Published : 12 May 2025, 02:19 PM
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প কাতারের কাছ থেকে একটি অত্যাধুনিক বোয়িং বিমান উপহার নেওয়ার কথা ভাবছেন, গণমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশের পর ডেমোক্র্যাট দল এবং সুশাসন নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন কাতারের রাজপরিবারের কাছ থেকে একটি বিলাসবহুল বোয়িং ৭৪৭-৮ বিমান উপহার নিয়ে সেটিকে এয়ার ফোর্স ওয়ান হিসেবে ব্যবহার উপযোগী করে তোলার আগ্রহ দেখিয়েছে বলে বিষয়টি সম্বন্ধে অবহিত একটি সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এই মুহূর্তে নতুন একটি বোয়িং ৭৪৭-৮ বিমানের দাম পড়বে প্রায় ৪০ কোটি ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি।
বিমানটি নিলে তা হবে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের নেওয়া অন্যতম দামি উপহার। ট্রাম্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এটি তার প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরিতে দান করা হবে, বলছে ওই সূত্র।
রোববার নিজের সোশ্যাল মিডিয়া সাইট ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্পও কাতারের উপহার প্রস্তাবের কথা জানান।
“মোটাদাগে তথ্যটা হচ্ছে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ৪০ বছর পুরনো এয়ার ফোর্স ওয়ান-এর বদলে অস্থায়ীভাবে ব্যবহার করার জন্য একেবারে বিনামূল্যে, উপহার হিসেবে একটি ৭৪৭ বিমান পাচ্ছে— কিন্তু তা এতটাই অস্বস্তি দিচ্ছে মাথাখারাপ ডেমোক্র্যাটদের যে তারা জোর করে বলছে আমরা যেন ওই বিমানটি বিপুল দামে কিনে নিই!” লিখেছেন তিনি।
ডেমোক্র্যাট এবং সুশাসনের জন্য কাজ করা সংগঠনগুলো বলছে, কাতারের এমন উপহার দেওয়াটা অনৈতিক, সম্ভবত অসাংবিধানিকও।
“এয়ার ফোর্স ওয়ানজাতীয় ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নিয়ে বলার কিছু নেই, যা কাতারের সৌজন্যে আসছে। এটা কেবল ঘুষই নয়, অতিরিক্ত লেগরুমসহ সর্বোচ্চ মাত্রার বিদেশি প্রভাব,” সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় এমনটাই লিখেছেন সেনেটের ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমার।
হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট এক বিবৃতিতে বলেছেন, “বিদেশি সরকারের দেওয়া যে কোনো উপহার সংশ্লিষ্ট সব আইন মেনেই গ্রহণ করা হয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসন পুরো প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর।”
কাতারের এক মুখপাত্র আলি আল-আনসারি নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, ওই বিমান দেওয়ার ব্যাপারটি এখনও বিবেচনাধীন এবং এ নিয়ে এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
ট্রাম্পকে কাতারি রাজপরিবারের বিলাসবহুল বোয়িং উপহার দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে রোববার এবিসি নিউজই প্রথম খবর প্রকাশ করে।
প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর প্রথম মেয়াদেই ট্রাম্প এয়ার ফোর্স ওয়ানের আধুনিকায়নে মনোযোগী হয়েছিলেন। এজন্য তিনি ২০২৪ সালের মধ্যে দুটি ৭৪৭-৮ পেতে বোয়িংয়ের সঙ্গে চুক্তিও করেছিলেন।
উড়োজাহাজ প্রস্তুতকারী এ প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা কয়েকদিন আগে কংগ্রেসকে বলেছেন, বোয়িং ২০২৭ সালের মধ্যে বিমান দুটি প্রস্তুতের প্রস্তাব দিয়েছিল।
ট্রাম্প চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে একবার কাতারি মালিকানাধীন ৭৪৭-৮ বিমানটি ঘুরে দেখেছিলেন, সেসময় বিমানটি তার অবকাশ যাপন কেন্দ্র মার-আ-লগোর কাছে পাম বিচের ফ্লোরিডা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ছিল।
হোয়াইট হাউজ সেসময় বলেছিল, অত্যাধুনিক এয়ার ফোর্স ওয়ান কেমন হতে পারে সে সম্বন্ধে আরও ভালো ধারণা নিতে কাতারি মালিকানাধীন বিমানটি ঘুরে দেখেছিলেন প্রেসিডেন্ট।
সুশাসন নিয়ে কাজ করা ওয়াশিংটনভিত্তিক সংগঠন সিটিজেনস ফর রেসপনসিবিলিটি অ্যান্ড এথিকসের মুখপাত্র জর্ডান লিবোউইৎজ যুক্তরাষ্ট্রের এই বিমানটি পাওয়া কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া কোনো মার্কিন কর্মকর্তার বিদেশি সরকারের কাছ থেকে উপহার নেওয়ার সাংবিধানিক নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
“দেখে তো মনে হচ্ছে, যেই দেশের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক সম্পর্ক আছে, সেই দেশই রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকের ঠিক আগে তাকে ৪০ কোটি ডলারের একটি উপহার দিচ্ছে,” বলেছেন তিনি।
চলতি সপ্তাহে মধ্যপ্রাচ্য সফরেই কাতারে যাওয়ার কথা রয়েছে ট্রাম্পের। যদিও দেশটিতে থাকা অবস্থায় তাকে ওই বিমান উপহার দেওয়ার কথা নয়।
একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে এবিসি জানিয়েছে, হোয়াইট হাউজ কাউন্সেলের কার্যালয় এবং আইন মন্ত্রণালয় এই বিমান উপহার নিয়ে একটি মূল্যায়ন দাঁড় করিয়েছে, যাতে বলা হয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমন উপহার গ্রহণ ও পরে তা ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরিকে হস্তান্তর আইনসঙ্গত ও সংবিধানসম্মতই হবে।