Published : 12 Mar 2024, 05:26 PM
প্রতিবছর রোজার সময় জমে উঠে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ইফতারের রাজ্য চকবাজার। বাহারি সব ইফতার উপাদানে সাজানো থাকে পুরান ঢাকার এই এলাকার প্রতিটি খাবারের দোকান।
বরাবরের মতো এবারও রোজার প্রথমদিন দুপুর থেকেই ইফতারের পসরা নিয়ে বসেন দোকানিরা। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রভাব পড়েছে এবার এখানকার মুখরোচক সব খাবারে, ফলে অনেকেই পকেটের ‘স্বাস্থ্যের’ কথা ভেবে রসনায় লাগাম পরাতে বাধ্য হচ্ছেন।
গতবছরের তুলনায় এবছর চকবাজারে ইফতার সামগ্রীর দাম বেশি বলছেন ক্রেতারা; বিক্রেতারাও তা অস্বীকার করেননি।
দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা কাঁচামালের চড়া দামকে দায়ী করছেন। তারা বলছেন, গত বছর যে দামে তারা ইফতারের মালামাল কিনেছেন তার তুলনায় এবছর গুণতে হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেশি টাকা।
প্রথম রোজার দিন মঙ্গলবার দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চকবাজারের কয়েকটি ইফতারের দোকান ঘুরে জানা গেল, চড়া দামের কথা।
বাহারি সব ইফতার হাতের নাগালে থাকলেও পকেটের নাগালে নাই বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন চকবাজারের ফল দোকানী সাজ্জাদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “সারাদিন ফল বিক্রি করে লাভ করি সাত-আটশ টাকা। বাড়িতে বউ-বাচ্চার জন্য টাকা পাঠামু নাকি নিজে এসব খাবার দিয়ে ইফতার করমু? এগুলা আসলে আমাদের জন্য না, এসব আয়োজন বড়লোকদের জন্য। আমরা গরীবরা তো মুড়ি, পেঁয়াজু, শরবত এসব দিয়ে ইফতার করি।”
চকবাজারের বেশ কয়েকটি ইফতার দোকান ঘুরে দেখা যায়, গতবছরের তুলনায় মাংসের পদগুলোয় দাম বেড়েছে প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ।
বিক্রেতারা বলছেন, পাকিস্তানি মুরগির আস্ত রোস্ট আকার ভেদে প্রতিটি ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এবার। গতবছর যার দাম ছিল ২০০ থেকে ৩০০ টাকা।
কোয়েল পাখির আস্ত রোস্ট বিক্রি করছেন ১০০ থেকে ১২০ টাকা, যা গতবছর ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা। এবার খাসির মাংসের একেকটি টুকরো ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা হয়েছে।
বিভিন্ন রকমের মাংসের তৈরি ইফতারের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ইমরান তালুকদার।
তিনি বলেন, “বাজারে তেল, পেঁয়াজ, মসলা, মাংস ছাড়াও অন্যান্য জিনিসপত্রের যে দাম, সে তুলনায় আমরা খুবই কম দাম রাখছি। প্রতিবছরের সাথে সমন্বয় করেই এবছর প্রতিটা পদের দাম রেখেছি। আসলে এর চেয়ে কম দাম রাখলে আমাদের ক্ষতি হবে।”
পেঁয়াজু, চপ বা বেগুনি প্রতিটির দাম ৫ টাকা করে হলেও ছোট হয়েছে আকার।
পূর্বের দামে কীভাবে বিক্রি করছেন জানতে চাইলে দোকানী আবুল হাশিম বলেন, “গত বছরের চেয়ে এবার জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পেলেও আমরা নিম্ন মধ্যবিত্ত রোজাদারদের কথা মাথায় রেখে আগের দামেই বিক্রি করছি। ডিম চপ ৪০ টাকা রাখলেও বাকি আইটেমগুলো ৫ টাকা করেই রাখছি।”
চকবাজারের ইফতার অন্য খাবারগুলোর মধ্যে জালি কাবাব ৩০ টাকা, টানা পরোটা ৫০ টাকা, কিমা পরোটা ৭০ টাকা, কাঠি কাবাব ৪০ (একটি) টাকা, ডিম চপ ৫০ টাকা, দইবড়া ১০০ টাকা (৩টি), ফালুদা কেজি ২২০ টাকা, পেস্তা বাদাম শরবত ২৫০ টাকা লিটার, মুরগির ললিপপ ৪০ টাকা, চিকেন ফিংগার ৪০ টাকা, চিকেন স্যান্ডুইচ ৫০ টাকা, চিকেন স্প্রিং রোল ৪০ টাকা, ভেজিটেবল রোল ৩০ টাকা, চিকেন রোল প্যাটিস ৪০ টাকা, চিকেন প্যাটিস ৫০ টাকা, চিকেন শর্মা ৭০ টাকা, চিকেন ললিপপ ৪০ টাকা, চিকেন রেশমী কাবাব ৫০ টাকা, মিনি পিজ্জা ৭০ টাকা, চিকেন টিক্কা ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া প্রতিটি মুরগির রুটি ৬০ টাকা, গরুর রুটি ৮০ টাকা এবং খাসির রুটি ১০০ টাকায় বিকোচ্ছে।
ইসলামপুরের স্থায়ী বাসিন্দা রহমান তালুকদার ইফতার কিনতে প্রতিবছরের মতো এবারও এসেছেন চকবাজারে। ইফতারের মূল উপাদানের পাশাপাশি তিনি নিয়েছেন মাংসের কয়েকটি আইটেম, দই বড়া আর ফিরনি।
তিনি বলেন, “এবার ইফতার আইটেমগুলোর দাম অন্যান্য বছরের তুলনায় একটু বেশি মনে হয়েছে। তাই বেশিকিছু কিনি নাই। বাসায় স্ত্রী আর মেয়ে মিলে ইফতার তৈরি করেছে। তারপরও এখান থেকে কিছু না কিনলে কমতি থেকে যাচ্ছে বলে মনে হয়। তাই আমাদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এসেছি।”