Published : 15 Jul 2024, 07:09 PM
কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিএনপি ও জামায়াত ঢুকেছে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেছেন, “বিএনপি-জামায়াতসহ যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায় তারা ঢুকেছে। তাদের ঢুকিয়ে দেওয়া কিছু মানুষ সেখানে নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমরা যেটি বলেছিলাম, সেটি তারা কালকে স্পষ্ট করেছে।
“আসলে কালকের স্লোগান এবং কালকের যে সমস্ত ঔদ্ধত্যপূর্ণ স্লোগান এবং বক্তব্য, এতে প্রমাণিত হয় এটি কোটাবিরোধী আন্দোলন নয়। এটি রাষ্ট্রবিরোধী, সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।”
সোমবার দুপুরে ঢাকায় সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ইসা বিন ইউসুফ আদ-দুহাইলানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
২০১৮ সালে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র হাই কোর্ট অবৈধ ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা দুই সপ্তাহ ধরে টানা আন্দোলন চালিয়ে আসছে। এর মধ্যে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দেন, সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়টি আদালতেই ফয়সালা করতে হবে।
বক্তব্যের একপর্যায়ে সরকারপ্রধান বলেন, “কোটা আন্দোলন করার আগে তো তাদের রেজাল্টগুলো দেখা উচিত ছিল যে- কোথায় তারা দাঁড়িয়েছে! দ্বিতীয়টি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তাদের এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি পুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি পুতিরা পাবে?
“মুক্তিযোদ্ধাদের অপরাধটা কী? নিজের জীবন বাজি রেখে, নিজের পরিবার সংসার সব বাদ দিয়ে যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল, খেয়ে না খেয়ে, কাদা মাটিতে রোদ বৃষ্টি ঝড় সব উপেক্ষা করে যুদ্ধ করে এই দেশ স্বাধীন করেছে। মুক্তিযোদ্ধারা বিজয় এনে দিয়েছিল বলেই সবাই উচ্চপদে আসীন, আজকে বড় গলায় কথা বলতে পারছে। নইলে পাকিস্তানিদের বুটের লাথি খেয়ে মরতে হত।”
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রোববার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ দেখান। বিক্ষোভ-মিছিলের সময় ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার-রাজাকার’, ‘চাইতে এলাম অধিকার হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘তুমি নও আমি নই, রাজাকার রাজাকার’ প্রভৃতি স্লোগান দেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীদের স্লোগানের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ সংগঠনগুলো। সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটাবিরোধীদের পিটিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয় ছাত্রলীগ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “গতকাল রাতে যে ধরনের স্লোগান দেওয়া হয়েছে, রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। সেই দেশে রাজাকারের পক্ষে স্লোগান দেওয়া, এটি রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান। এটি সরকার বিরোধী নয়, এটি রাষ্ট্র বিরোধী স্লোগান। একইসাথে সেখানে সরকারবিরোধী, প্রধানমন্ত্রীবিরোধী স্লোগান দেওয়া হয়েছে। এতে স্পষ্ট, আমরা যে বলেছিলাম আগে, যে কোটা আন্দোলনের মধ্যে রাজনৈতিক অপশক্তি ঢুকেছে।”
কোটার বিষয়টি আদালতে মীমাংসা হবে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “সরকার স্পষ্ট করে বলেছে আদালতে বিচারাধীন কোনো বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত দিতে পারে না। এবং আদালতে এটি নিষ্পত্তি হওয়ার পর আদালত যেভাবে নিষ্পত্তি করবে সরকারকে সেভাবে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করতে হবে, এটি স্পষ্ট।”
সরকার দেশকে কখনো অস্থিতিশীল করতে দেবে না বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমাদের সরকার অনেক শক্তিশালী সরকার। আমরা কোনো রাজনৈতিক অপশক্তিকে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ‘সেন্টিমেন্ট’ নিয়ে খেলা করে দেশকে অস্থিতিশীল করতে দেব না।”