Published : 18 May 2025, 11:42 PM
চাকরিতে পুনর্বহালসহ তিন দফা দাবিতে দিনভর অবস্থানের পর ‘আশ্বাসের ভিত্তিতে’ আন্দোলনরত চাকরিচ্যুত সেনাসদস্যরা কর্মসূচি স্থগিত করেছেন।
রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নেওয়া এসব চাকরিচ্যুত সৈনিকদের সঙ্গে সন্ধ্যায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়।
বৈঠকে 'আশ্বাস' পেয়ে তারা কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনরতদের একজন মোস্তাফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, চাকরিতে পুনর্বহাল, যাদের ফিরিয়ে দেওয়া যাবে না তাদের সকল সুযোগ সুবিধা দেওয়া, বর্তমান সেনা আইন পরিবর্তন করাসহ গ্রেপ্তারদের মুক্তির দাবিতে তারা আন্দোলন করে আসছেন।
এদিন সকাল থেকে ‘সহযোদ্ধা প্লাটফর্ম’ এর ব্যানারে চাকরিচ্যুত সেনাসদস্যদের একটি দল এবং অনেকের পরিবারের সদস্যরা রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নেন। তারা সেখানে দাবি আদায়ে বিক্ষোভ সমাবেশও করেন।
নাশকতা, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে বরখাস্ত সৈনিক গ্রেপ্তার
এসময় সেখানে বেশ কিছু সেনাসদস্যদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা যায়।
অবস্থান কর্মসূচি চলার মধ্যে দুপুরের পর সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন।
আন্দোলনকারীদের আরেকজন চাকরিচ্যুত সৈনিক সাহেদুজ্জামান সাহেদ বলেন, "সিনিয়র স্যারের এসেছিলেন তারা আমাদের দাবি শুনেছেন। এসব দাবি নিয়ে তারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন। আমরা আশ্বস্ত হয়েছি।"
দুই দফা আলোচনা সন্ধ্যার পর শেষ হওয়ার তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, এরপর অবস্থান কর্মসূচি যে যার মত চলে যান। আগামী রোববার তাদের সিদ্ধান্ত জানা যাবে। এ পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত থাকবে। সিদ্ধান্ত জানার পর পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে নিজেদের মধ্যে আলোচনা হবে।
ঢাকা সেনানিবাসের আশপাশের সড়কে সভাসমাবেশে নিষেধাজ্ঞা
সাবেক সেনা সদস্যদের 'ধৈর্য ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার' পরামর্শ আইএসপিআরের
রাতে পুলিশের রমনা বিভাগের উপ কমিশনার মাসুদ আলম বলেন, চাকরিচ্যুত সৈনিকদের দাবি দাওয়া নিয়ে ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের আলোচনা শেষে সন্ধ্যার পর যে যার মত চলে গেছেন। কোনো সমস্যা হয়নি।
উসকানি পরিহার করে দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান
এ কর্মসূচির বিষয়ে রাতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর-আইএসপিআর বলেছে, আন্দোলনকারীদের কর্মসূচির বিষয়টি শান্তিপূর্ণ সমাধানে সেনাবাহিনীর একটি প্রতিনিধি দল প্রেস ক্লাবে গিয়ে তাদের বক্তব্য শোনেন। প্রতিনিধি দল সেনাবাহিনীর প্রচলিত বিধিবিধান অনুসারে দাবি দাওয়া যাচাই ও সমাধানে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। একইসঙ্গে অভিযোগগুলো কোনো তৃতীয় পক্ষ বা প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে না পাঠিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সরাসরি উপস্থাপনের পরামর্শ দেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আইএসপিআর বলেছে, “এর আগে গত ১৪ মে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়- এ ধরনের মোট ৮০২টি আবেদন গৃহীত হয়েছে, যার মধ্যে ১০৬টি আবেদন নিষ্পত্তি হয়েছে এবং বাকি আবেদনসমূহ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে যা সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও মানবিকতার সঙ্গে বিবেচনা করছে।
”তবে দুঃখজনক যে, আজকের কিছু অনভিপ্রেত আচরণ এই সুশৃঙ্খল বাহিনীর ঐতিহ্য ও মূল্যবোধকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। পরপর দুবার সফল বৈঠক শেষে, প্রতিনিধি দল ফেরত যাবার সময় কতিপয় উশৃঙ্খল বরখাস্ত সেনা সদস্যদের উস্কানিতে উক্ত প্রতিনিধি দলের গাড়ির সম্মুখে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ এবং অশ্রাব্য ভাষায় স্লোগান দেওয়া হয়। সমগ্র দিন জুড়ে সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ ধৈর্য ও সহমর্মিতার সাথে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালালেও এক পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিছু সংখ্যক বিশৃঙ্খল সাবেক সদস্যকে ছত্রভঙ্গ করতে বাধ্য হয়। ”
আইএসপিআর বলেছে, “যেকোনো ধরনের উসকানিমূলক কার্যকলাপ, জনস্বার্থবিরোধী আচরণ কিংবা বাহিনীর সুনাম ক্ষুণ্ণ করতে পারে- এমন কর্মকাণ্ড কখনোই কাম্য নয়। সব ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী অত্যন্ত ধৈর্য, সহমর্মিতা এবং সংবেদনশীলতার সাথে বিষয়টি বিবেচনা করছে। সাংবিধানিক কাঠামো ও শৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে দায়িত্বশীল আচরণ করার জন্য সেনাবাহিনী পুনরায় সবার প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছে।”