অনানুষ্ঠানিক গণভোটের চেয়েও বেশি।
“সেনেটে প্রতিদ্বন্দ্বিতাই হল মূল লড়াই... মার্কোসের আইনগত ও অর্থনৈতিক কর্মসূচি এগিয়ে নিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা বা সুপারমেজরিটি ধরে রাখা প্রয়োজন।”
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম লিখেছে, সকাল ৫টা থেকে শুরু হওয়া ভোট চলবে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। ভোট কাউন্টিং মেশিনের কারিগরি জটিলতার কারণে কোথাও কোথাও বিলম্ব ঘটেছে।
তিক্ত বিবাদ
মার্কোস ও দুতের্তে পরিবারের একসময়ের অপ্রতিরোধ্য জোটের পতন এবং জনপ্রিয় দুতের্তে পরিবারের নাটকীয় পতনের পর এই নির্বাচন নতুন তাৎপর্য পেয়েছে। দুতের্তে পরিবার অভিযোগ করেছে, মার্কোস তার ক্ষমতার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জারদের ধ্বংস করতে একটি অভিযান পরিচালনা করছেন।
২০২২ সালের নির্বাচনে একজোট হয়ে জয়ের মুখ দেখা জোটটিতে এখন তিক্ত বিবাদ দেখা দিয়েছে। ব্যক্তিগত অভিযোগের বন্যা বয়ে যাচ্ছে এবং তহবিলের অপব্যবহার, জ্ঞাতআয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং প্রেসিডেন্ট, ফার্স্ট লেডি ও হাউজ স্পিকারের প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগে সারা দুতের্তেকে অভিশংসনের চেষ্টা করা হচ্ছে।
রয়টার্স লিখেছে, সেনেটের লড়াই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ অভিশংসনের বিচার যদি শুরু হয়, তাহলে সেনেট সদস্যরাই জুরি হবেন । সেখানে সারা দুতের্তেকে পদচ্যুত করা হতে পারে এবং রাজনীতিতে আজীবন নিষিদ্ধ করা হতে পারে। তাকে দোষী সাব্যস্ত করতে অন্তত ১৬টি ভোট (দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা) প্রয়োজন।
ভোট দেওয়ার পর সারা বলেছেন, “অভিশংসনের ফল যাই হোক না কেন, দোষী সাব্যস্ত করা হোক বা খালাস দেওয়া হোক, আমি যে কোনো পরিণতির জন্য প্রস্তুত।”
আগেই উত্তপ্ত হওয়া নির্বাচনি মাঠকে আরও গরম করে দিয়েছে রদ্রিগো দুতের্তেকে গ্রেপ্তারের ঘটনা। গত মার্চে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) অনুরোধে সাবেক প্রেসিডেন্টকে গ্রেপ্তার করে ফিলিপিন্স পুলিশ। ‘মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ অভিযানে হাজার হাজার মানুষ নিহত হওয়ার অভিযোগে তিনি বর্তমানে হেগে রয়েছেন। রদ্রিগো দুতের্তে কারাবন্দি থাকলেও তিনি তার নিজের শহরে মেয়র পদে লড়াই করছেন।
রদ্রিগো ও সারা দুতের্তে উভয়ই নিজেদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলাগুলোকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। সারার অভিশংসন প্রক্রিয়া থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখা মার্কোস দুতের্তে পরিবারের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।
মার্কোস অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার দাবি এনে প্রচার চালিয়েছেন, বিশেষ করে দক্ষিণ চীন সাগরে বেইজিংয়ের আচরণের বিরুদ্ধে তার কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরে। এই নির্বাচনে চীন একটি বড় রাজনৈতিক বিষয় হয়ে উঠেছে।
অন্যদিকে সারা দুতের্তে অভিযোগ করেছেন, মার্কোস একজন সাবেক প্রেসিডেন্টকে বিদেশি আদালতের হাতে তুলে দিয়ে সার্বভৌমত্ব বিক্রি করেছেন।
নির্বাচনি প্রচারে সারা বলেন, “দুতের্তে পরিবার যদি পৃথিবী থেকে মুছে যায়, তাহলে আসলে কারা লাভবান হবে? ফিলিপিনোরা নয়।”