Published : 21 Sep 2024, 08:45 PM
যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘের এবারের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বাংলাদেশের অন্তবর্র্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া ৭৯তম এ অধিবেশনের সাইডলাইনে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের অন্তবর্র্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রথমবারের মত বৈঠকের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে।
তবে অধিবেশন শুরুর তিন দিন আগে শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা নিউ ইয়র্কে পৌঁছানোর পূর্বেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নিউ ইয়র্ক ত্যাগ করবেন বলে জানা গেছে। কাজেই সেখানে তাদের দেখা হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেই মনে হচ্ছে।”
“তবে পাকিস্তান, নেদারল্যান্ডস, নেপালের প্রধানমন্ত্রী, ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, জাতিসংঘ মহাসচিব, জাতিসংঘ মানবাধিকার সম্পর্কিত হাই কমিশনার, বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপের প্রেসিডেন্ট, ইউএসএইডের প্রশাসকের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেবেন মুহাম্মদ ইউনূস।”
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “এ রকম অধিবেশনে অনেক বৈঠকের সিদ্ধান্ত শেষ মুহূর্তেও হয়ে যায়। সে বিবেচনায় নতুন বৈঠক তালিকায় যোগ হতে পারে; আবার সময়ের অভাবে কোনো বৈঠক বাদও যেতে পারে।”
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলছে, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে অংশ নিতে প্রধান উপদেষ্টা ২৩ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে পৌঁছাবেন। ২৭ সেপ্টেম্বর তিনি জাতিসংঘে বক্তব্য দেবেন।
এ অধিবেশনে গত জুলাই-অগাস্টে বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানের কথা তুলে ধরবেন প্রধান উপদেষ্টা।
তৌহিদ হোসেন বলেন, “২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্ক পর্বে প্রধান উপদেষ্টা বক্তব্য দেবেন। তার বক্তব্যে বিগত দুই মাসে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া অভাবনীয় গণ অভ্যুত্থানের বিবরণ ও আগামী দিনে জনভিত্তিক, কল্যাণমুখী ও জনস্বার্থে নিবেদিত একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় বিশ্ব দরবারে তুলে ধরবেন।
“পাশাপাশি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের বলিষ্ঠ অবস্থান, জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব, জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, বিশ্বব্যাপী সংঘাত, রোহিঙ্গা সংকট, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিকূলতা, উন্নয়নশীল দেশসমূহ হতে সম্পদ পাচার প্রতিরোধ, নিরাপদ অভিবাসন, অভিবাসীদের মৌলিক পরিষেবা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা এবং ফিলিস্তিন সম্পর্কিত বিষয়সমূহ প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে উঠে আসতে পারে।”
এ বছরের জাতিসংঘ অধিবেশন বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ জানিয়ে তিনি বলেন, “এ বছরই জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে। এ উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বাংলাদেশ একটি উচ্চ-পর্যায়ের রিসেপশন আয়োজন করছে। এ রিসেপশনে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদলের প্রধানগণের পাশাপাশি জাতিসংঘের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা, কিছু সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানগণ, বিভিন্ন সংস্থা প্রধানরা অংশগ্রহণ করবেন বলে আমরা আশা করছি।”
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের সাইড ইভেন্টও আয়োজন করা হচ্ছে বলে জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কার কাজ শুরু করেছে। এ প্রেক্ষাপটে এবারের অধিবেশন নতুন বাংলাদেশের জন্য জাতিসংঘে বা বিশ্ব সভায় নতুন পদচারণা। এবারের অধিবেশনে আমাদের কাছে একটি বিরাট সুযোগ বিশ্ব দরবারে এই বৈষম্যহীন, ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশকে উপস্থাপনের জন্য।”
জাতিসংঘ অধিবেশন ঘিরে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এর আগে বড় আকারের প্রতিনিধি দল গেলেও এবার পরিসর ছোট করা হয়েছে, বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “এবার বাংলাদেশ থেকে শতাধিক সদস্যের প্রতিনিধিদল চার্টার্ড বিমানে নিউ ইয়র্ক সফর করবেন না। বরং যার যেই সংশ্লিষ্টতা বা দায়িত্ব, সে অনুযায়ী যতটা সম্ভব সীমিত আকারে প্রতিনিধিদল গঠন করা হয়েছে।
“এবারের অধিবেশনে নিরাপত্তা, প্রেসসহ সবমিলিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী ৫৭ জন। অন্যদিকে কোভিড পরবর্তী ব্যয় সংকোচন পরিস্থিতির মধ্যে ৭৮তম অধিবেশনে ১৪৬ জন, কোভিড সীমাবদ্ধতার মধ্যে ৭৭তম অধিবেশনে ১৩৮জন এবং কোভিডের আগে ৭৪তম অধিবেশনে ৩৩৫ জন এবং ৭৩তম অধিবেশনে ৩৪৪ জন অংশগ্রহণ করেছিল।”
প্রধান উপদেষ্টা তিন দিন নিউ ইয়র্কে অবস্থান করে ২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হবেন বলে জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
আরও পড়ুন
জোর করে দেখা করার কিছু নাই: ইউনূস-মোদী বৈঠক নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা