Published : 07 Jun 2025, 06:49 PM
ক্যাম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্তে সাম্প্রতিক সংঘর্ষের পর সেখানে সেনা ও সাজসরঞ্জামের উপস্থিতি বাড়িয়েছে থাইল্যান্ড। ক্যাম্বোডিয়া তাদের সীমান্তে সেনা বাড়ানোর পর থাইল্যান্ড এই পদক্ষেপ নিয়েছে বলে শনিবার জানিয়েছেন থাই প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই।
গত ২৮ মে থাইল্যান্ড ও ক্যাম্বোডিয়ার সীমান্তের অচিহ্নিত একটি এলাকায় সংঘর্ষে এক ক্যাম্বোডীয় সেনা নিহত হওয়ার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। এরপর থেকে কয়েকদিন ধরে দুই দেশই ‘সংলাপের’ ওপর জোর দিলেও কোনও সমস্যার কোনও সুরাহা হয়নি।
থাই প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও উপপ্রধানমন্ত্রী ফুমথাম এক বিবৃতিতে বলেন, “বৃহস্পতিবারের দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় থাইল্যান্ড উত্তেজনা কমাতে কিছু প্রস্তাব দিলেও ক্যাম্বোডিয়া তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
“এর বিপরীতে তারা সীমান্তে সেনা সমাবেশ জোরদার করেছে। এতে সীমান্ত পরিস্থিতি আরও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ফলে এর প্রেক্ষিতে থাই সরকারও সীমান্তে প্রয়োজনীয় বাড়তি পদক্ষেপ নিয়েছে এবং সেনা উপস্থিতি জোরদার করেছে।”
কত পরিমাণ সেনা সমাবেশ করা হয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি ফুমথাম। তবে আলাদা একটি বিবৃতিতে থাই সেনাবাহিনী শনিবার বলেছে, ক্যাম্বোডীয় সেনা ও সাধারণ মানুষ বারবার থাইল্যান্ডের ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করছে।
“এই ধরনের উসকানি ও সেনা সমাবেশ থেকে এটি পরিষ্কার যে, তারা বলপ্রয়োগ করতে চায়,” বলেছে থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনী। তারা জানিয়েছে, থাই সীমান্তের সব চেকপয়েন্টের নিয়ন্ত্রণ নেবে সেনাবাহিনী।
থাইল্যান্ড বর্তমানে ক্যাম্বোডিয়ার সঙ্গে ১৭ টি সীমান্ত ক্রসিং পরিচালনা করে। সরকারি হিসাবমতে, এই ক্রসিংগুলো দুই দেশের সীমান্তের ৮১৭ কিলোমিটার বরাবর ৭ টি প্রদেশজুড়ে অবস্থিত।
থাইল্যান্ডের সব সীমান্ত চেকপয়েন্ট নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ঘোষণার বিষয়ে ক্যাম্বোডিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।
অবশ্য এই উত্তেজনা প্রশমনে উদ্যোগ নিয়েছেন আসিয়ানের বর্তমান চেয়ারম্যান মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম এবং চীনও। তবে তার পরও সীমান্তে সামরিক শক্তি বাড়ানো চলছে।
১৯০৭ সালে ফরাসি ঔপনিবেশিক আমলে প্রথম সীমান্ত চিহ্নিত করার পর থেকেই ৮১৭ কিলোমিটারজুড়ে বেশ কিছু অংশ নিয়ে বিরোধ চলছে থাইল্যান্ড ও ক্যাম্বোডিয়ার মধ্যে।
২০০৮ সালে একটি প্রাচীন হিন্দু মন্দিরকে কেন্দ্র করে দু’দেশের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়, যা চূড়ান্ত রূপ নেয় ২০১১ সালের গোলাগুলিতে।
বর্তমানে দুই দেশের সরকারের মধ্যে সম্পর্ক বরাবরই সৌহার্দ্যপূর্ণ ছিল। থাই নেতা থাকসিন সিনাওয়াত্রা এবং কম্বোডিয়ার হুন সেন ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
এখন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন তাদের সন্তানরা—থাই প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকসিনের মেয়ে, আর কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রীর পদে আছেন, হুন সেনের ছেলে।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে থাইল্যান্ডে জাতীয়তাবাদী মনোভাব জোরালো হয়েছে। শুক্রবার থাই সেনাবাহিনী জানিয়েছে, দেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘিত হলে তারা ‘উচ্চপর্যায়ের সামরিক অভিযান’ চালাতেও প্রস্তুত।
ওদিকে ক্যাম্বোডিয়া বলেছে, তারা সীমান্তের চারটি এলাকা নিয়ে বিরোধ আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে তুলবে এবং এ বিষয়ে তারা থাইল্যান্ডের সহযোগিতা চেয়েছে।
তবে থাই উপপ্রধানমন্ত্রী ফুমথাম শনিবার ফের জানিয়ে দিয়েছেন, থাইল্যান্ড আন্তর্জাতিক আদালতের বিচারব্যবস্থাকে স্বীকৃতি দেয় না। তারা সীমান্ত সংক্রান্ত সব বিরোধ দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার প্রস্তাব দিয়েছে।