Published : 05 Sep 2024, 12:27 AM
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তার শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নিয়েছেন ঢাকায় ব্রিটিশ হাই কমিশনার সারাহ ক্যাথেরিন কুক।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টায় ব্রিটিশ হাই কমিশনারের গাড়ি গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসা ‘ফিরোজায়’ প্রবেশ করে। খালেদা জিয়াকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান সারাহ কুক।
২০১৮ সালে কারাবরণ ও হাসপাতালে চিকিৎসার পর প্রথমবারের মত ব্রিটিশ হাই কমিশনার খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন।
হাই কমিশনারকে অভ্যর্থনা জানান খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় নিয়োজিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার ও সদস্য অধ্যাপক এএফএম সিদ্দিকী এবং ‘স্পেশাল অ্যাসিসট্যান্ট টু দ্য চেয়ারপারসনস ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজরি কমিটির’ সদস্য তাবিথ আউয়াল।
অভ্যর্থনা পর্বের পর প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ করেন খালেদা জিয়া ও সারাহ কুক। তাদের আলাপের বিষয়ে পরে ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
খসরু বলেন, “ম্যাডামের স্বাস্থ্য নিয়ে কূটনৈতিক মহলে শঙ্কা ছিল, চিন্তা ছিল। উনার সুস্থতা নিয়ে সকলের একটা প্রশ্ন ছিল…। তাদের প্রথম জানার বিষয় ছিল ম্যাডামের শরীর কেমন, ভালো আছেন কি না। উনার চিকিৎসার জন্য বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি আছে কি না…এসব বিষয় আলোচনা করেছেন।
“দ্বিতীয় কথা হয়েছে এই পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ কোথায় যাচ্ছে, নতুন প্রেক্ষাপটে আমরা কোথায় যাচ্ছি, বাংলাদেশ কোথায় যাচ্ছে, এ বিষয় নিয়ে ম্যাডামের সঙ্গে কথা বলেছেন।”
বিএনপি চেয়ারপারসন ও ব্রিটিশ হাই কমিশনারের আলাপে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়েও কথা হয়েছে বলে তুলে ধরেন খসরু।
“ইউকের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সম্পর্ক, তাদের যে ভাবনা, সেটা ম্যাডামকে তারা বলেছেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ব্রিটেন কী করতে চায়, দুই দেশের সস্পর্ক উন্নয়নে তারা কী করতে চায়, সেগুলো ম্যাডামকে অবগত করেছেন। ম্যাডামে যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করার কথা বলেছেন।”
খালেদাকে বিদেশে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে
৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, আর্থ্রাইটিস, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন।
সবশেষ এক মাসের বেশি সময় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ২১ অগাস্ট বাসায় ফেরেন দুর্নীতির দুই মামলার দণ্ড থেকে মুক্তি পাওয়া বিএনপি চেয়ারপারসন।
চিকিৎসার জন্য তাকে এখন বিদেশে নেওয়ার প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন। ব্রিটিশ হাই কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাতের পর এ ব্যাপারে কথা বলেন তিনি।
বাসায় ফিরলেন মুক্ত খালেদা জিয়া
ডা. জাহিদ বলেন, “ম্যাডামকে বিদেশে নিতে তার যে দীর্ঘ সময়ের জার্নি, সে বিষয়ে তার প্রস্তুতির বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। মেডিকেল বোর্ড বলেছে, ইউকতে নেওয়া হলে আট থেকে ১৩ ঘণ্টা সময় লাগে অথবা ইউএসএ নিতে হলে ১৮ থেকে ২১ ঘণ্টা ফ্লাইং আওয়ার লাগবে। কাজেই এই যাত্রার জন্য শারীরিক সুস্থতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
“ইউকে ও ইউএসএ’র হসপিটালের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। মেডিকেল বোর্ডের যোগাযোগ আগে থেকে হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব উনার শারীরিক সুস্থতা ভ্রমণের মত হলেই বিদেশে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি দেখা হবে।”
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দি হন। দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দি ছিলেন তিনি।
২০২০ সালের ২৫ মার্চ আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছিল খালেদাকে। তখন থেকে ছয় মাস পরপর তার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছিল।
গণ আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৭ অগাস্ট রাষ্ট্রপতির আদেশে দণ্ড থেকে মুক্তি পান খালেদা জিয়া।