Published : 15 Dec 2024, 07:04 PM
প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ সরকারকে হটিয়ে সিরিয়ায় সশস্ত্র বিদ্রোহীদের ক্ষমতা দখলের পর দেশটিতে ইসরায়েলের ‘অবৈধ আগ্রাসনের’ নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ।
রোববার সংলাপের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধান করতে সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারসহ সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে দেশটির পুনর্গঠনে সহযোগিতার ক্ষেত্রে ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বকে প্রাধান্য দিতে অনুরোধ করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, “বাংলাদেশ সিরিয়ার ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি মৌলিক অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করছে। সেদিক বিবেচনায় নিয়ে, গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের এই সময়ে ইসরায়েলের অবৈধ আগ্রাসনকে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নিন্দা জানাচ্ছে বাংলাদেশ।”
সিরিয়ার বিদ্রোহী যোদ্ধারা রাজধানী দামেস্ক দখল এবং সপ্তাহান্তে বাশার আল-আসাদ সরকারকে উৎখাত করার পর ইসরায়েল দেশটিতে বিমান হামলা শুরু করে। ১৯৭১ সাল থেকে তিনি ও তার বাবা সিরিয়ার ক্ষমতায় ছিলেন।
ইসলামপন্থি বিরোধী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) এর নেতৃত্বাধীন বাহিনী রোববার ভোরে দামেস্কে প্রবেশ করে। এর পরই দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেলে, “সিরিয়া মুক্ত” বলে ঘোষণা করা হয়।
বাশার আল-আসাদের পতনের পর প্রথম তিন দিনেই রাজধানী দামেস্কসহ বিভিন্ন স্থানে তিন শতাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এসব হামলায় সিরিয়ার বিভিন্ন স্থাপনা শুধু ক্ষতিগ্রস্তই হয়নি, পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) জানিয়েছে, গত রোববার আসাদ সরকারের পতনের পর থেকে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) ৩১০টিরও বেশি হামলার ঘটনা নথিভুক্ত করেছে তারা।
বিবিসি লিখেছে, অস্ত্রের গুদাম, গোলাবারুদের গুদাম, বিমানবন্দর, নৌঘাঁটি ও গবেষণা কেন্দ্রসহ সিরিয়ার সেনাবাহিনীর সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েল বলছে, আসাদ সরকারের পতনের পর অস্ত্র যাতে 'চরমপন্থিদের হাতে' চলে না যায়, সেজন্যই এ পদক্ষেপ নিয়েছে তারা।
ইসরায়েলের এমন আক্রমণের প্রেক্ষাপটে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, “সিরিয়ার সাম্প্রতিক পরিবর্তনশীল অবস্থা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ সরকার। সংকটপূর্ণ এই সময়ে সিরিয়ার জনগণ ও তাদের সিদ্ধান্তের প্রতি বাংলাদেশ অবিচল সমর্থন ব্যক্ত করছে এবং ওই দেশের শান্তি বজায় রাখার জন্য সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।
আসাদের পতনের পর সিরিয়ায় ৩ শতাধিক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল
“সংযম পালন, সিরীয়দের আকাঙ্ক্ষার প্রতি সম্মান এবং সংলাপের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধান করার জন্যও সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারসহ সবপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে বাংলাদেশ।”
বিবৃতিতে বলা হয়, “বাংলাদেশ বিশ্বাস করে, অন্তর্ভূক্তিমূলক, গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকারের প্রতি সম্মানের মূলনীতিতে দেশ পুনর্গঠনের গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ এই পরিবর্তনশীল অবস্থা সিরীয় জনগণকে করে দিয়েছে।”
দেশটিতে বেসামরিক জীবন রক্ষা, মানবিকতার মূলনীতি বজায় রাখা এবং জাতিসংঘের প্রস্তাবের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে অন্তর্ভূক্তিমূলক রাজনৈতিক সমাধান খুঁজতে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।
বিবৃতিতে বাংলাদেশ সরকার বলছে, “বাইরে থেকে যে কোনো উদ্যোগের ক্ষেত্রে সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি সম্মান জানানো অত্যাবশ্যক।”
সিরীয়দের আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে দেশ গঠনে সবপক্ষকে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, “ওই অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী শান্তির জন্য অন্তর্ভূক্তিমূলক গণতন্ত্র ও টেকসই শান্তির পথ নিশ্চিত করা আবশ্যক।”